নাপিত তার পঞ্চম ভাইয়া অল-আসার-এর কিস্সা শেষ করে
এবার বল্ল——জাঁহাপনা, আমার পাঁচ ভাইয়ার কিস্সা তো
শুনলেন। এবার আমার ষষ্ঠ ভাইয়া শাব্বাশিক-এর কিস্সা আপনার
দরবারে সংক্ষেপে পেশ করছি—আমার ষষ্ঠ ভাইয়া সবার কাছে
শাব্বাশিক ব’লে পরিচিত ছিল। সে কথা বলার সময় মনে হত বুঝি
কোন ভাঙা কাঁসর বাজছে। সে ছিল খুবই গরীব। অন্যের কাছে হাত
পেতে সে দিন গুজরান করত। আমাদের আব্বাজী বেহেস্তে
যাওয়ার সময় যে অর্থকড়ি রেখে গিয়েছিলেন, তা ভাগ বাটোরা
করে আমরা প্রত্যেক ভাইয়া মাথাপিছু একশ' দিরহাম করে লাভ
→ করি। তা-ও তার নসীবে টিকল না। একদল দুর্বৃত্ত তা ছিনিয়ে নিয়ে সত্যি কথা বলতে কি আমার এ-ভাইয়াটি ছিল একেবারেই
ন্যালাক্ষ্যাপা। তাই সবাই তাকে নিয়ে রঙ্গ-তামাশা করে মজা লুঠত,
তাই অনেক আমীর-ওমরাহরা ডেকে নিয়ে তার তামাশা দেখত,
বিনিময়ে তাকে খানাপিনা করাত।
এক রূপুরের দিকে শাক্কাশিক এক আমীয়ের বাড়ির দরজায়
হাজির হ'ল। উদ্দেশ্য একটু-আধটু রঙ্গ-তামাশা দেখিয়ে পেটপুরে
খানাপিনার ব্যবস্থা করে নেয়।
সে প্রহরীকে সন্তুষ্ট করে গুটিগুটি বাড়ির ভেতরে ঢুকে
যায়। বাড়ির মাসিক বরমী সাহেব। এক সময় খলিফার
বংশানুক্রমে উদ্ভিরের চাকুরি করভ। সদর দরজা পেরিয়েই
সামনে শ্বেত পাথরের সিঁড়ি দেখতে পেল। কর্মীর ঠুকে
সিঁড়ি বেয়ে উপরে উল্টে দেয়। সামলেই হিরটি একটি ঘর
পেয়ে সেল্কা ভেতরে ঢুকে গেগ ধপ্নের কেন্দ্রস্থলে হারাম
কেদারায় শরীর এলিয়ে দিয়ে এক অতি বৃদ্ধ তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় বসে।
তার পায়ের শব্দে বৃদ্ধের তন্দ্রা টুটে গেল। জিজ্ঞেস করলেন—'কে
তুমি বলছ!? কি চাও?'
– সারাদিন পেটে দানাপানি পড়ে নি।
— এ কী কথা শেনালে বাদা! আমি তো জানতাম, বাংাদ
নগরীতে কেউই ভূল থাকে না। তোমার কথার আড' আমার ধারণ!
পাল্টে গেল · ভূমি ক্ষুধার যন্ত্রণা ভোগ করছ আর আমি কিন' সাত
বাঞ্জন দিয়ে খানাপিন সেরে আসামে দিন গুজরান করছি! কী অন্যায়
কথা হলো দেখি!'
বৃদ্ধ এবার হস্তক্ষেং— 'বাছা, হাত-মুখ ধুয়ে নাও। আজ আমরা
একসঙ্গে খানাপিনা সারব!' একর নহরকে ডেকে বলতেন
—টেবিলে দুজনের থন: সাজিয়ে দাও।'
আমার ভাইয়া শাশিক বৃদ্ধের শাপশি হতে বাদশাহ খান।
দিয়ে ভোজ সারস। কিন্তু বৃদ্ধ কিছুই মুখে দিলেন না : থালা-বাটি
হাত দিয়ে স্পর্শ করে হাতটি মুখের কাছে নিলেন। অভিনয় করার
ছঙ্গিতে শুধু মুখ চিবোতে লাগলেন। আার থেকে থেকে
হয়গেল বহৎ আচ্ছা খান! বল হাছে!'
