বাদশাহ শারিয়ার এবার বলেন—‘দর্জি ও নাপিতের কিস্সার
চয়েও চিত্তাকর্ষক কিস্সা আবার হতে পারে নাকি? ঠিক আছে,
শুনি, তোমার কি সে কিস্সা।'
বেগম শাহরাজাদ উচ্ছ্বসিত আবেগের সঙ্গে বললেন—
‘জাঁহাপনা, এবার আপনাকে আলীনূর ও আনিস-অল-জালিস-এর
কিস্সা শোনাচ্ছি।'
শুনুন জাঁহাপনা, কোন এক সময় রাজত্ব করতেন মহম্মদ ইবন
সুলেমান অল—যিনি বসরাহ-র সুলতান পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
তিনি ছিলেন দয়ার অবতার। অসহায় দীন-দুঃখীদের চোখের মণি।
সুলতানের দরবারে দু’ জন উজির ছিলেন। তাদের একজনের
হুম ছিল কা-কন-এর পুত্র অল-ফাদল আর দ্বিতীয় জনের নাম
সহবীর-এর পুত্র মইন।
উত্তির অল-ফাদল সদাশয়, মহানুভব এবং প্রেম ও দয়ার
পুজারী। আর মইন ছিলেন অল-ফাদল-এর সম্পূর্ণ বিপরীত
ফেব্রুর। রাজ্যের কোন লোককেই তিনি দিল্ থেকে মেনে নিতে
3
ध পারতেন না। মেজাজ যেন সর্বদা তিরিক্ষ) হয়েই থাকত। কেউ
ছোটখাট কেন ভুলচুক বা গলতি করে ফেলে কঠিন শাস্তিদাত
করে কর্তব্য পালন করতেন। উক্তির হল-হ্যালকে তার আচার
আচরণের জন্য সবাই যারপর নাই শ্রদ্ধা করত। কিন্তু মইনকে তার
1 চেয়ে অনেক বেশী অস্কার চোখে দেখত সকলে।
=
।
a
সুলতান এবার বললেন -- বসরাহের বাজারে নাকি খুবসুরৎ সব
= ক্রীতবাসী আমদানি হয়েছে। তুমি হাও, পছন্দ করে একটি
ক্রীতদাসী কিনে থাকবে। খালি সুরই নয় স্বভাব চরিত্রের দিকে
নজর দেবে।'
3
এক সকালে মুন্তানের দরবারে উদ্ভিন্ন হল-এর ডলব হ’ল
উজির কুর্নিশ থেকে সুলতাদের আদেশের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে
বইলেন!
R
5
ন
উজির অল-হলে খচ্চরের পিঠে চেপে চললেন সুলতানের
হুকুম তামিল করান্তে। কোর্তার জেবে দশ হাজার মোহর সঙ্গে নিয়ে
গেলেন।
ব্যাপারটি কিন্তু উজির মইন-এর চোখে মোটেই সুবিধার মনে
হ’ল না : এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজের দায়িত্ব অন্যের ওপর অর্পিত
হলে কার না জবাহ হয়?
3
5
বাজারে পৌঁছে অল-হ্যাম্প ক্রীতদাসীদের দালালগুলিকে
1 হেঁকে তাড়া করলেন। সুলতানের চাহিদার কথা জানালেন।
অসারা গঙ্গীর মুখে বল— 'অপনি যেমন গুরুত্ব ও প্রভাব
= চরিত্রের কথা বলছেন সেরকম ক্রীতদাসী এ বাজারে পাওয়ার
উপায় নেই। এখানে যারা আছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী দামের
ক্রীড়ামী এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা দিপেই পেয়ে যাবেন। বাস, এর
বেশী কিছু আশা করা যায় না।'
'ভাষ কথা, এখানে যাদের জড়ো করা হয়েছে তাদের মধ্য
থেকেই বাছাই করে সবচেয়ে বেশী সুরং ও সভ] বা যে তাকেই
আমার সামনে হাজি
দালালরা ফুটল কীভাশী বাছাই করতে। হন্যে হয়ে ঘুরে
সবচেয়ে বেশী সুরৎ ও আচার অচরণ ফর সবচেয়ে ভাল যে
ক্রীতদাসী পেল তার দাম এক হাজার পিনালঞ্চ নয়।
উভির অল-বাদল-এর চোখে মুখে বিষাদের ছায়া নেমে এল।
অপ-সংককে বলেন—তবে উপয়
–ছল্লুর এ মাসের শেষের দিকে কিছু আচ্ছা আচ্ছা ক্রীতদাসী
অসার কথা আছে। তখন না হয় খুঁজে পেতে সবচেয়ে সুরৎ যার
বেশী মনে হবে ততেই নিয়ে যাবেন।'
উক্তির অল-সাদল দরবার ফিরে গিয়ে সুলতানকে সব কথা
বল্লেন—“ঠিক আছে তোমাকে আরও কয়েক দিন সময় দিলাম।
তবে খেয়াল থাকে যেন দুনিয়ার সেরা ক্রীতদাসী আনতে হবে।
কয়েকদিন যেতে না যেতেই এক দালাল উজিরের কাছে এসে
জানাল, 'সুলতান যেমন চাইছেন ঠিক সেরকম এক যুবতী
ক্রীতদাসীর খোঁজ পাওয়া গেছে। তার স্বভাব চরিত্রও খুবই ভাল।'
—'বহুত আচ্ছা। তুমি যত তাড়াতাড়ি পার যুবতী ক্রীতদাসীকে =
নিয়ে এস।
এক ঘণ্টা যেতে না যেতেই দালালটি এক তন্বী যুবতী
ক্রীতদাসীকে তাঁর সামনে হাজির করল। লম্বা ধাঁচের চেহারা।
উদ্ভিন্ন যৌনা। নিতম্ব প্রশস্ত, কোমর সরু। স্তন যুগল খুবই সুগঠিত।
যত্ন আত্তির ফলে একেবারেই নিটোল। ষোড়শী বা অষ্টাদশী হবে।
বড় জোর। হরিণের মত ডাগর ডাগর চোখ দু'টি। চপল চাপল তার
চাহনি। গায়ের রঙ আপেলের মত। গাল দুটোর বৈশিষ্ট্য এই যে,
সে হাসলে দু' গালে মনলোভা টোল পড়ে।
উক্তির অল-হাদল ভাবলেন—এমন রূপের পসরা সাজিয়ে
সুলতানের সামনে যুবতীটিকে হাজির করলে তাঁর কলিজাটি নির্ঘাৎ
চনমনিয়ে উঠবে। সুলতান এমন রূপসী-যুবতীকে দেখলে অবশ্যই
চিও চাঞ্চল্য বোধ করবেন। উজির এবার তার নাম জিজ্ঞেস
করলেন—'সুন্দরী তোমার নাম কি, বল তো??
-'আনিস-অল-জালিস।'
উজিং ক্রীতদাসীটির দাম জানতে চাইফে নাসারা বলে— 'দশ
হাজার দিনার। এর মালিক এ শমই আমার কাছে দাবী করেছে।
– ঠিক আছে, এর মালিকার অপদ কর সেড়লে তার হাতেই
| আমি দাম সেব
>
ক্রীতদাসীটির মালিক এল ক্রীতদাসটির জন্য সে ও দ
হাজার দিনারই নবী করল। এর বসু এত বেশী হওয়ার পিছনে ।
করণ দেখাল—'হুজুর, লেড়ক্টিটির ইতিহাস, বিজ্ঞান, গণিত,
ভূগোল, এইিন, দর্শন এবং সমাকবিজ্ঞান সম্পন্ধে বই দখল রয়েছে।
এখন সর্ব বিহায় পারদর্শিনী চির দেখা যায় না। সবচেয়ে বড়
কথা,আব্রু পর্যন্ত এর চরিত্রে এতটুকুও কালির ইটে পড়েনি। আবার
হাস্যরস সম্বস্তেও এর যথেষ্ট জ্ঞান রয়েছে।
— তোমার সব কথাই আমি বিশ্বাস করছি 'উদ্ভিন্ন অঙ্গ-কাদার
তার হাতে দশ হাজার দিনার তুলে দিলেন।
ক্রীতদাসী যুবতীটির মালিক তার প্রাপ্য বুঝে গোরো গরুরূণ-
"আমার একটি অনুরোধ আছে হুতুল। হৃঢ়তানের সনদে একে
আজই হাজির করবে না। পথমে এর রূপ সৌন্দর্য অনেকাংশে
ম্লান হয়ে গেছে। অটি-দশদিন আপনার কাছে থাকতে দিন ভরা
মধে! এর হাত-সৌন্দর্য ফিরে আসবে। তারপর সুফতান এলে প্রথম
দর্শন করলে দেখবেন এর রূপ-সৌন্দর্য কেম ফুটে বেরোয়।
অপ-শাসকা তার পরামর্শদুয়ায়ী কাজ করলেন। নিজের
প্রাসাদের এক কক্ষে তার পকর ব্যবস্থা করে দিলেন।
অল-ফাল-এর একটি মূলক লেড়কা রয়েছে। শেনন ভার
অন্য সফরণ রূপ ঠিক তেমনই বহুগুগের সমবেশ ঘটেছে তার
মধ্যে। তার নাম আলী নূর আনিস-এর কথা কিছুই তার জানা নেই।
শুধুমাত্র জালে টাকা দিয়ে কেনা এক ক্রীতদাসী। কিন্তু তার জন্য এবং
কত টাকার বিনিময়ে এমন কিছুই জানে না।
এদিকে উদ্ভির পানিসকে তার থাকার কর দেখিয়ে দিয়ে
বললেন----'শোন বাছা, দশ বরোলিন এখানে থেকে পথের ক্লান্তি
পূর্ণ করে একটু তরতাজা হয়ে নাও। একটি তথা কিন্তু মনে রেখো,
আমার এক যুবক ছেলে রয়েছে। হাড়ে হাড়ে বজ্জাত। তার সুরধ
কিন্তু খুবই। নিজেকে একটু সামলে টাহলে রেখো। যদি তার হাতে
নিজেকে সাঁপ দাও তবে কিন্তু সুলতানের কাছে আমি মুখ দেখাতে
পারব না। তার চোখ দুটোয় লেড়কি ভোলালে যহু অল্পে। তার
চোখের দিকে পেড়কির তালেই মহলতে পড়ে যায়। এ-
ভক্সার্টের কোন পেড়ার্ক তার হাত থেকে রেহাই পায় নি। তাই বলছি
কি, সাংস্কৃনে থাকবে এর খোকা বামন তোমার সব কাজ করে
দেবে তুমি ভুলেও ঘর থেকে বেরিয়ো না। তার চোখে যদি পড়
তবেই সর্বনাশের ২৬ান্ত হয়ে যাবে, খেয়াল রেখো। মজার কথা
হচ্ছে, তাকে তোমার মন পাওয়ার জন্য প্রয়াসী হতে হবে না। তুমিহ
সোৎসাহে নিজেকে তার হাতে সঁপে দেয়াত জন ঊষ্মদিনীর মত
হয়ে যাবে।'
আনিস খড় কাৎ করে. সম্মতি জানাল।
নসীব। নসীবের ফের এড়াবার উপায় কি? পরদিন ঘোজা
কলটি আনিস'কে নিয়ে হামান থেকে আতর মেশানো পানিতে
গোসল করিয়ে নিয়ে এল। সোনার জরির কাজ করা কঠিত ও
সালোয়ার পরিয়ে দিল 'গায়ে মাখতে দিস বহুমূল পান্ন সামগ্রী।
উদ্ভিরের বিধি ভার রুপে মুগ্ধ হয়ে নিজের ঘরে নিয়ে গেলেন।
পঞ্চমুখ ভার প্রসংশ করলেন। আর সোহও কম করলেন না।
আনিস, অদ্ভুত ভঙ্গিতে ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুটিয়ে
ভূপ
ভাকে নিজের ঘরে বসিয়ে উজিরের বিবি হামামে দোকান
গোসল করছে। দুই খোঁজা পরিচারককে বলে গোসন, কাউকে যেন
তার কাছে আসতে না দেয়!