শাল্বাশিক বৃদ্ধের ব্যাপার স্যাপার কিছুই ঠাহর করতে পারল না।
| আড়চাখে বিস্ময় মাঝানো দৃষ্টিতে তাকাতে লাগল। সে কিন্তু খালা
চেটেপুটে খেল।
বৃদ্ধ হাস্তবিকই, নিলদরিয়া। শাঝাণিককে নিজের কাছে রেখে
দিনে। তাঁর ওখানেই থাকা-খাওয়া উভয় ব্যবস্থাই হয়ে গেল।
| তারপর আরও বিশ আসে বৃদ্ধ জিন্দা ছিলেন। পুরো বিশ'টি সাল সে
| নিশ্চিন্তে বৃদ্ধের ঘাড়ে বসে হাত-পা গুটিয়ে জীবন ধারণ করল।
বৃদ্ধটি কবরে গেলে তাঁর যাবতীয় স্থানর-অস্থাবর সম্পত্তি
কোতোয়াল গ্রাস করল। ব্যস্, আমার ভাইয়া শাব্বাশিক এর নদীব
পুড়ল। কোতোয়াল তাকে অর্ধচন্দ্র দিয়ে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিল।
উপায়ান্তর না দেখে। স মক্কার পথে পা বাড়াল। পথে মরু-ভাকাতর৷
| তার সব কিছু ছিনতাই করে নিল। সে এক বন্ধ সম্বল হয়ে পড়ল।
| উপরস্থ তাকে ক্রীতদাস করে তারা নিয়ে গেল। ডাগত সর্দারের
च
1
5
1
1
5
1
5
বাড়ি ক্রীতদাস রূপে তার দিন কাটতে লাগল। সেখানে অমানুষিক
অত্যাচার সইতে হয়।
——'সে কী হে ! এমন জোয়ান মরদ, পছন্দ করনা! তুমি কি ইয়ে,
মানে খোজা নাকি? তোমার কি ইয়ে টিয়ে নেই?'
রোজই এভাবে চলতে থাকে। ডাকাত সর্দার বেরিয়ে যাওয়া
মাত্র তার খুবসুরৎ জোয়ান বিবি শাব্বাশিক-এর কাছে আসে।
পোশাক খুলে উলঙ্গ হয়। গা-ঘেঁষে বসে। তার মধ্যে কামতৃষ্ণা
জাগিয়ে তোলার জন্য বহুভাবে চেষ্টা করে। কিন্তু আমার ভাইয়া যে
1 অন্য জগতের মানুষ। কিছুতেই তার মধ্যে কামপ্রবৃত্তি ও উত্তেজনা
জাগিয়ে তুলতে পারেনি ডাকাতের সে-যুবতী বিবি! যখন কিছুতেই
কিছু হয় না তখন প্রলোভন দেখায়—'শোন, আমার কথা রাখলে,
আমার কামতৃষ্ণা নিবৃত্ত করলে আমি তোমাকে এখান থেকে
পালাবার ফন্দি ফিকির করে দেব। এবার বুঝে দেখ, কি করবে।'
ডাকাত সর্দারের বিবি ছিল খুবসুরৎ। বয়সও খুবই কম। দেহে
তার উত্তাল-উদ্দাম রূপের জোয়ার। বেহেস্তের হুরীর মত দেখতে।
দেহের যৌবনচিহ্নগুলো যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চায়।
সর্দার ডাকাতি করতে বেরোলেই তার কচি কাঁচা বিবিটি আমার
ভাইয়ার কাছে চলে আসত। নানা ছলাকলার মাধ্যমে তার
যৌবনজ্বালার কথা বুঝাতে চেষ্টা করত। আচমকা গা থেকে
কামিত্রুটি খুলে ফেলে বলত--আরে, আমার দিকে একবারটি চোখ
তুলে তাকিয়ে দেখই না গো ভাল মানুষের পো। আমার এ-রূপ,
দেহের যৌবনের জোয়ারের কদর বুড়া সর্দারের কি আর বুঝার
ক্ষমতা আছে নাকি। একা একা যৌবন জ্বালায় দগ্ধে মরি! তুমি কি
আদমি, নাকি পাথরে তৈরি। শরম কিসের? এসো আমার বুকে
এসো, আমাকে দলাই মলাই করে একেবারে শেষ করে ফেল। আমি
আর জ্বালা সইতে পারছিনা! তুমি আমার যা কিছু আছে, ভোগ করে
আমার জ্বালা নেভাও মেহবুব। কথা বলতে বলতে সে শাকাশিক-
এর হাত দুটোকে নিজের তুলতুলে বুকের ওপর রেখে আচমকা
চোখের বাণ মারে।
শাকাশিক আচমকা তার হাতটি টেনে নেয়। মুখ বিকৃত করে
বলে—'এ আবার কি? এসব আমি পছন্দ করি না।'
ডাকাত-সর্দারের বিবির কথায় তার মনে আশার সঞ্চার হয়,
ভাবে, আমি আমার যৌবনশক্তি দিয়ে তার দেহ-মনকে সুখ দিতে
পারলে ভয়ঙ্কর এ-দস্যুর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে যাব, কম
কথা! মুক্তির আনন্দ তাকে পেয়ে বসল। সে মুহূর্তমাত্র সময় নষ্ট
না করে ডাকাতের অষ্টাদশী বিবির নগ্ন দেহটিকে দু' হাতে জড়িয়ে
ধরল। বুকের মধ্যে লেপ্টে নিল। তার মুখের কাছে নিজের মুখটিকে
এগিয়ে নিয়ে গেল। চুম্বন করল। চুম্বনে চুম্বনে তাকে উত্তলা করে
তুলল। যুবতীটির নগ্ন দেহটি বিছানার ওপর এলিয়ে পড়ে।
বনহরিণীর মত ডাগর ডাগর চোখ দুটো আবেশে জড়িয়ে আসতে
চায়। একটি যুবকের মধ্যে কামোন্মাদনা জাগিয়ে তোলার জন্য যা
কিছু করা দরকার কোন প্রায়াসই সে বাদ দিল না। আমার ভাইয়া
শাব্বাশিক ক্রমে ক্ষুধার্ত নেকড়ের মত হয়ে উঠল। তার দেহের খুনে
মাতন লাগে। ঝাঁপিয়ে পড়ে যুবতীটির নগ্ন দেহের ওপর। তারপর ?
না, তারপর আর কিছু সম্ভব হ’ল না। অতর্কিতে দরজায় এসে দাঁড়ায়
ডাকাত সর্দার। ভয়ঙ্কর তার চাহনি। বীভৎস তার মুখের ভাব। গুলি
খাওয়া শেরের মত গর্জে ওঠে— শয়তান, আমার বিবিকে নিয়ে
মজা লুঠছিস! তোর বুকের পাটা তো কম নয়! আমার কলিজায়
হাত দেওয়ার মজা তোকে টের পাইয়ে দিচ্ছি।' কথা বলতে বলতে
কোমর থেকে ছোরা টেনে নিয়ে শঙ্কাশিক-এর ঠোঁট দুটো টেনে ধরে
কুচ করে কেটে দিল। আবার তর্জন গর্জন শুরু করল—'তুই যে-
লিঙ্গটি দিয়ে আমার বিবিকে ভোগ করেছিস সেটা কেটে এমন
| অবস্থা করে দেব জিন্দেগীতে যাতে আর কারো বিবিকে ভোগ
করতে না পারিস।' এবার হিংস্র জানোয়ারের মত আমার ভাইয়া
শাক্কাশিক-এর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। শুরু হ’ল ধস্তাধস্তি। এক সময়
বাগে পেয়ে সে তার পুরুষাঙ্গটি কেটে ফেল্ল।
আমার ভাইয়া শাক্কাশিক সংজ্ঞা হারিয়ে মেঝেতে এলিয়ে
পড়ল। ডাকাত-সর্দার তাকে মৃত ভেবে একটি খচ্চরের পিঠে
| চাপিয়ে সেটিকে পাহাড়ের দিকে পাঠিয়ে দেয়। পাহাড়ের গায়ে সে
খচ্চরের পিঠ থেকে পিছলে পড়ে গেল।
5
1