উক্তিরের বিধি ঘর ছেড়ে গেলে আনিস দৌশকের অনাবশ্যক
অংগুলি খুলে রেখে পালঙ্কে গা এলিয়ে দিল। তার ঠিক কিছুক্ষণ
কদেই আম্মার সঙ্গে দেখা করার জন্য নূর সে-ঘরের দিকে আসে।
দরওয়াজায় পা দিয়েই খোজা বামন দুটো তার পথ আগলে দাঁড়ায়
তারা বলে—'হুজুর, মালকিন তো নেই, হামায়ে গেছেন গোস্স
সারতে। হরে ছোট-মালকিন রয়েছে, পাহারা দিচ্ছি।'
কপালের চমড়ার ভাঁজা এঁকে
আবার কে হে?, কে, কোত্থেকে এনেছে।
বলল – 'ছোট মালর্কিন ? সে
—':স কী হার, আপনি কিছুই জানেন না? উজির সাহেব
সুলতানের জন্য খরিদ করে এনেছেন।
র. এর কৌতূহল হ’ল! ঘরে ঢুকতে চায়। খোজা বামন দুটো
হার নব অনুরোধ করে ঘরে না ঢোকার জল। সে অবরদন্তি ঘরে
ঢুকলে মালকিন তাদের জনি খতম করে দেবেন একথাও বলে।
নূর তাদের শত অনুরোধ ও কাকুতি মিনতির কিছুমাত্র মূল্য না
দিয়ে সে ঘরে ঢোকার চেষ্টা করে।
আনিস খেল বামনদের কথার সচকিত হয়ে পড়ে। দরজায়
উজিরের উচ্ছৃঙ্খল পুত্র নূর -এর আগমন ঘটেছে বুঝতে তার শকি
রইল না। উজির তো তাকে তাঁর পুত্রভৃটি সম্বন্ধে সতর্ক করে।
দিয়েছেন। বারবার বলেছেন, কিছুতেই যেন তার মুখোমুখি না হয়।
আনিস-এর অন্তরের অন্তঃস্থলে নরকে একটিবার চোখে দেখার
জন্য গৌতূহল হয়। জানতে ইচ্ছা করে. কি আছে তার চোখের
তারায় যা দেখলে যুবতীরা পিয়ার মহব্বতে একেবারে মজে যায়?
তবে এ-ও প্রতিজ্ঞা করে কিছুতেই নিজেকে তার হাতে সঁপে দেবে
না। অতীতে বহু সুপুরুষই তো তার পিছন পিছন ঘুর ঘুর করেছে।
তাচ্ছিল্যের সঙ্গে সবাইকে সে দূরে ঠেলে দিয়েছে। কিন্তু নর-এর
মধ্যে এমন কি আছে যে, নিজেকে বশে রাখতে পারবে না। কৌতূহল
নিবৃত্ত করতে গিয়ে সে দরওয়াজার পাল্পটি সামনা ইরু করে
নূরকে দেখার চেষ্টা করল। কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার তো যুবক নূর-
এর চোখের দিকে তাকানো মাত্র তার কলিয়াটি আচমকা কেমন
যেন মোচড় মেরে ওঠে রতে মাতন জাগে। মাথার স্নায়ুগুলে এক
সঙ্গে ঝনঝনিয়ে ওঠে। মুহূর্তে আনিস যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলে।
দরওয়াজা বন্ধ করে পালিয়ে যেতে গিয়েও থমকে গেল। পালাতে
আর পারল না।
এদিকে নূর-ও অনিস্-এর রূপ-সৌন্দর্য বিস্ময়ভরা চোখে
দেখতে লাগ্ল। এমন রূপের জৌলুর তামাম বসরাহ নগয়ে দ্বিতীয়
কারো মধ্যে দেখা যাবে না। কত নং রূপসী যুবর্তী বিবস্ত্রা হয়ে
তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। স্বেচ্ছায় নিজের রূপ যৌবন তার
হাতে তুলে দিয়ে পুকানন্দে ভেসেছে। কিন্তু এ-মুহূর্তীটি যে
একেবারেই অনা।
আলি নূর তার নিজেকে সংযত রাখতে পারল না। অতর্কিতে
দরওয়ঞ্জা ঠেলে ভেতরে ঢুকে গেল। ভীতা-সংক্রা হরিণীর মত
আনিস ঝট করে দরওয়াজা থেকে সরে যায়। পালঙ্কের কাছে পিছা
ফিরে দাঁড়ায় তাকে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার ডানা বলতে মল
থেকে উৎসাহও পচ্ছে না। না পারে ফেলতে, না পারে গিলতে।
ডাকী বিষম শয়রে পা
নুর এগিয়ে দিয়ে আনিস-এর মুখোমুখি দাঁড়ায় তার হাত
বাড়িয়ে তার মুখটি তুলে ধরে বলে— সুন্দরী, এমন করে নিজেকে
করিয়ে দেখো না মুখ ভোল. আমার দিকে তাকাও একলারটি।'
আনিস আবেগ মধুর গরে উচ্চারণ করতে চায়—তা হেবার
নয় তোমার অধ্ব: উজির সাহেবকে যে আমি কথ' দিয়েছি,
তোমার সংশ্রবে যাব না।' কিন্তু বার বার চেষ্টা করেও সে এ ধরনের
কোন প্রতিবাদ বাকা মুখে উচ্চারণ করাতে পারল না।
আসি চোখের ভাষায় নূর'কে বহুল—'ধোগো আমার পাশে
নূর তার সম্মতি পেয়ে উচ্ছ্বসিত অরেগের সঙ্গে তার মনময়ূরী
| রূপ-সৌন্দর্যের আকর আর্নিস কে দু'হাতের বহুত ভাবদ্ধ করে।
তার মুখের কাছে নিজের মুখটিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে নিয়ে যায়।
ঠোঁটে ঠোঁট দুটো রেখে উম্মানের মত পমতে থাকে। চুম্বন শেষে বার
বার। চুম্বনে চুম্বনে আনিস-এর বুকে উত্তেজনামিশ্রিত রোমাখের
সঞ্চার ঘটে। সর্বাঙ্গে আগে এক অনাস্বাদিত শিহর।
নূর এবার এগিয়ে এসে দড়াম করে দর ওযলাটি বন্ধ করে দেয়।
■ খোঝা বামন দুটো প্রমাদ গণে। এ কী সর্বনাশ' কাণ্ড! মালিক বালিতে
পারলে যে তানের জানে মেরে ফেলবেন।
নূর যখন কিছুতেই দরজা খুলে আনিস-এর কাছ থেকে বেরিয়ে
এল না তখন খোজা বামন দুটো কাঁদতে কাঁদতে তাদের মালকিন
এর কাছে গেল দুঃসংবাদটি দেবার জন্য। উজিরের বেগম তখন সবে
গোসল সেরে হামাম থেকে বেরিয়েছেন।
poiRE
খোজা বামনদের মুখে দুঃসংবাদটি শোনামাত্র উজিরের বেগম
লম্বা লম্বা পায়ে ঘরে ফিরে এলেন। দরজার কাছে পৌঁছেই থমকে
গেলেন। দেখেন, বিবস্ত্রা আনিস পালঙ্কের ওপর গা এলিয়ে দিয়ে
অবসন্নের মত পড়ে। তার চোখের তারায় তৃপ্তির ছাপ। মুখে আতঙ্ক।
উজিরের বেগম সচকিত হয়ে বলেন—‘কি? কি হয়েছে বেটি?’
—‘আমার সর্বনাশ হয়ে গেছে। আমার জীবনের পরম সম্পদ
লুঠে নিয়ে দস্যু গা-ঢাকা দিয়েছে। আজ আমি নিঃস্ব-রিক্ত-সর্বশান্ত!’
——তোমার এত বড় সর্বনাশ করে গেল, আর তুমি তা নীরবে
হজম করলে? উজির সাহেব জানতে পারলে পরিস্থিতি কি হবে,
ভেবে দেখেছ কি?'
—‘আমি প্রবল আপত্তি করেছিলাম। কিন্তু তিনি যে আমাকে
অন্যরকম বোঝালেন—উজীর সাহেব নাকি গোড়াতে সুলতানকে
ভেট দেবার জন্যই দশ হাজার দিনার দিয়ে আমাকে খরিদ
করেছিলেন। কিন্তু পরে নাকি মনস্থ করেছেন, আপনার লেড়কার
সঙ্গে আমার শাদী দেবেন। আমার অবস্থার কথা মেহেরবানি করে
একবারটি বিবেচনা করে দেখুন। আমি অর্থের বিনিময়ে কেনা বাঁদী।
হুকুম তামিল করাই আমার প্রথম ও প্রধান কর্তব্য।'
উল্লির বেগম দুঃখে আতঙ্কে কপাল চাপড়'৩৩ লাগলেন।
উলিংকে কি বলবেন ভাই নিয়ে তিনি ভেবে অস্থির হলেন। ৪৩ব৬
একটি অন্যায়কে মুখ বুজে হজম করার পাত্র তিনি নন। কথাটি
ােনসার লেড়কার গর্দান নেওয়ার হুকুমই হয়ত দিয়ে বসবেন।
উজির ফাদা সফর কক্ষে অন্দর মহলে এলেন। বেগমের
আঁখিঁর পাতা ভেজা দেখে বিস্মিত হলেন। উৎকণ্ঠিত হয়ে জিজ্ঞাস
করদেন—'কি ব্যাপার, কাঁদছ কেন? হয়েছে কি? হঠাৎ এমন ক
ঘটল যে
1
বেগম আছি মুছতে মুছতে বললে
লুকোবার ইচ্ছে আমার নেই। ভূমি হলফ
তোমার কাছে কিছুই
কর, আমি নে অনুরোধ
করব তার শইরে কোন কাজ করবে না। আমার কথা না রাখাল
আবাৰ্তী হওয়া ছাড়া আমার আর গত্যন্তর থাকবে না।'
—তুমি নির্দ্বিধায় তোমার বক্তবব পেশ করতে পার। কথা দিচ্ছি,
তোমার মতের হিসেছে কোন কাজই করব না।
স্বামীর কাছ থেকে আশা পেয়ে বেগম হোর গেট' নূর-এর
কীর্তির বিস্তারিত বিবরণ দিলেন। লেড়কিটিকে ধ'প্পা দিয়ে সে তার
ইজ্জত নষ্ট করেছে, এ কথ বসতেও ভুললেন না।
সব শুঢ়া উজির হায় হায় করে উঠলেন। কপাল চাপড়ে বলতে
লাগলেন—'হ'য় আল্লাহ, এক্ট করলে। সুলতানের কাছে আমি
মুখে গবে!'
স্বামীকে প্রণোদ দিতে গিয়ে বেগম বলেন— বিপদের সময়
এমন করে মুষড়ে পড়লে ঈপর তো আরও বেশী করে ঘাড়ে
সাপবে: মনকে শত করে বাঁধ। আমি দশ হাজার দিন তোমাকে
দিচ্ছি। সুলতানকে ফিরিয়ে দিয়ে এসো।
I
—দিনার 13/, ইহকই এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে: কা
হাজার ডিনার জোগাড় করার মত ক্ষমতা কি আগত এই! কথাটি
- এই গান নির্বাৎ তেলে বেগুনে জ্বলে উঠবেন আমাকে
কোতল করার নির্দেশ দিয়ে বলা ও নিছুমাত তাজ্জবের ব্যাপার নয়
■ নূর-এর আস্থা
न
■
ভ্রু
ব — মিছেই তুমি ঘাবড়ে গিয়ে এমন কাহিল হয়ে পড়। সুলতান
তো আর অনিল-এর কথা কিছু জানেন না। আমি, তুমি, দূর আর
জানিস ছাড়া ব্যাপারটি তো খার জন্য কারোরই জানা নেই। আমর
ফাঁক না করলে কাক পক্ষীও জনতে পারবেন। আর উচির মইন
এর কথা যদি ভাব যে, সে সুলতানের কানে বিষ ঢেলে তাকে
উত্তেজিত করে তুলবে তারও কোন সম্ভাবনা নেই। সেও
না। জানতেও পারবে না কোনদিন
সেগমের কথায় উত্তির ফাঙ্গে কিছুটা আশ্বস্ত হলেন বটে, তবু
। উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে অনে— তুমি কি ভাবছ, উজির মইন-এর
কানে কথাটি কোন দিন যাবে না? বাতাসেরও ক'ন আছে। সে ঠিকই
| জনিত = একদিন আমাদের গোপন কথা টের পেয়ে যাবে। সেব
যে আমার সর্বনাশের ধান্দায় সর্বদা নিজেকে লিঙ্ক বলে!'
এ সময় প্রাসাদের বাইরের বাগানে পাখির কলরব শুনে
দুইডিশহরাক্তার বুঝলেন, ভোরের আলো ফুটে উঠতে আর দেরী !
নেই তিনি বিশ বন্ধ করলেন।
তেত্রিশতম রজনী
হারুল্লাহ শারিয়ার যথা সময়ে অন্দর মহলে বেগম পহেবার
যুক্ত প্রবেশ করলেন।
কেনে শাহরাফাদ তাঁর ফিস্কার প্রবর্তী অংশ শুরু করতে গিয়ে
হল এল— জাহান, উদ্ভির ফালে তাঁর বেগমকে বলছেন, এর
এর আম্মা, উক্তির মইন অমার বিশ্বাস্যাতকতার কথা যে-কোন
উয়েই হোক বের করবেই। আার তা সুলতানের কাছে পৌঁছে
করে অবশ্যই কসুর করবে না।'
বেগমের পরামর্শে উজির ফল কিন্তু রাত ঠুকে শেষ পর্যন্ত
| রুপচুৱী অনিসকে নিয়োর প্রাসাদেই ভাবে দিলেন! অনতে
তার বেটা দূর-এর কথা ভেবেই তাকে এমন একটি বিশ্বাসংগুিরুভার
করতে পা দিতে হ'ল। সে দিন দিনই কেমন উচ্ছৃঙ্খল হয়ে পড়ছে।
এখন এক রূপসী ও সর্বগুণ:ন্বিতা লেড়কিকে যদি তার গলায় লটকে
দেওয়া যায় তবে হয়ত তার বহির্মুখী মন ঘরে বাঁধা পড়বে। আশর
রেফিটির কথাও কম ভাবেন নি। সুলতানের হারেমে হাজার
কলক বেগম রয়েছেন। আনিস গিয়ে তাদের সঙ্গে যোগ দিে
সংখ্যা একটি বাড়বে। বাস, এ পর্যন্তই। বুড়ো মূলতম দু'চারদিন
নাড়াচাড়া করে ডাবের খোসার মত ভাকেও হারেমে অন্যান্যদের
কাছে পাঠিয়ে দেবেন একটি ফেড়কিং রূপ-যৌবন চিরদিনের মত
কতম হয়ে যাবে।
:বগম বদলেন—'জাঁহাপনা, বেটার এখন উমর হয়েছে। শব্দী
নিয়ে সংসারী করার চেষ্টা করতে হবে। নইলে তাঁর বইরের ঝোঁক
করে না। আনিস প্রম সুন্দরী, অষ্টাদর্শী। তার ওপর তার মধে।
পেস্তূপের সমাবেশ ঘটেছে। তামাম দুনিয়া খুঁহে এমন সর্বগুণহিতা
ইউয়ি আর একটি লেড়কি পাবে না। তোমার বেটাও তো তাকে।
বই পছন্দ করে। তাই বলছি কি, তাদের চার হাত এক করে দাও।
| তারা সুখে ঘর করুক। আমাদের মাথা পেতেও দুশ্চিষ্কার বোঝা
নেমে যাক।'
উক্তির কোন কথা না বলে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যান। নূর অনেক
রাড়ে বাড়ি ফিরল। উজির তার বেটার জন্য ঠান্ডা হয়ে রইলেন
বেটাকে যেতে দেখে দাঁড় করালেন তখনও তার মন থেকে ক্ষোভ
অপমানের কালা পুরোপুরি মুছে যায় নি।
দূর তার আব্বাকে সামনে দেখে সচকিত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে।
কৃতকর্মের ভীতি তার মন গ্লাপ জুড়ে রয়েছে। তাই আব্বাকে কোন
কথা বলার সুযোগ না দিয়েই দয়া করে তাঁর পায়ে লুটিয়ে পড়ে।
নিজের কাজের জন্য বহুভাবে মাফ চাইতে থাকে।
I
বেটর কাম ।দেখে উজিরের মন গলে যায়। তিনি হাত বাড়িয়ে
বেটাকে বুকে ভুয়ো নিলেন। সস্নেহে বললেন—'বেটা, এল 'আর
তুমি সেই ছোট্টটি নও। উত্তর হয়েছে। নিজের ভাল-মন্দ বোঝার
মত আমিও তোমার যথেষ্টই হয়েছে। এবার বিয়ে শাদী করে স্বর
বধ : আমার সম্পত্তি ও কিছু ধন-দৌলত রয়েছে। ধীরে ধীরে বুঝে
নাও। আনিস আমার ঘরে বহু হয়ে আার যোগ্য। বটে। তার রূপ-
যৌবন, 'ও মা-1 গুৎ রয়েছে যা তোমার ভবিষ্যৎ জীবনকে মধুময়
করে তুলতে সক্ষম হবে। তোমার সঙ্গে তার শাদী দেয়ার পরিকল্পনা
আমি ও তোমার আম্মা ইতিমধ্যেই করে ফেলেছি। তবে আমার
বিশেষ নির্দেশ থাকবে শাদীর পর কিন্তু আমি আর তোমার
কোনরকম বয়েসকে বরদাস্ত বলব না। তোমর বর্তমানের ২৩
বেলেল্লাপন। সব ছেড়েছুড়ে মনকে ধংমুখী করতেই হবে।'
নব তর অন্ধর কথায় সম্মতি দেয়।
উজির হল ফাদল-এর প্রাসাদে শব্দীর রোশনাই। মহাধুমধাম
করে তিনি লেড়কার শাদী বিরোন।
এদিকে উত্তির ফল দশ হাজার দিনার দিয়ে অন্য ৬০টি
ধুবসুরৎ দেড়কি হাট থেকে খরিদ করে নিলেন। তাকে মূলস্তানের
প্রাসাদে পৌঁছে দিয়ে এলেন
■
কুচক্রী উক্তির মইন তলে তলে গব খার সংগ্রহ করে
ফেলেন। কিন্তু তিনি মুখে কুলুপ এঁটে বইলে উপযুক্ত সুযোগের
■ প্রত্যাশায় প্রহর গুণতে লাগলেন তিনি ভালই জানে, উজির ফাদা
বর্তমানে সুলতানের সুনঞ্জলে রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কিছু হলে
সুলতানের কান ভারী করতে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে নিম্নের পায়ে
নিজেই কুড়ুল মার। অতবে সুযোগ চাই। উপত হোগের জন্য
= তেই হবে।
=
সুযোগ সন্ধানী উজির মইন-এর হাতে সুযোগ এসতে বেশী
দেবী হ’ল না। অল ফাদা কঠিন বিারিতে পড়লেন। শয্যাশায়ী।
মাত্র দু' দিন টিকেছিলেন। তারপরই বোহোত্তর পথে পা বাড়ালেন।
শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগে লেকাকে কাছে ডাকলেন। তার
1 গায়ে-মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন – 'বেট', আমার বেহেস্তের ডাক
এসেছে। এবার দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতেই হবে। অম্লাহর ৫%
|
• ভরসা রেখে চলবে। আর একটি কথা, অনিস বহুত অচ্ছ' লেড়কি
I রূপ-যৌবন ছাড়া অগাধ বিদ্যা বৃদ্ধির অধিকারিণীয় কট। উপার
পথে সমস্যার মুখোমুখি হলে তার বুদ্ধিকে কাজে লাগাতে ভুল
কোরো না যেন। নসীবতে মেনে চলবে। আল্লাহর ওপর আস্থ
বেখে দিন গুজরান করবে।'
সুলতানের উৎিস হল-ফারণে দেহরক্ষা করেছেন। বসরাহ,
নগরীতে শোকের ছায়া নেমে এল। নূর আড়ম্বরের সঙ্গে আব্বার
শেষ কৃত্য সম্পন্ন করল। তার বিবি আনিস সর্বদা তার কাছাকাছি
পাশাপাশি থেকে সব কাজ যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় সে ব্যবস্থা
করল।
আব্বার মৃত্যুর পর নূর-এর মধ্যে আশাতীত পরিবর্তন লক্ষিত
হ'ল। খানাপিনা ধরতে গেলে তার উঠেই গেছে।
এক সকালে নূর তার ঘরে বসে আব্বার স্মৃতিচারণে মগ্ন। এমন
সময় দরওয়াজার কড়া নাড়ার শব্দ তার কানে এল। দরওয়াজা
খুলতেই তার সমবয়সী এক নওজোয়ান ঘরে ঢুকে এল। তার বাবার
দোস্তের লেড়কা। সে সমবেদনা প্রকাশ করতে গিয়ে নূরকে।
বল—‘দোও, এমন করে ভেঙে পড়লে কি করে চলবে বল
দেখি? দুনিয়ায় কেউ-ই চিরদিন থাকে না। দেনা-পাওনা মিটিয়ে
দিয়ে আজ না হোক কাল সবাইকে দুনিয়া ছেড়ে যেতে হবে। শোক
না করে বরং একে স্বাভাবিক বলেই মেনে নেওয়া উচিত।'
নূর কিন্তু সব বুঝেও যেন কিছুই বোঝে না। সে আব্বাকে
কিছুতেই ভুলতে পারে না। তার দোস্ত এবার বল—'ভূমি বরং এক
কাজ কর, সব ইয়ার দোস্তদের একদিন ডেকে খানাপিনা করাও।
এতে শোক তাপ কিছুটা কেটে গিয়ে দিল হাল্কা হতে পারে।'
নূর ভাবল, পরামর্শটি মন্দ নয়। এতে সবার সঙ্গে মোলাকাতও
হবে। হাসি-মস্করার মধ্যে মনের তাপ-জ্বালা হাল্কা হতে পারে। আলি
তাই মনস্থ করল।
জিগরী দোস্তের পরামর্শে আলী নূর সেদিন সন্ধ্যাতেই ইয়ার
দোহ্রদের নিমন্ত্রণ করল।
নূর-এর নির্দেশে পরিচারক-পরিচারিকারা বাড়িটিকে সুন্দর
করে সাজাল। প্রত্যেকটি কামরাকে সাজিয়ে গুছিয়ে এমন করে
তোলা হ’ল যেন কোন উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।
সন্ধ্যা হতে না হতেই ইয়ার দোস্তরা এক এক করে নূর-এর
বৈঠকখানায় জড়ো হতে লাগল। অনেক রাত্রি পর্যন্ত চল্ল নাচা-
গানা হৈ হুল্লোড় আর খানাপিনা। জিপেপীকে আজ যেন সে নতুন
করে উপভোগ করল।
আলী নূর আগেকার সে হাসি-আনন্দময় জীবন ফিন ফিরে
পেল। এবার থেকে প্রায় প্রতি রাত্রেই সে পালা করে সওদাগর ইয়ার
দোক্ত ও আমীর ওমরাহদের নিমন্ত্রণ করে নিজের বাড়ি আনতে
লাগল। গভীর রাত্রি পর্যন্ত চলে খানাপিনা, নাচা-গানা আর হৈ
হুল্লোড়।
আনিস-এর কিন্তু প্রথম থেকেই স্বামীর এসব কাজে আপত্তি
ছিল। তার যুক্তি আমীর-বাদশাহদেরই এসব মানায়। তার পক্ষে
অবশ্যই নয়। তাই এসব বন্ধ করতে পরামর্শ দিল। নইলে অচিরেই
পথের ভিখারী বনে যেতে হবে এরকম কথাও সে বলতে ভোলে নি।
নূর কিন্তু তার কথা হেসে উড়িয়ে দেয়। সে বরং বলে আমি
উজিরের বেটা, এসব একটু-আধটু না করলে ইজ্জত থাকবে কেন?