তাদের মুখে শুনে আমি উদভ্রান্তের মত ছুটতে ছুটতে সেখানে হাজির
= হই। বাড়ি গিয়ে আমি হেকিম ডেকে গোপনে ইলাজের ব্যবস্থা
করি । হেকিমের দাওয়াহয়ে তার দেহের ক্ষতগুলি শুকিয়ে যায়।
। তারপর থেকে সে আমার ঘাড়ে চেপেই দুঃখের দিনগুলো গুজরান
করতে থাকে।
P
সে-পথে আমাদের মহল্লার কয়েক জন মক্কায় হজ করতে
যাওয়ার সময় আমার ভাইয়া শাকাকিকে দেখে চিনতে পারে।
1
নাপিত এবার খলিফা অল-মুসতানসির বিল্লাহকে লক্ষ্য করে
। বল্ল – জাঁহাপনা, এবার আপনিই বিচার করে দেখুন, আমি কেমন
পরোপকারী, স্বল্পভাষী, জ্ঞানী ও মহাপ্রাণ।'
খলিফা বলেন—'ঠিক বলেছ হে, তোমার মত এমন এক
সর্বগুণ সম্পন্ন ব্যক্তিকে নিজের কাছাকাছি রেখে স্বার্থপরতার
পরিচয় দিতে চাই না। তোমার গুণাবলী তামাম দুনিয়ার আদমির
1মধ্যে সঞ্চারিত হোক। এই বলে তিনি আমাকে বাগদাদ থেকে
তাড়িয়ে দিলেন। তারপর এ মুলুক-সেমুলুক ঘুরে আপনার মুলুকে
= চীন দেশে এসে হাজির হয়েছি। আমি হলফ করেছি, খলিফা অল-
মুসতানসির বিল্লাহ যতদিন না গোরে যাচ্ছে ততদিন আর
বাগদাদমুখো হচ্ছি না। এবার আপনারাই বিচার করে বলুন তো,
আমি কি সত্যি বেশী বকবক করি, নাকি মিতভাষী? আমার তো
বিশ্বাস, তামাম দুনিয়াটি ছুঁড়ে এলে আমার মত আর একটি মিতভাষী
পাবেন না। আর দূরদর্শিতার বিচার? সে যুবককে তো আমি দু' হাতে
বারণ করেছিলাম যেন তিনি নতুন কোন কাজে হাত না দেন। তার
সময় খুবই খারাপ যাচ্ছে এ কথাও বলতে ভুলি নি। সে আমার
কথায় কান দিল না। আমি মোক্ষম সময়ে সেখানে হাজির না হলে
লেড়কিটির আব্বা কাজীর হাতে নির্ঘাৎ তার জান খতম হয়ে যেত।
আমার চেষ্টাতেই একটি পা খোয়ালেও জান তো রক্ষা পেল।
বেইমান কাহাকার ! একবার সুকরিয়! পর্যন্ত জানাল না বেইমানটি।
7
;
=
নাপিত তার বকবকানি থামালে উপস্থিত সবাই যেন হাঁপ ছেড়ে
বাঁচল। হায় আল্লাহ! কান একেবারে ঝালাপালা করে দিল। এ-ই
যদি স্বল্পভাষীর নমুনা হয় তবে আর তামাম দুনিয়ায় বকবক করার
লোক কেউ-ই নেই। হতচ্ছাড়া শয়তানটির জন্যই ছেলেটির পা
গেছে। আজ সে খোঁড়া। চুল ছাটতে গিয়ে কথার ফুলঝুরি না
ছোটালে সময়মত সে লেড়কিটির কাছ থেকে সরে পড়তে সক্ষম
হ’ত। তারপর পৌঁছতে দেরী করলেও যদি বকবকানি জুড়ে না দিত
তবে কিছুতেই কাজীর হাতে সে ধরা পড়ত না। বৃথা চিৎকার
চেঁচামেচি করে লোক জানাজানি করে সর্বনাশ ঘটায়। মনে হ’ল
দর্জিটি যেন আমাদের বলছে, নাপিতের বদমাসির জন্যই
কেলেঙ্কারীটি ঘটেছিল। সব সর্বনাশের মূল নাপিতকে উচিত শিক্ষা
দেবার জন্য ছোট্ট একটি কামরায় আটক করা হ’ল। তারপর আমি