আর সমাজে মান-ইজ্জতই যদি না থাকে তবে দুনিয়ায় থাকা আর
না থাকা দু’-ই সমান । আর অমীর-ওমরাহদের হাতে রাখলে ব্যবসা-
বাণিজ্যে নিজেকে লিপ্ত করে আয়-উপার্জন কোন ব্যাপারই নয়।
কিছুদিনের মধ্যেই তার বিবি আনিস-এর কথাই বাস্তব রূপ
নিল। নূর-এর জেব ফাঁকা। ইয়ার দোস্তদের নিয়ে মজলিস বসানো
তো দূরের কথা তার এখন নিজের সংসারই অচল হয়ে পড়ল। কিন্তু
ইয়ার দোস্তদের ঢেউ বন্ধ হ’ল না। তারা রোজ সন্ধ্যা হতে না হতে
তার বাড়ির বৈঠকখানায় এসে জড়ো হতে থাকে। সে উপায়ান্তর
না দেখে একদিন দোস্তদের কাছে নিজের আর্থিক পরিস্থিতির কথা
বলে। পরামর্শ চায় কি করে অর্থোপার্জন করে সংসারের দুরবস্থা
ফেরাতে পারবে।
নূর-এর দোস্তরা সবাই একথা-সেকথা বলে কেটে পড়ে।
ইয়ার-দোস্তরা বিদায় নিলে তার বিবি আনিস সে-ঘরে এল। সে
দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে এতক্ষণ সবই শুনছিল। এবার স্বামীর
গায়ে মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বল্ল--- এখন আর ভেবে
দিল্কে কষ্ট দিয়ে লাভ কি। এ যে ঘটবে আমি তো আগেই বহুবার
তোমাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলাম। দুনিয়ার নিয়মই তো এ-ই।
দুর্দিনে কোন দোস্তকেই কাছে পাবে না।'
নূর বলে—'এরা মুখ ঘুরিয়ে বলে গেলেও আমার সব দোস্তরা
অবশ্যই এরকম আচরণ করবে না। কোন কোন দোস্ত আছে যারা
আমার জন্য জ্ঞান কবুল করতেও কসুর করবে না।'
—'শোন, তোমার নব দোস্তকে আমি দেখি দিৗ ঘটে ! তাদের
চরিত্র সম্বন্ধেও আমি অস্ত্র। কিন্তু আমার বিশ্বাস, আড্ডজ এ দুঃসময়ে
সবার কাছ থেকেই একই আচরণ পাবে।'
নূর আর কথা বাড়াপনা। তখনকার মত প্রসঙ্গটি সেখানেই চাপা
পড়ে রইল।
পরদিন কাক-ডাকা সকালে আলী নূর এক দোস্তের ঘরে গেল।
নিগ্রো দাসীকে নিয়ে খবর পাঠায়। বেশ কিছুক্ষণ বাদে সে ফিরে
এসে গম্ভীর মুখে বল্ল – মনিব বলেন, তিনি বাড়ি নেই।'
নূর আশাহত নিহ্ নিয়ে অন্য আর এক দোস্তের বাড়ি গেল।
তার কাছ থেকেও একই রকম আচরণ পেল। একের পর এক করে
সদর দশজন লোকের দরজায় দরজায় সে ছুঁড়ে বেড়ল। পাণ্ঠিস্হাতেই
সবার কাছ থেকে ফিরতে হ’ল। কিন্তু এদিকে তার ঘরে একটিও
কানা নেই। দুপুরে হাঁড়ি চাপানো সংস্থান পর্যন্ত নেই। এখন উপায়?
খালি হাতে সে বিবির সামনে গিয়ে কোন্ মুখে দাঁড়াবে।
আলী নূর পরে ফিরলে আর্নিস স্নান হেসে বল্ কি,
তোমাকে আমি বলিনি, দোস্তদের কাছ থেকে কেমন আচরণ ভূমি
পেতে পার?' চাপ: দীর্ঘশ্বাস ফেলে এবার সে বল— দামী ও
অপ্রয়োজনীর অংসবাবপত্র যা আছে কিছু কিছু বেচে দাও' নূর
কাজেও তা-ই। কিন্তু বসে খেলে বাদশার ধন দৌলতও দু'দিনে
ফুরিয়ে যেতে বাধ্য।
নুর গুর্থোপার্জনের কোন ফিটিং করতে না পেরে একদিন
চোখের পানি ঝরাতে থাকে। আনিস সেখানে হাজির হয়। স্বামীর
গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে।–পুরুষ মানুষকে কাঁদতে নেই।
এতে তো অনান্যদের একচেটিয়া অধিকার। তুমি তো জানই আমর
রূপের জৌলুষ দেশে তোমার আব্বাভী একদিন আমাকে দশ
হাজার সোনার দিনার দিয়ে কিনেছিলেন। আমি মনে করি এখন তার
| চেয়ে খুব কম দাম পাবে না। সে অর্থ দিয়ে বাণিজ্য কর। দুধ দিতে
তোমার হালৎ ফিরে যাবে। অগুসদের পেয়ার মহব্বতে কোনদিনই
নাটতি হবে না। আল্লাহ দোয়া থাকলে আমরা একদিন না একদিন
আবার মিলিত হবই
बমী নুর বিধির কথায় সচকিত হয়ে ওঠে। তাকে দু' হাতে
জড়িয়ে ধরে বলে—–“তা হয় না মেহবুবা। তোমাকে হারিয়ে জান
বাঁচবে না আমার। শান্তির তাগিদে আমাকে জান দিতে হবে।'
আনিস তবু একই কথার পুনরাবৃত্তি করতে থাকে।
শেষ পর্যন্ত অনন্যোপায় হয়েই নূর তার কলিতা তানিসকে
বাজারে নিয়ে গেল। ক্রীতদাসীদের সারিতে দাঁড় করিয়ে দিল।
বসরাহ-র ক্রীতদাসীর বাজার তামাম দুনিয়ার মধ্যে সেরা। দুনিয়ার
বাদশাহ সুলতান, উজির আর অমিররা এখন থেকে তাদের মন
পছন্দ ক্রীতদাসী কিনে নিয়ে গিয়ে তাদের রূপ-যৌবন ভোগের
মাধ্যমে জিন্দেগী সার্থক করে তোলে। এখান থেকেই আনিস
উদ্ভিরের বাড়ি যায়। তার লেড়কা নূর-এর কণ্ঠলগ্না হয়। আবার
একই উদ্দেশ্যে, তাকে এসে বসরাহ-র বাজারে ক্রীতদাসীদের
সারিতে আজ দাঁড়াতে হয়। একেই বলে নসীব। খোদাতাল্লার মর্জি।
কিছুক্ষণের মধ্যেই সে-দালললটি সেখানে হাজির হয়। আনিস’কৈ
দেখেই চিনতে পারে। মুখে বিশ্বয়ের ছাপ এঁকে সে নূরকে
বলে—'হুজুর, আপনি একে পেলেন কোথায়? উজির সাহেব তো
একে সুলতানের বাঁদী করার জন্য আমারই কাছ থেকে খরিদ
করেছিলেন। দাম পেয়েছিলাম পুরো দশ হাজার দিনার। কিন্তু হাত
বদলে এ আপনার হাতে এল কি করে?
(20000
নূর অতর্কিতে তার মুখ চেপে ধরে অনুচ্চ কণ্ঠে বলে—আরে
করছ কি ভাইয়া! এর নাম আনিস-ই বটে। কিন্তু সুলতান যে বাঁদী
করার জন্য কিনেছিলেন কারো কাছে ফাঁস কোরো না। তোমাকে
আসল ঘটনা খুলে বলছি, আমার শত্রুর অভাব নেই। কাছে এসো
আমাদের গোপনে সব কাজ সারতে হবে। আজ আমার দিন গুজরান
করাই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোন ফন্দি ফিকির করতে না পেরেই
তো একে বাজারে এনে দাঁড় করিয়েছি। এ আমার কলিজার সমান,
আশা করি অনুমান করতে পারছ।'
পাগলটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে— হুজুর, সবই খোদাতাল্লার
মর্জি। সবই পঙ্গীর। নসীবকে এড়াবেন সাখ কি? আপনি এ নিয়ে
ভাববেন না। আমি সবচেয়ে বেশী শুমে একেবচার বন্দ্যেক্ত করে
দিচ্ছি। আাপনি মুখ বুজে থাকবেন দাম দস্তুর যা করার আমিই
করছি।
দালঞ্চটি এবার অনিস কে পছন্দমত এক জায়গায় দাঁড় করিয়ে
পলা ছেড়ে তার গুণগান করতে থাকে। বেহেরে ধনী ভামাগ
দুনিয়া ছুঁড়েও এমন আর একটি লেল্ডলি মিলবে না। এর শরীরে
যেমন রাপের বাহার তেমনি বহুগুণে গুণর্থিতাও ঘটে। একমাত্র
জহুরাই ভূতন চিনতে পারে। সহপ করার মত নজর থাকা চাই
সবদার আসমী ছাড়া তার কদর বুঝবে না। এমন আরও বহু কথা
বলে দালালটি চিক্কাতে শৃগল।
-দালালটির কথার মঞ্চে গিয়ে এক বণিক এগিয়ে এক বেরহরে
নাকারটি তুলে দেখল। প্রথম দর্শনেই তার দিল মাজে গেল বাস,
হেঁকে বসল চার হাজার সোনার মোহর। দালালের মন ভরল না।
সুলতাফর উজির মইন উখন বাজারে ক্রীতদাসী পছন্দ করে
বেড়াচ্ছেন। ইটিতে ইটিতে আনিগ-এর কাছে এলেন।
উজির মইন’কে দেখেই দালালটি নতজানু হয়ে কুর্নিশ করল।
মইন বললেন—'এ ক্রীতদাসীটিকে আমি খরিদ করতে চাই। দাম
—'হুল্লুর, এক বণিক চন্দ্র হাজার সোনার নিনার দাম হেঁকেছে।
আপনি এবার মেহেরবানি করে বলুন, কি নাম দেবো?
—আমি সাড়ে চার হাজার সোনার দিনার দিচ্ছি।'
অানিস সেদিনের সেরা ক্রীতদাসী। ঠিক মত নিলাম হলে চড়
চড় করে দাম উঠত। কিন্তু বদমেজাজী উজির মইন এর ভয়ে কেউ
আর দাম হাঁকতে কোশিস করল না, সাহস পেল না।
উজির মইন এবার বলেন— 'আার কোন কথা নয়। পুরো
সাড়ে চার হাজার সোনার মোহরই পাবি। ক্রীতদাসীটিকে আমার
ওখানে পৌঁছে দিয়ে অ্যা
আলী নূর কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে সবই শুনল। মাত্র সাড়ে
চার হাজার সোনার দিনার দাম শুনে তার বিরু মোচড় দিয়ে ওঠে।
দালালটি বোঝায়——'হমুর, আপনার বিবির ওপর শকুনের নজর
পড়েছে। নেকড়ের মত একবার বখন নারটি এর দিকে থা
বড়িয়েছে তখন এর বেশী দাম ও দেবে না। আবার খরিদ না কবে
হতাশ হয়েও ফিরবে না। সে আত্নার আব্বাজীর সঙ্গে সিন্দেগী
ভর শত্রুতা করে গেছে। তার কোনই ক্ষতি করতে পারেন নি। আজ
তিনি বেহেস্তে। আর শয়তান মইন সুলতানের দরবারে সর্বেনবী
হয়ে উঠেছেন। দুনিয়াকে সরা জ্ঞান করছেন। তাঁর সঙ্গে আপনারা
বিবাদ সাতে পারেন বটে, কিন্তু আমি নাচার হুজুর। হেরফের কিছু
করতে গেলে আমার ধড় থেকে গর্শন নামিয়ে দেবে।'
নূর হতাশার স্বরে বলে—তবে এখন উপায়? যদি উচিত দামই
না পেলাম, বেঁচে থাকার মত ফিকিরই যদি নাই হয় তবে আর আমার
| বিবি, আমার কলিজাকে অন্যের হাতে তুলে দিতে যাব কেন?'
—দর দপ্তর হয়ে গেছে। এখন আর কিছু করার নেই। বেফাস
কিছু করতে গেলে উজির মইন আমাকে জানে খতম করে দেবে।
মুহূর্তকাল ভেবে দালালটি এবার বল—'হুজুর, একটি ফন্দি করা
যেতে পারে। আমি যখন একে নিয়ে উজিরের বাড়ির দিকে যেতে
থাকব তখন আপনি ছুটে গিয়ে খপ্ করে এর হাত চেপে ধরবেন।
বল্বেন—'হতচ্ছাড়ি, চল্লি কোথায়? তুই কি ভেবেছিস, আমি
সত্যিই তোকে বেচে দেয়ার জন্য বাজারে নিয়ে এসেছি! আর যাতে
ঝগড়া, খিটমিট না করিস, আমার ওপরে হাত না চালাস সে জন্যই
একটু ভয় ডর দেখাতে এনেছিলাম। আর কোনদিন যদি বে-ফাঁস
কিছু করিস তবে কিন্তু সত্যি সত্যি বাজারে বেচে দিয়ে যাব। খুব
হয়েছে, এখন বাড়ি চল—এমন সব কথা বলবেন হুজুর।'
নূর বলল ---- জব্বর ফন্দি বাৎলেছ দোস্ত! ঠিক আছে, তোমার
কায়দা কৌশলকেই কাজে লাগাব।'
দালালটি আনিসকে নিয়ে উজির মইন-এর বাড়ির দিকে সবে
দু' পা এগিয়েছে অমনি নূর ছুটতে ছুটতে গিয়ে তার গালে আলতো
করে এক চড় বসিয়ে দিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বল
‘হারামজাদী! বজ্জাত মাগী কাহাকার! চলেছিস কোথায় শুনি?
কিলিয়ে মেরুদণ্ড ভেঙে দেব বলে দিচ্ছি! জিন্দেগী ভর অনেক
জ্বালিয়েছিস, হাড্ডি পোড়া পোড়া করে ছেড়েছিস। আর যদি
কোনদিন বেলাল্লাপনা করিস তবে সত্যি সত্যি তোকে বাজারে বেচে
দিয়ে যাব। আজ তোর গোস্তাকী মায্য করে দিচ্ছি বটে। ভবিষ্যতে
এরকম হলে তোর নসীব সত্যি সত্যি এ বাজারে নিয়ে আসবে, মনে
রাখবি।' কথা বলতে বলতে নূর আনিস’কে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যেতে
থাকে।
ব্যাপার দেখে মইন এগিয়ে এসে ধমকের স্বরে বলে—“আরে,
এ হচ্ছে কী! একে নিয়ে কোথায় চল্লে হে? আমি সাড়ে চার
হাজার সোনার দিনারের বিনিময়ে একে খরিদ করে নিয়েছি।'
--ঘরের বিবিকে বাজারে বেচতে হবে এরকম হালৎ এখনও
হয় নি আমার।'
—'বকবকানি রাখ বাছাধন। তোমার সংসারের হালতের কথা
আমার আর জানতে বাকী নেই। হাড়িতে ছুঁচো ডিগবাজী খাচ্ছে।
দিন গুজরান করাই তোমার এখন দায়। যাক, হুজ্জতি বাঁধাবার
কোসিস না করে মানে মানে এখান থেকে কেটে পড়। আমি সাড়ে
চার হাজার সোনার দিনার দিয়ে খরিদ করেছি। একে আমার ঘরেই
নিয়ে যাব।' কথা বলতে বলতে তিনি আনিস-এর দিকে হাত বাড়ান।
আলী নূর তাঁর হাতটি চেপে ধরে বলে—'ঝামেলা করবেন না।
শুধুহাতেই বাড়ি ফিরে যান, বলে দিচ্ছি।'
ব্যস, শুরু হয়ে গেল হাতাহাতি ধস্তাধস্তি। উজির আর উজিরের
লেডকার বিবাদ। এর মধ্যে বাজারের সাধারণ আদমীরা নাক গলাতে
চাইল না। তারা বিপদ এড়াতে মানে মানে সরে পড়ল সেখান থেকে।
এদিকে যুবক নূর-এর সঙ্গে বৃদ্ধ উজির হাতাহাতি করে টিকতে
পারবেন কেন। ভবিষ্যতের কথা না ভেবেই সে উড়িকে সমানে
কিল-চড়-লাথি মারতে লাগল।
কিছুক্ষণের মধ্যেই উজির পথের ওপর পড়ে যায়। সংজ্ঞা
000
হারিয়ে এলিয়ে পড়ে। নূর এবার শান্ত হ’ল। সে বিধি আনিসকে নিয়ে
ঘরের দিকে ইটি! জুড়ল।
কিছুক্ষণ পড়ে থাকার পর উজির মইন সংজ্ঞা ফিরে পান। উঠে
বসেন। কামিজ, পাতলুন ছিঁড়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। হাত-
পাও ছড়ে গেছে কয়েক জায়গায়। খুন ঝরছে। উঠে গা থেকে ধুলো
ঝাড়লেন, কোনরকমে ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে সুলতানের দরবারে
হাজির হলেন।
সুলতান মহম্মদ ইবন সুলেমান-এর গোড় দুটো চেপে ধরে
উজির মইন কাঁদতে কাঁদতে বললেন—'জাঁহাপনা, আমি আপনার
উজির। কামার পয়ে হাত তোলার অর্থ হচ্ছে, আপনার ইজ্জৎ নষ্ট
কর'। 'আপনি আলী নূর কে সিপাহী পাঠিয়ে পিঠ মোড়া করে বেধে
দরবারে হাঞ্জির করুন। বিচার করে উচিত শক্তি দিন। নইলে সে
কিন্তু আপনার মুসে শত্রুতা করতেও পিছ পা হবে না।'
সুলতান উক্তির মইন-এর মুখে সব কিছু শুনে হঠাৎ এরকম
ঘটনার কারণ জানতে চাইলেন।
উক্তির মইন আসল ঘটনার সঙ্গে সাধ্যমন্ত্ হাদ মিশিয়ে
সুলতানের কাছে পেশ করলেন। তিনি চোখের পানি মুছতে মুছতে
রসালোন—'পৗঁহাপনা, আমি ক্রীতদাসীর বাজারে গিয়েছিলাম
বেহেস্তের স্ত্রী গেলে আপনার জন্য খরিদ করে আনব অপনাকে
ভেট নেব। হঠাৎ এক গৃহসুরৎ লেড়কি দেখেই দিলটি দুর্বল হয়ে
পড়ল। নাকার ফরিয়েই চিনতে পারি। অপনার হয়ত স্মরণ আছে,
একবার উজির অল-ফাদলকে দশ হাজার সেনাব মোহর দিয়ে এক
ক্রীতদাস খরিদ করার জন্য হুকুম দিয়েছিলেন।
নূধরৎ
লেড়কিকে তিনি তখন খরিদ করে আনেন। তাহলম আরব দুনিয়া
কুঁড়ে এলেও এমন দ্বিতীয় শ্রাব একটি পেড়কি মিলবে না উক্তির
গল-হাদল কিন্তু গেম্কিটিকে আপনার জন্য খরিদ করলেও
আপনাকে না দিয়ে গোপনে ভঁর প্রাসাদে রেখে দিলেন। অন্য একটি
ক্রীতদাসী মারদ করে আপনাকে ভরিয়ে দেন। তারপর একে তার
বেটা নূরের সঙ্গে শাদী দেয়। এখন অভাবের দায়ে নূর একে বেচার
মাঞ্জাবে না। নিলাম হয়, পড়ে চার হাজার সোনার দিনার
দাম হেঁকে আমি হরি করে নেই। জাঁহাপনা, আপনাকে ভেট
দেওয়ার জন্যই আমি খরিদ করেছিলাম তমাম অরব দুনিয়ার
সবচেয়ে সুরৎ পেড়ফিটিকে। শেষমেষ আলাঁ দুর বেগড়া বাঁধায়।
মত পাল্টে বলে কিনা কেরে না। আমাকে বিক্রি শেউড্ করে। সে
বলতে চায় প্রয়োজনে কোন খ্রীস্টান বা ইহার কাছে সস্তাদামে তার
বিবিকে বেচতে রাজি লেবিন সুলতানকে এক লাখ দিনারের
বিনিময়েও দেবে না। আমি পীড়াপীড়ি করলে সে রেগেমেগে
বলে—আপনি নাকি বুড্ডা। গোলে যাবার সময় হয়েছে। এরকম
জাদমির সঙ্গে তার বিবির কদর দেওয়া সম্ভব নয়। জাঁহাপনা, আমার
একটি মাত্র কসুর ছিল আমি প্রতিবাদ করেছিলাম, সুলতনা,ক
এরকম অকথ্য ভাষায় কথা বলা সঙ্গত নয়। বস, আর যাবে
কোথায় আলী নূর গুলি খাওয়া শেরের মত আমার ওপর ঝাপিয়ে
পড়ল হেঁচকা টানে খচ্চরের পিঠ থেকে ফেলে দিয়ে সমানে কিল-
চড়-লাপি মারতে থাকে। আমি বুড্ডা হয়েছি। তার ওপর সুলতানের
উজির। পথের মাঝে মারদাঙ্ক করতে গেলে আমারই ইম্ফং যাবে।
ভাই ম'র খেয়েও বদলা নেয়ার কোলিস থেকে বিরত থাকলাম। সে
আরত সুযোগ পেয়ে গেল। পিটতে পিটতে আমাকে বেইস অবস্থায়
ফেলে রেখে চলেড়কিটিকে নিয়ে ভেগে গেল, আর আমার অবস্থা
ভো দেখছেনই।'
সুলতান মুহূর্তকাল নীরবে কাটিয়ে মুখ খুললেন—
'আপনার
সঙ্গে দেহরক্ষী হিল না? তারা কি দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছিল?’
"ছিল কাঁছাপনা। আমি উজির বটে। আবার আলী নুরও তো
উজিরের বেটা। তার গাড়িরও তো আপনার সুলতানিয়তে কম
ফাইড়া কে না জানে জাহাপনা সে এক সময় নামকরা এক হক্কান
ছিল। এসব কথা বিবেচনা করে তারা নীরব দর্শক হয়েই দাঁড়িয়ে
রইল।'
নয়।
—'এক কাজ করুন। চল্লিশগুন সিপাহী পাঠিয়ে দিন আলী
নূরকে বন্দী করে দরবারে হাজির করবে। আর তার বিলকুল সম্পত্তি
াজেয়াপ্ত বলে ঘোষণা করে দিন। আর সে খুবসুরৎ পেড়ভিটিকেও
যেন দরবারে নিয়ে আসে।'
উক্তির মইন-এর মুখে শয়তানের হাসি ফুটে উঠয়ে সে যা
চেয়েছিল পেলও তা-ই।
এদিকে সুলতানের দরবারের এক নওজোয়ান পরিষদ
সুলতানের কুমটি শেনমাত্র ইতিমধ্যেই সবার চোখের আড়াজে =
| দরবার ছেড়ে যায়। আলীপুর এর আব্বা একে খুব পিয়ার করতেন।
আলী নূর-এর জিগরী দোস্তও ঘটে।
ইতিমধ্যে, আলী নূর-এর বেগম, ঘটনার নায়িকা অর্লিস উক্তির
মইন-এর ব্যাপারটি নিয়ে বড়ই দুর্ভাবনায় পড়েছে। ঘটনাটি সে
ওখনেই মিটে যায় নি, ভয়ঙ্কর পরিণতি হতে পারে নূরকে
হোঝাতে শৃগল।
এমন সময় সে-নওজোয়ান পারিষদটি ছুটতে ছুটতে গিয়ে আলী
নূর-এর বড়ির কড়া নাড়ল।
দরওয়াজার কড়া নাড়ার অওয়াজ পেয়ে নূর দরওয়াজা খুলতে
এগোয় ! আনিস আতঙ্কিত হয়ে বলে—আমার মন বলছে সুলতানের
ফৌজ তোমাকে ধরে নিয়ে যেতে এলেছে! তুমি পিছনের দরওয়াজা
দিয়ে পালাও।' নূর পাত্তা দেয় না।
শেষ পর্যন্ত আনিস নূরকে ভেতরের দিকে পাঠিয়ে দিয়ে নিজেই
| দরওয়াজা খুলতে চায়। নূর রাজি হয়।
আনিস দরওয়াজা খুলে দেখে নূর এরই জিগরি দোস্ত।
আগন্তুক নওজোয়ানটি বলল—
'সুলতান আপনাদের নামে
গ্রেপ্তারী পরোয়ানা দিয়ে সিপাহী পঠাচ্ছেন। যত শীঘ্র সম্ভব এখন
থেকে ভেগে যান। এই নিন চল্লিশ দিনস। এ দিয়ে যতদূর সম্ভব
চলে যান। শয়তান মইন নিজে সিপাহীদের সড়ে রয়েছেন। শীঘ্র
ভেগে যান।'
Med s
আর এক মুহূর্তও দেবী নয়। নূর তার বিবি আনিসকে নিয়ে
পিছনের দরওয়াজা দিয়ে পথে নামল। পলি ঘুপস্থি দিয়ে বসরাহ
বন্দরে হাজির হ'ল।
নূর তার বিবিকে নিয়ে বাগদাদগামী জাহাজে চেপে বসল।
এদিকে উল্লসিত উজির মইন সিপাহী নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে উজির অল-
ফাদল-এর বাড়ি এসে মুষড়ে পড়লেন। দেখেন চিড়িয়া ভাগ গিয়া ।
রাগে-দুঃখে-অপমানে তিনি ক্ষেপা কুত্তার মত হয়ে গেলেন,
বাজখাই গলায় সিপাহীদের হুকুম দিলেন— 'যাও, তামাম বসরাহ
নগর ঘিরে ফেল। জোর তল্লাসী চালাও। যেখানে থাকে, পাতালে
লুকিয়ে থাকলেও আমি তাকে চাই। সিপাহীরা চিরুনি-তল্লাসী
চালাল কিন্তু আলী নূর বা তার বিবি কারোরই হদিস পেল না। কাজ
যা হ’ল তা হচ্ছে তামাম বসরাহ তোলপাড় করে কিছু নিরীহ-
নিরপরাধ আদমীকে বন্দী করে নিয়ে গিয়ে চাবুক চালিয়ে সিপাহীরা
কর্তব্য পালন করল।
এ পর্যন্ত বলার পর বেগম শাহরা জাদ দেখলেন ভোরের
আলো উঁকি দিচ্ছে। তিনি কিস্সা বন্ধ করলেন।
চৌত্রিশতম রজনী
রাত্রি একটু গভীর হতেই বাদশাহ শারিয়ার অন্দরমহলে
বেগমের কামরায় এলেন।
বেগম শাহরাজাদ কিস্সার পরবর্তী অংশ শুরু করতে গিয়ে
বল্লেন—জাঁহাপনা, সুলতানের সিপাহীরা যখন শিকার না পেয়ে
ব্যাজার মুখে উজির মইন-এর সামনে হাজির হ’ল তখন আলী নূর
তার বিবিকে নিয়ে জাহাজে বসে দোল খাচ্ছে।
উজির মইন বিষণ্ণ মনে সুলতানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন।
নিতান্ত অপরাধীর মত হাত কচলে নিবেদন করলেন---'জাঁহাপনা,
| শিকার ভাগ গিয়া। তামাম বসরাহ নগরে চিরুনি তল্লাসী চালালাম।
আলী নূর বা তার বিবি খুবসুরৎ সে-লেড়কির কোন হদিসই মিল্ল
সুলতান গুলিখাওয়া শেরের মত গর্জে উঠলেন—"অপদার্থ
নিষ্কর্মার ঢেকী কাহাকার। নগরীর সব প্রবেশ দ্বার বন্ধ করে দিয়ে
তল্লাসী চালাও। হুলিয়া জারি কর, যে হদিস দিতে পারবে তাকে এক
হাজার সোনার দিনার বকশিস দেওয়া হবে।'
হায় মূর্খের দল। কে হদিস দেবে? বকশিসই বা নেবে কে?