খানা খেলাম। দামী গরুত্ব গলা পর্যন্ত গিল্লাম। বিকেলের দিকে
বিরি জন্য পোটলা বেঁধে খানা নিয়ে ঘরে ফিরলাম।
আমাকে দেখেই আমার সোহাগের বিবি তম্বি জুড়ে দিল—
‘কোন চুলোয় সারাটি দিন কাটিয়ে এসে? আমাকে বাড়িতে একা
ফেলে কোথায় কার রঙে মজেছিলে? আমাকে নিয়ে এখনই যদি
বেড়াতে না বেরোও তবে আমি কাজীর শরণাপন্ন হব। তোমাকে
কালক দিয়ে পায়ের ঝাল মিটাল
আমি নিরীহ শান্তিপ্রিয় মানুষ কাজীটার্জীর ঝামেলায় না গিয়ে
আমার রূপনীকে নিয়ে সান্ধা ভ্রমণে বেরোলাম। বেরিয়ে ঘরে
ফেরার পথে কুঁকোটির মুখোমুখি হলাম। সে গলা পর্যন্ত সরার
গিলেছে। বদ্ধ মাভাল। আমরা বলাবলি করলাম উম্মত্ত প্রায়
কুঁজোটিকে সঙ্গে করে ধরে ফিরলে চুটিয়ে মজা করা যাবে তাকে
নিয়ে। তাকে বলতেই সে সঙ্গে সঙ্গে রাজিও হ'ল।
আমার বিবি পরপুরুষের সামনে বেরোয় না। কিন্তু তার মতে,
কুঁজোটি তো আর অন্য দশজন মানুষের মত নয়। তাকে একটি
খেলার পুতুল জোন করত।
আমরা বাড়ি পৌঁছে গল্পগুজবে মেতে গেলাম। কুঁজোটি ভার
অদ্ভূত অদ্ভূত খেলা দেখাতে আগ্রহী। আমার বিবি খেতে বসে তার
মুখে জবরদক্তি এক টুকরো মাছ গুঁজে দেয়। গলায় কাঁটা বেঁধে।
হতচ্ছাড়া কুঁজোটি মারা গেল।
আমার বিবিই উপায় করল। নিকে তার লাশটি কোলে ভুলে
নিয়ে হেকিমের বাড়ি যায়। সুযোগ বুঝে তর বাড়ির সিঁড়ির মুখে
সেটি ফেলে রেখে আমাকে নিয়ে সে বাড়ি ফিরে আসে।
জাঁহাপনা, এর পরে কি কি ঘটনা ঘটেছিল আপনারা তো সবই
শুনেছেন। হেকিম, পাচক, খ্রীস্টান, পাল প্রভৃত্তির কথা বলেছি।
এবার আপনিই বলুন জাঁহাপনা, আপনার ও কুঁডোর ও তার মৃত্যুর
কিার চেয়ে সে খোঁড়া যুবক বণিক ও নাপিত আর তার হয়
'ভাইয়ার কিস্সা থেকে রোমাঞ্চকর নয় কি?
– সত্যি তোমার কিস্সা আমাকে অবাক করে দিয়েছে কিন্তু
সে বিচিত্র চরিত্রের নাপিতটিকে আমি একবারটি নিজের চোছে
দেখার জন্য কৌতূহল বোধ করছি। তাকে হাজির কর। মৃত্যুর পর
তার সমষ্টি স্কুলে আমি স্মৃতিসৌধ পড়ব। যাও, খুঁকে অন।'
—'জাঁহাপনা, খুবই সাধারণ কাজ। আমি আপনার হুকুম তামিল
করছি।'
দর্জি এবার সুলতানের সিপাহীদের নিয়ে নাপিতের খোঁজে
বেরোলো। ঘণ্টা খানেক পরে নাপিতকে নিয়ে তারা প্রাসাদে ফিরক
নব্বইয়ের কাছাকাছি তার উমর। চুল-দাড়ি সবই শনপাটের মত
ধবধৰে মহেন্দ।
নাপিতকে দেখে 'সুলতান হেসে হেসে বলেন—'শোন,
তোমার কিস্সা শুনে আমি মুগ্ধ হয়েছি।'
—জাঁহাপনা, এর চেয়ে কত মজার মজার কিস্সা আমার
মাথায় হরবকত ঘুরপাক খাচ্ছে। কত কিস্সা শুনবেন আপনি?