যাদের জন্য এত তোড়জোড় তারা যে ইতিমধ্যেই বাগদাদ নগরে
পৌঁছে গেছে।
বিদায়ী সূর্য শেষ রক্তিম আভাটুকু আশমানের গায়ে ছড়িয়ে
দিয়ে বিদায় নেবার জন্য তৈরি। বাগদাদ বন্দরে নেমে এল আধা-
আলে! আর আধো-আন্ধার। ঠিক এমনই এক মুহূর্তে আলী নূর তার
বেগম আনিস-এর হাত ধরে বাগদাদ বন্দর থেকে বেরিয়ে নগরে
প্রবেশ করল। অ্যানা-অচেনা নগর। হারা উদ্দেশ্যে ইটিতে ইটিতে
তারা একটি বাগিচার কাছে এসে দাঁড়াল। উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা
বাগিচাটি। পাশেই একটি দরওয়াজা পেয়ে তারা ভেতরে ঢুকে
গেল। খুবই সুন্দর বাগিচা।
নির্জন-নিরালা বাগিচায় নূর তার বিবি আনিস’কে নিয়ে রাত্রি
কাটাল। বাগিচার মালিক কে তাদের জানা নেই।
পাখির ডাকে সকাল হ’ল। নূর এবার আনিসকে নিয়ে বাগিচাটি
ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগল। সামান্য এগিয়েই মালীর দেখা পেয়ে
গেল। তার নাম 'ইবরাহিম। বুড়ো। যৌবনে পা দিয়েই বাগিচাটির
তদারকির কাজ নেয়। আর এর মালিক স্বয়ং বাগদাদের খলিফা
হারুণ-অল-রসিদ। তাঁর অবসর বিনোদনের কেন্দ্র এটি। দিনের
শেষে অবসাদগ্রস্ত দেহে তিনি মাঝে মধ্যে এখানে আসেন। মুক্ত
বাতাস আর ফুলের খুসবুতে কিছু সময় অবস্থান করে শরীর ও
মনকে চাঙা করে তোলেন। বাগিচাটির কেন্দ্রস্থলে একটি সুরম্য
প্রাসাদ। পয়তাল্লিশটি জানালা দিয়ে সুগন্ধি বাতাস প্রসাদটিতে
যাতায়াত করে। সোনার চিরাগবাতি অন্ধকার দূর করার কাজে
ব্যবহৃত হয়। এরকম এক শান্ত-সৌম্য পরিবেশে কখন সখন গানের ব
মজলিসও বসে। দুনিয়ার সেরা ওস্তাদ পাইয়ে ইশাকও মাঝে মধ্যে ে
খলিফাকে তাঁর মিষ্টি-মধুর কন্ঠের গান শুনিয়ে যান।
C
নূর আর আনিসকে দেখে বুড়ো মালী তার নিস্তেজ চোখের মণি
দুটোতে বিস্ময়ের ছাপ এঁকে তাকায়। খলিফার বাগিচায় সাধারণের
প্রবেশাধিকার নেই। দরওয়াজার কাছে ফলকের গায়ে একথা
স্পষ্টাক্ষরে লেখা কিন্তু এরা ঢুকল কোন্ সাহসে? কলিজার জোর
আছে বলতেই হয়।
বুড়ো মালী ইবরাহিম রাগে ফুলতে ফুলতে তাদের দিকে এগিয়ে
যায়। কিন্তু কাছাকাছি যেতেই সে যেন কেমন নিস্তেজ হয়ে পড়ল।
আদতে কাছে গিয়ে তাদের চেহারা ছবি দেখে সে সচকিত হয়ে
পড়ল। ভাবল এরা নিশ্চয়ই ভিন্দেশীয়। এ বাগিচার ব্যাপার-
স্যাপার জানে না। আর নির্ঘাৎ কোন বাদশাহ বা সুলতানের, নিদেন
পক্ষে কোন উজিরের লেড়কা-লেড়কি। পথশ্রমে ক্লান্ত হয়ে সামনে
বাগিচা পেয়ে ঢুকে পড়েছে।
বুড়ো মালী ইবরাহিম বিস্ময়-বিস্ফারিত চোখে নূর আর আনিস-
এর দিকে তাকিয়ে বল্ল – তোমরা কে পা? তোমাদের ঘর
কোথায়? ভিনদেশী মুসাফির নাকি?'
আলী নূর ভয়ে ভয়ে জবাব দেয়—'আপনার অনুমান অভ্রান্ত
বটে। আমরা ভিন্দেশীয় মুসাফির। রাত্রে কোথাও আশ্রয় না পেয়ে
বাগিচায় ঢুকে পড়েছিলাম। গোস্তাকি মাফ করবেন। আমরা এখনই
বেরিয়ে যাচ্ছি।' কথা ক'টি বলেই সে আনিসকে নিয়ে বেরোবার
উদ্যোগ নেয়।
বুড়ো মালী তাদের পথ আগলে দাঁড়ায়। সস্নেহে বলো—সে
কী বেটা, চলে যাবে কোথায়? তোমরা ভিন্ দেশ থেকে এসেছ।
আমার মেহমান। কোরাণের বহু জায়গায় তো বলাই আছে
‘পথশ্রমে যারা ক্লান্ত-অবসন্ন, যারা ভিন দেশী তাদের সঙ্গে
মেহমানের মত আচরণ করবে।' বেটা আল্লাহ-র উপদেশ তো আমি
ফেলতে পারব না। তবে যে বেহস্ত তো দূরের কথা দোজকের
সরওয়াজাও আমার জন্য খোলা থাকবে না। এ-বাগিচার মালিক
যদিও বলিফা হারুণ-অল-রদিব কিন্তু আশরও মনে করতে পার।
আমরা তিন পুরুষ ধরে একে বুকে করে আগলে রেখেছি; ফলে
এতে আমার অধিকারও একেবারে কম নয়।
বুড়ো মালী ইবরাহিম, গালী নুরও তার বিবি আনিসকে সঙ্গে
করে ঘুরে ঘুরে পুরো বর্গিচাট দেখাল। কোন গাছের কি নাম,
কোনটিতে কি ধরনের ফুল ধরে, কোনটি কোন্ ফলের গাছ সবই
এক এক করে সব বুঝিয়ে দিল।
আলী নূর বিবি আনিসকে নিশ্চয় বুড়ো মালী ইবরাহিম-এর
মেহমান হয়ে থেকে গেল। ইবরাহিম তাদের নিয়ে প্রাসাদের একটি
কক্ষে প্রবেশ করল। সেখানে স্বাবের আলমারি কয়েকটি রয়েছে।
স্রাবের বোতলে ঠাসা। পলিয়ার মেহমান যারা আসেন তাদের
অপ্যায়নের জন্যই এগুলো ব্যবহার করা হয়।
।
বুড়ো ইবরাহিম আলমারি খুলে সরানের বোতল আর পেয়ালা
এনে মুর-এর সামনে রাখল। নূর বোতলের ছিপি খুলে লকের
সামনে ধরল। চমৎকার সবু বেরোচ্ছে, খুবই দামী সরাব। সে আর
লোভ সামলাতে পারল না। বোভঙ্গ ধরেই ঢ4 ঢক্ করে পুরো
বোতল গলায় ঢেলে দিল।
ইংরাহিম আর এক বোতল নিয়ে এল। নূর তা থেকে এক
পেয়ালা বিবি আনিসকে দিয়ে বাকি সবটুকু ঢেলে দিল নিজের
গলায় ও
আনিস হাঙের পেয়াল টি ইবরাহিম-এর দিকে এগিয়ে দিল। সে
কিন্তু কোট বলল--হায় খোদা! আমি আজ থেকে ভেরো বছর
আগেই সরানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছি।'
ইতিমধ্যে আলী নূরকে সরাধের নেশা বেশ জেকে ধরেছে।
মাত্রাতিরিক্ত সরাব গলায় ঢালায় সে কিছুক্ষণের মধ্যেই বেহুঁশ হয়ে
এদিয়ে পড়া।
মালী ইবরাহিম বুড়ো হয়েছে বটে। কিন্তু তার মন থেকে
ভোগতৃষ্ণং নিঃশেষে অন্তর্হিত হয় নি। উদ্ভিন্ন শৌবনা রূপের আকর
আনিস-এর যৌনচিহ্নগুলি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল। কিছু
করার সাধ্য তেমন না থাকলেও গাধ কিছু রয়েছেই। রূগ্রী
যুবতীকে দেখে যতটুকু চোখ ও মনের তৃপ্তি পাওয়া যায়।
আনিস পড়ঙ্গ মহা সমস্যায়। হাতে সরাবের পেরালাটি তখনও
ধরা রয়েছে। মালীকে বহুল—'দেখুন না ও সরাব গিলে এরই
মধ্যে কেমন প্রায় সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেছে। অ'দত্তে একা একা সরাব
ধেয়ে আনন্দ নেই।
মালী ইবরাহিম এবার একটু নরম হয়ে বল—ভা বাছা
তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে আমি এক পেয়ালা সরাব খাচ্ছি।'
কথা বলতে বলতে ইবরাহিম আলমারি খুলে আর এক বোতল
সরাব নিয়ে এল। তা থেকে নিজে এক পেয়ালা খেল, আর কিছুটা
দিল আনিসকে।
এমন সময় বেগম শাহরাজাদ দেখলেন, প্রাসাদের বহিরে
বাগিচায় পাখির আনাগোনা আর কিচির মিচির শুরু হয়ে গেছে।
বেগম শাহরাঙান বিস্স্সা বন্ধ করলেন।
পঁয়ত্রিশতম রমনী
হয় সময়ে বাদশাহ শারিয়ার বেগম শাহরাজাদ-এর কাছে
এলেন।
শাহরালাদ কোনরকম ভূমিকা না করেই কিস্সার পরবর্তী অংশ
শুরু করতে গিয়ে বললেন— জাহাপনা, ভারপরের ঘটনা কি
ঘটেহিল বলছি শুনুন'—বুড়ো মালী ইংরাহিম অনিস্-এর হাত
থেকে আর এক পেয়ালা সম্রাব নিয়ে ঠোঁটের কাছে যেই না তুলতে
গে= অমনি ভাগ করে নেশায় বুঁদ হয়ে পড়ে থাকা নূর আ১৯৬৫।
উঠে বসে বলে উঠল— 'আমি যখন বললাম তখন ৮৪ করে বললে
হজ করে তের বছর স্পর ছোঁও নি―থার ভৌষেও না কতই না
বাহানা করলে। অর এখন বুবসরৎ পেড়টির কথায় হজটজের কথা
স্কুলে গেলে দেখছি।
– আরে ভাইয়া, সে সব কিছু না। দায়ে পড়ে পেয়স' হাতে
নিতেই হ’ল। ভূমি সরাবের সেশায় বুঁদ হয়ে পড়লে। লেড়কিটি
লল, আমি একেল; কি করে সরাব খাই, মন চায় না। তাই এক
আখ পেয়ালা—"
— এক অধ ।পয়ালার ননাই বটে এটা। কথা জড়িয়ে
আসছে, শরীর দুলছে, রীতিমত টলছ। আর বলছ কিনা এক-আধ
পেয়ালা!'