সাতদিন সাত রাত্রি ধরে কিস্সা বল্লেও আমার ভাণ্ডার নিঃশেষ।
হবে না। কিন্তু জাঁহাপনা, আমাকে আর একটি কথার জবাব দিন।
এ-খ্রীস্টান, একুঁজো আর এ-ইহুদির লাশ এখানে আসা কি করে
সম্ভব হ’ল? আমার বিশ্বাস, পুরো ব্যাপারটিই ভুলের জন্য ঘটেছে।'
সুলতান মুখ খুল্লেন—'ভাল কথা, তবে বলছি।' তিনি এবার
কুঁজোর আকস্মিক মৃত্যু থেকে শুরু করে খ্রীস্টান দালালের ফাঁসির
আদেশ হওয়া পর্যন্ত সব ঘটনা সবিস্তারে তার সামনে তুলে ধরলেন।
নাপিত এবার বল্ল--জাঁহাপনা, মেহেরবানি করে কাউকে
বলুন কুঁজোর লাশটির ওপর থেকে কাপড়টি সরাতে।'
সুলতানের হুকুমে এক যুবক-কর্মী কুঁজোর ওপর থেকে
কাপড়টি সরিয়ে নিল
নাপিত এবার তার কাছে এগিয়ে গিয়ে অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টিতে ভাল
করে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বল্ল— 'জাঁহাপনা, কুঁজোটির জান যে
খতম হয়েছে এতে কিছুমাত্রও সন্দেহের অবকাশ নেই। দুনিয়ার
কোন হেকিম-বৈদ্যই একে জিন্দা করতে পারবে না। কিন্তু আমি
পারব।'
নাপিতের কথায় সভায় উপস্থিত সবাই, এমন কি সুলতান পর্যন্ত
সরবে হেসে তার কথাটি উড়িয়ে দিলেন।
নাপিত কিন্তু তাদের উপহাসে এতটুকুও বিচলিত হ’ল না। সে
কোমর থেকে একটি সান্না বের করে কুঁজোর মুখের ওপর ঝুঁকল।
সান্না দিয়ে তার মুখ থেকে এক টুকরো শক্ত ভাজামাছ বের করে
আনল। ব্যস, নিঃসাড় কুঁজোটি নড়ে চড়ে উঠল। এবার সে চোখ
মেলে তাকাল। সবার চোখের সামনে নাপিত যেন ভোজবাজীর
খেল দেখাল।
নাপিত এবার নীরবে চোখে-মুখে এমন ভাব ফুটিয়ে তুল্ল, এ
কে তার কাছে খুবই সাধারণ ব্যাপার। ইচ্ছা করলে সে আরও
অত্যাশ্চর্য ঘটনা ঘটাতে সক্ষম।
সুলতান বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে বল্লেন—'নাপিত, জিন্দেগীতে
আমি বহুত তাজ্জব ব্যাপার চোখের সামনে দেখেছি বটে। কিন্তু মরা
হ্রদটিকে জিন্দা করা, এমন অবিশ্বাস্য কাণ্ড কোথাও দেখি নি। এ-
বৃত্তে আমার দরবারের বিদূষক। এর অবর্তমানে কেবল আমার
করেই নয়, রাজ্যের সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে এসেছিল।
তোমাকে প্রথম দর্শনেই আমার যেন মালুম হয়েছিল, তোমার
ভেতরে এমন এক সম্পদ রয়েছে সাধারণ আদমি যার হদিস পায়
সুলতান এবার তাঁর কুঁজোকে তার যথোপযুক্ত পোশাকে
সজ্জিত করে দরবারে বসালেন।
সুলতান নাপিতকে লক্ষ্য করে সোল্লাসে বল্লেন—'শোন, আজ
থেকে তুমি আমার দরবারের দ্বিতীয় বিদূষকের পদে অভিষিক্ত
হলে; আর আমার ব্যক্তিগত ক্ষৌরকারের পদও তোমাকে দান
| করলাম। তুমি হবে আমার কাছের ও প্রিয় মানুষ।
বেগম শাহরাজাদ তার কিস্সা বলতে বলতে মুহূর্তের জন্য
মৌচ হলেন। তারপর বললেন——'জাঁহাপনা, এ-কিস্সাটি এখানেই
শেষ হয়েছে। এর চেয়েও অনেক অনেক বেশী চিত্তাকর্ষক কিস্সা
আমার স্মৃতির ভাণ্ডারে জমা রয়েছে যা শুনলে আপনি তাজ্জব বনতে
বারে। অবশ্য আপনি যদি আগ্রহী হন তবে আমি এখনই তা শুরু
করতে পারি।'
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
জয় গুরু
বিশুদ্ধ প্রচারের স্বার্থে -
আপনার যে কোন মন্ত্যব, অভিযোগ, অনুরোধ আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান। ...