মালী ইবরাহিম তার কথার আর জবাব দিতে পারল না। আবতে
জবাব দেবার মত ক্ষমতাই তার নেই। নেশার ঘোরে কাৎ হয়ে চরের
পড়ার জোগাড় হল।
ক্রমে রাত্রি হ'ল। বুড়ো মালী ইব্রাহিম টলছে। ভাল করে
দাঁড়াবার ক্ষমতাও তার নেই। টলতে টলতেই প্রাসাদের বাতিগুলি
জ্বালিয়ে দিল। ইতিমধ্যে নেশা আরও বেশী করে চেপে ধরল তাকে।
কোনরকমে দেয়াল ধরে ধরে একটি আরাম কেদারায় গিয়ে বসল।
হাস, বুঁদ হয়ে পড়ে রইল।
আলী নূর প্রাসাদের জানলাগুলো খুলে দিল। কাগিচা থেকে
হিমেল হাওয়া ছুটে এসে সরাবের নেশাকে আরও চাঙা করে ভুল।
এদিকে প্রাসাদের জানলাগুলো খুলে দেওয়ায় প্রাসাদের
| ভেতরের আলো বাগিচার গিয়ে গ্লুকোচুরি খেলতে লাগল।
থলিফা হারুণ-অল-রসিদ-এর প্রাসাদ থেকে বাগিচার
প্রসাদটিকে স্পষ্ট দেখা যায়। প্রাসাদের ঘরে ঘরে চিরাগলভির
উজ্জ্বল আলো জ্বলছে দেখে খলিফার কৌতুহল হল। তিনি উত্তর
জাফর অল বারমাকীকে পাঠালেন ব্যাপার কি দেখে আসার জন্য
জাফর ছুটলেন খলিফার নির্দেশ পালনের জন্য। খোঁজ খবর
নিয়ে ফিরে এসে খলিফাকে জানালেন, বুড়ো মাগী এক দম্পতিকে
প্রাসাদটি ভাড়া দিয়েছে। সে এখন খেয়াল খুশী ১৩ কাজ করে
বেড়াচ্ছে। খলিফাকে তোয়াক্কাই করে না।'
-
খলিফা বললেন—'শেন জাফর, ইব্রাহিম আমার বহুদিনের
কর্মী। বংশ পরম্পরায় তারা আমাদের লোকরি করছে। তাকে আমি
ভাল ভাবেই চিনি। আমার অজান্তে সে আমার প্রাসাদ ভাড়া দিয়ে
অর্থোপার্জন করবে আমি এ কথা বিশ্বাস করতেও উৎসাহ পাচ্ছি
ল। তবু তুমি যখন বলছ তখন কিছু না কিছু ব্যাপার রয়েছেই। এ
একবারটি দেখে আসি গে. আসৎ ব্যাপারটি কিং
খলিফা হারুণ অল রফিক বিদেশী সওদাগরের ছদ্মবেশ ধারণ
করে উক্তির তাহার এবং দেহরক্ষী মাসকর কে সঙ্গে নিয়ে পথে
নামলেন।
বান্চিায় ঢুকে খলিফা ভাবলেন, হঠাৎ করে প্রাণদে ঢুকে
আসল রহস্যটি হয়ত উদ্ধার করা সন্ত হবে ন। কোথাও
আত্মগোপন করে থেকে দেখতে হবে ব্যাপরটি কি? মাস্কর-এর
কানে চেপে খলিফা ও উজির একটি বা গাছে উঠে তার ডালে
বসলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁদের নজরে পড়ল রেভিটি অপমি
রয়েছে। তাদের একজন তো সুপরিচিতই,—ইবরাহিম। অন্য দুদ
ষুবক-বর্তী৷ বরং তাদের হাতে সরবের পেয়াল। ইংরাহিম
এ হাতে গরীবের পেয়ালা দেখে শহিা তো ভিহরি যাবার
জোগাড়। তা-ও আবার লেপয় বুঁদ। ডাপন মনে হলে
উঠলেন—'তোবা ---তো!
খলিফা বললেন– 'জাফর আমার মনে হচ্ছে, এরা ভিন্ দেশী।
মুসাফির। কিন্তু আমার বাগিচায় কেন ও কি করে এরা এল!'
এমন সময় মালী ইবরাহিম একটি গ্লট এনে আসি-এর হাতে
দিয়ে কলা—'বেটি বাজাতে পার। বাজাও তো শুনি।
ব্যাপার দেখে খলিফা রাগে গজগজ করতে লাগলেন। সম্প্রদ
ইশাক যে বাজনা বালান তা অন্যের হাতে দেখলে রাগ তো হওয়ারই
কথা। তিনি অনুচ্চ কণ্ঠে বললেন – 'জাফর, বেসুরো ফুট বাজালে
বাইতে আমি কেতল করব। না না, শূলে চড়ভাব সবহিকে।'
উক্তির জাদর অনুষ্ঠ কণ্ঠে বল্ল— 'যদি বেসুরে| না বাজায়।
সুর 'তাল ঠিক ঠিক রেখে বাজাকে কি করত্নে জহাপনা?'
—তবে? তবে তোমাকে সদ্ভাব শুকে। আর তাদের ছেড়ে
দেব। জাফর বলে ওঠে- 'ছায় পোল, তবে যেন লেডুকিটি
বেসুরোই বাজায়।'
এমন সময় উদ্যান-প্রাসাদ থেকে ফুটের চমৎকার সুর ভেসে
এল। খলিফা বার বার তার তারিফ করতে লাগলেন।
কিছুক্ষণ মুগ্ধচিত্তে ফুটের বাজনা শোনার পর খলিফা
বলেন—‘জাফর, আমার ধৈর্যচ্যুতি ঘটছে। তারা কারা, কেনই বা
আমার বাগানে এসেছে জানার জন্য আমার দিল অস্থির হয়ে পড়ছে।
আর আমার প্রাসাদে এমন গুণীজনের আগমন ঘটল আর আমিই
জানতে পারলাম না। তাজ্জব ব্যাপার!'
উজির জাফর বললেন— 'জাঁহাপনা, তাদের এমন এক
আনন্দোচ্ছল মুহূর্তে আমাদের উপস্থিতি বে-রসিকের মত কাজ হবে
নাকি??
খলিফা জাফর-এর কথায় নিজেকে সামলে নিয়ে গাছ থেকে
নেমে এলেন। একাই প্রাসাদের ধার কাছ দিয়ে একটু হাঁটা চলা করে
কিছু উদ্ধার করার প্রত্যাশায় এগিয়ে গেলেন। তিনি গুটিগুটি পায়ে
এগিয়ে চললেন। কিছুটা এগোতেই বিশাল এক তলাও । মাটির তলা
দিয়ে নালা কেটে টাইগ্রীস নদী থেকে পানি এনে তলাওটিকে সর্বদা
কানায় কানায় ভর্তি রাখার ব্যবস্থা। কতরকম মছলির যে বিচিত্র
সমাবেশ ঘটানো হয়েছে তা গোনাগাঁথা নেই।
নিঝুম-নিস্তব্ধ রাত্রি। খলিফা তলাও-এর ধার দিয়ে ঘুরে অন্য
ধারে আসতেই দেখলেন, এক জেলে চুরি করে তলাও-এ জাল
ফেলে মছলি ধরছে। খলিফা তাকে ডাকলেন। নাম তার করিম।
করিম ধরা পড়ে গিয়ে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে খলিফার সামনে এসে
করজোড়ে দাঁড়িয়ে কৃতকর্মের জন্য নানা ভাবে মাফ চাইতে লাগল।
খলিফা তাকে পোশাক খুলে উলঙ্গ হতে বললেন। করিম জেলে
ভাবল, উলঙ্গ করে বুঝি বিশেষ কোন শাস্তি দেবেন। সে কেঁদে
ওঠে।
ঘলিংগ ঠোটের কাছে তর্জনি নিয়ে বলেন — 'চুপ-চুপঃ একদম
| চিল্লাবি না। টু-শব্দটি করলে গর্দান নেব বলে দিচ্ছি।'
করিম জেলে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে এক এক তার চোগ
চাপকান সব খুলে ফেল। একেবারে উলঙ্গ।
এদিকে খলিফাও নিক্রের গা থেকে যাবতীয় পোশাক খুলে
ফেলে একেবারে বিবস্ত্র হলেন। নিজের পোশাকগুলো করিমকে
গবালেন। আর নিজের গায়ে চাপিয়ে নিলেন করিম-এঙ্গ তেলচিটে
পড়া চোগা চাপকান। পোশাকের ভেতরে ছয়পোকার মেলা।
কব্লিট করে তাকে কামড়াতে লাগল।
করিম খলিফাকে প্রবোধ
কিছু না
কাঁহাপনা। নয়া আদমি আর নয়া বল পেয়ে একটু ফুর্তি করে পাচ্ছে।
পেট ভরে গেসে আর কামড়াবেনা। গরীবের কথা মিলিয়ে নেবেন।
দেখবেন, আপনার সঙ্গে এক সময় ঠিক সমঝোতা হয়ে গেছে।'
তার কয়েক অস্থিরভাবে লাগলাফি দুটফটানি করার পর খলিফা
হারপোকার ব্যাপারটিকে কোনরকমে সামলে নিলেন।
খলিকা নিজের আঙুল থেকে হীরা জহরৎ বসানো একটি আংটি
খুলে করিম জেলেকে দিলেন। তার ধরা মাছগুলো রেখে দিয়ে
বলেন—'যা, বাগিচার সীমানার বাইরে চলে খা
করিম ভোলে ঋষ্কিার হাত থেকে অব্যাহতি পেয়ে জাল-মহুফি
করা থেকে ফোঁটা পৌড় মারল।
এবার করিম-জেলের পোশাকে সজ্জিত খলিফা গুটি গুটি
উদানি-প্রাসাদে ঢুকে গেলেন। ইবরাহিম কে সামনে পেয়ে আদাব
জানালেন। এবার বললেন- 'আপনার জন্য কিছু মহলি নিয়ে এসেছি
হুজুর।'
আর্নিস কৌতূহলাপন্না হয়ে এগিয়ে আসে মছলি দেখার জন্য।
উল্লসিত হয়।
ইবরাহিম ধমক দিয়ে ওঠে—'বেঁটা হতচ্ছাড়া জেলে কাহাফার।
আমার মেহমানরা কি তোর কাঁচা মছলি খাবে নাকি রে? ঘটে বুদ্ধি
| বলতে কিছুই নেই দেখছি! মছলি কেটে ধুয়ে ভেঙ্গে নিয়ে আনতে
পারিস নিং'
জোলের পোশাকে সজ্জিত খলিফা চোখ-মুখ কাচুমাচু করে
ফলেন—'গোস্তাকি মাফ করবেন হুজুর! আমি এখনি মণ্ডুলিগুলো
ভেঙে আনছি।'
—‘ওদিকে কোপার ঘরটি রসুইখান।। তেল-মসলা সবই মজুদ
আছে। আচ্ছা করে ভেজে নিয়ে আয়।'
খলিফা পড়লেন এবার মহা ফাঁপরে মহুলিগুলো কাটা, ধোয়া
ৰা ভাজা কোনটিই তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। উপায়ান্তর না দেখে উজির
জাফর-এর শরণাপন্ন ভাঁকে হতেই হ'ল।
খলিফা এবার জাফর-এর কাছে গিয়ে সব বৃদ্ধান্ত জানালেন।
■| তিনি জাফর-এর সাহায্যে মছলিগুলো খুব কড়া করে ভেজে
হকুমদাতা বুড়ো মালী ইবরাহিম-এর কাছে নিয়ে গেলেন।
ইবরাহিম খরিফাকে তার কাজের জন্য বহুভাবে শুকিরিয়া
জানাল।
অলী নূর, আনিস এবং ইবরাহিম (মৌরু করে ভাজা মদুলিগুলো
খেতে লাগল।
অালী নূর ঘুর্শী হয়ে জেলের বেশধারী খলিফাকে তিন দিনার
ইলাম দিল। ঘলিফা দিনার তিনটে কপালের সঙ্গে সেঁটে নিলেন।
বুঝাতে চাইলেন—ঋজুরের ইনাম মাথায় রাখলাম।
খলিফা এবার করজোড়ে নিবেদন করছেন—'হুজুর মেহেরবান,
। আমার একটি আর্লি আছে। যদি মেহেরবানি করে—
আলী নূর ভাবল, তিন দিনারে অসমিটির ফল ভরে নি। কিন্তু
করারও তো কিছু নেই। দোস্ত তাকে মাত্র চল্লিশটি মিনার নিয়েছিল।
জাহাল ভাড়া গেছে পাঁচ দিনার। মোট আট দিনার এরই মধ্যে চলে
গেছে। অব রয়েছে বত্রিশটি। দু'-দু'জন লোক বিদেশ বিতুই । বত্রিশ
দিনা খরচ হতে কতক্ষণ। তারপর ?
মুচকি হেসে আলী দুর খলিফার কথার অংশং দেয়—'আজি?
বহু শুনি, কি আৰ্হি তোমার?
—'হুজুর, দূর থেকে হুজুরানির বাজনা শুনে দিল্ ভরে গেছে।
মন চাইছে তেনার গলার একটি গান শুনতে। ২দি মেহেরবানি করে
একটি গানা— '
জালী নূর তাঁর মুখের কথা শেষ হবার আগেই ব'লে উঠলেন----
'গানা? গলা শুনরে? বেশ তো, তোমার দিল যখন চাইছে জরুর
শোনাবে। কিন্তু কোন ধরনের গানা তোমার পছন্দ, বল?'
হাত কচলে খলিফা বলেন—জী, ছদ্ররানি কি সব কিসিমের
পানাই জানেন।'
অঃনিস এবার মুখ খুল—খেয়াল, কাওয়ালী, ঠুরী—কোন্
থানা তোমার পছন্দ, বল?'
বলিফা চোখের তারায় বিস্ময়ের ছাপ এঁকে ভাবতে লাগলেন
—প্রেডকিটি বলে কী রে। সব গানাই জানে দেখছি! তাজ্জব ব্যাপার
ডো! এবার মুখ খুল্লেন--'যদি মেহেরবানি করে একটি দরকারী
কানাড়া শোনান তো বহৎ আচ্ছা হয়?
।
আনিস সবিস্ময়ে বসিয়ার দিকে তাকায়। ভাবতে লাগল
লোকটি বলছে কী। দরবারী কানাড়া শোনার খেয়াল? এবার
বলিফার দিকে তাকিয়ে বলল—সে কী হে! তুমি মহলি ধরে দিন
গুজরান কর, দরবারী কানাড়ার ঞ্চ বুঝবে?
–“দেখুন, মছলি ধরে দিন গুজরান করি। ভাল কিছুই শিখিনি।
সুযোগও পাইনি কোনদিন। তবে শুনতে দিল্ চায়। যদি মেহেরবানি
করে
-ঠিক আছে। তোমার মন যখন চাইছে তখন আমি অবশ্যই
শোনাব। 'আনিস এবার গানা ধরল। মন-প্রাণ ঢেলে দরবারী কানাড়া
| গাইতে লাগে।
খলিফ। আত্মমগ্ন হয়ে তাঁর আকাঙ্ক্ষিত গানা শুনতে লাগলেন।
সত্যি ওস্তাদ ইশাক ছাড়া অন্য কেউ যে এমন গান গাইতে পারে
তার ধারণাই ছিল না।
দীর্ঘ সময় ধরে মন-প্রাণ সঁপে দরদ দিয়ে আনিস গানা গাইল।
গানা শেষ হলে খলিফা উচ্ছ্বসিত আবেগের সঙ্গে বহুভাবে গায়িকার
তারিফ করলেন।
খলিফা আবেগের সঙ্গে বলেন— হুজুরানি, এমন আচ্ছা গানা
আপনি কোথায় শিখেছেন? আপনার গানা শুনে আমার দিল্ উদাস
হয়ে গেল!'
আলী নুর হেসে বলেন—'জেলে ভাইয়া, আমি গানাটানা বুঝি
না। ওর গানা আমার কাছে কদর পায় না। তুমি বরং একে নিয়ে যাও।
habl
Du
তোমার ঘরে রাখবে। তোমাকে চিরদিনের জন্য একে দিয়ে দিচ্ছি।
নিয়ে যাও।'
কথা বলতে বলতে আলী নূর উঠে দাঁড়ায়। বিবি আনিস এর
কাছ থেকে বিদায় নেবার জন্য তৈরি হয়।
আনিস কেঁদে ওঠে——মেহবুব, আমাকে ফেলে তুমি কোথায়
চল্লে? তোমার কি দিল্-দরদ বলতে কিছুই নেই। যদি আমাকে
এভাবে ফেলেই ভেগে যাবে তবে একটি কথা বলছি, শুনে যাও।
কথাটি বলেই সে শিশুর মত হাউহাউ করে কেঁদে ওঠে।
খলিফা হারুণ-অল-রসিদ এমন এক অপ্রত্যাশিত ঘটনার
মুখোমুখি হয়ে বড়ই বিব্রত বোধ করতে লাগলেন। ভাবলেন, এ কী
ভাজ্জব ব্যাপার। লেড়কিটি কি তবে তার বিবি নয়, শাদী করেনি।
ই একে ? শাদী করা বিবি নয় ? কৌতূহল চেপে রাখতে না পেরে এবার
তিনি মুখ খুলতে বাধ্য হলেন। সবিনয়ে নিবেদন করলেন—হুজুর,
একটি কথা বলছি, মেহেরবানি করে গোস্স্সা করবেন না। আমি
অঃপনার আহ্ব:জীর চেয়ে বয়সে হয়ত বড়ই হ’ব। তাই বলছি কি,
আপনাদের দুঃখ, অভাব-অভিযোগের কথা আমার কাছে খুলে
বলুন। আপনাদের মুশকিল আশান করতে কোসিসের ত্রুটি করব
না। সত্যি করে বলুন তো হুজুর, ডেন্টিটিতে কি ভুলিয়ে ভালিয়ে
ভাগিয়ে নিয়ে এসেছেন, নাকি আপনার শাদী করা বিবি?'
|
আলী নূর ফল—আরে, এসব ব্যাপার মোটেই না। আমাদের
জীবনের কিস্সা, দুঃখদরদের কথা, নসীবের লে তোমাকে বলে
বোঝাতে পারব না। তা ছাড়া সে অনেক কথাও বটে।'
।
– হুজুর, মেহেরবানি করে যদি কিছু বলেন তবে আমি
A আপনংসের মুশকিল আশনের কসুর করব না, কথা দিচ্ছি।
--তুমি যখন না শুনেই ছাড়বে না তখন সংক্ষেপে আমাদের
দুঃখের কথা তুলে ধরছি শোন। নূর এবার সুলতানের হুকুম অনুযায়ী
বাজার থেকে আনিসকে কিনে আনার পর থেকে বাগদাদে ও
খলিফার বাগিচায় আসা পর্যন্ত সব ঘটনা খোলাখুলি বাক্ত করল।
আলী নূর তার কিস্সা শেষ করলে খলিফা চাপ দীর্ঘশ্বাস ফেলে
বলেন—'মৃঞ্জুর, এখন আপনাদের দিল কি চাইছে?'
—চাওয়া চাওয়ির ব্যাপার কিছু আর নেই জেলে ভাইয়া। দু’
চোখ যে দিকে চায় হাঁটা জুড়ব। এর শেষ কোথায় আল্লাভান্নাই
শানেন।
—'হুজুর, দেখতেই তো পাচ্ছেন, সামান্য এক গেলে আমি।
মহলি ধরে দিন গুজরান করি। তবে বসবাহ-র সুলতান আমাকে
দোস্ত জ্ঞান করেন। খাতিরটাতিরও করেন খুবই, তাজ্জব ব্যাপার
মনে হচ্ছে, তাই না? আদং ব্যাপার হচ্ছে ছেলেবেলায় জামর। একই
মক্তবে মৌলভী শহেবের কাছে পড়ালিখা করি। কিন্তু তিনি সুলতান
হওয়ার পরও আমাকে ভুলে যান নি। সে লতানের বেটা। সুলতান
। বেহেস্তে গেলে সে সুলতান বনে গেল। আর আমি? কোন পথ ন
পেয়ে কাঁধে জাল তুলে নিলাম। তুমি যদি বসবাহতে ফিরে যেতে
মন কর তবে আমি চিঠি লিখে দিচ্ছি। আশা করি তোমাদের মুশকিল
আশান হয়ে যাবে। আমার অনুরোধ তিনি ফেলতে পারবেন না
বলেই আমি মনে করি।'
এমন সময় বেগম শাহরাজাদ দেখলেন, ভোর হতে আর দেরী
নেই। বাধ্য হয়ে তিনি কিস্সঃ বন্ধ করলেন।
ছত্রিশতম রজনী
প্রায় মাঝ রাত্রে বাদশাহ শারিয়ার হিল বেগম সাহেবার ধরে
उলেন।
বেগম শাহরাজাদ কিস্স' শুরু করলেন—'জাঁহাপনা, অল্পী নুর
ও আসি-এর তকলিফ দূর করার চিন্তা নিয়ে খলিফা হারুণ-অল-
রসিদ বলেন—'আপনারা চাইলে আমি সুলতানকে একটি হাত-
চিঠি লিখে দিতে পারি।'
– ঠিক আছে। একটি চিঠি তবে লিখেই দাও দেখি চেষ্টা করে
যদি পোড়া নসীঘটিকে ফেরাতে পারা যায়।'
খলিফা কাগজ-কলম চাইলে ইবরাহিম দৌড়ে পাশের ঘরে
গিয়ে নিয়ে ভাল।
খলিফা বস্ত-হাতে চিঠি লিখতে লাগলেন। তিনি চিঠির বক্তব্যে
লিখলেন, চিঠিটি হাতে পাওয়া মাত্র বসবাহ-র সুলতান মহদ ইক।
| সুলেমান যেন একে হুকুমনাম। মনে করে পত্রবাহক আলী নূরকে
সিংহাসনে অভিহিত করেন। এতদিন তাকে সুলতানের পদে
অবস্থান করার যে অধিকার তাকে দিয়েছিলেন তা আজ থেকে
খারিজ করা হলো। আর সে অধিকার দেওয়া হ'ল নওক্রোয়ান অংগী
নূরকে।'
চিঠি !লেখা শেষ করে বলিফা হারুণ-অল-রদি টিপ শই দিয়ে
থামে ভরলেন। আঠা নিয়ে ঝামের মুখ ভাল করে বন্ধ করে সেটি
আলী নূর-এর হাতে দিলেন
আলী নূর কিন্তু খলিফার কথা পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারল
| না। তবে একেবারে অবিশ্বাস করে উড়িয়ে দিতেও উৎসাহ পেল
না। মনে মনে বলল- নসীরে যা আছে হবে দেখাই যাক না
অল্পাতাহার কি মর্জি।
আলী নূর তার বিনি আনিসকে ফেলোর বেশধারী খলিফার কাছে
রেখে সরায় এ উদেশে পা বাড়াল।
মাল ইবরাহিম কিন্তু ব্যাপারটিকে মোটেই সুনজরে দেখল না।
সে গোঁ গোঁছ করতে লাগল—নিচ্ছার জেলে! শয়তানী করার আর
জায়গা পাস নি! সামান্য শহভাজা বইয়ে নগদা নগদ তিন তিনটি
মেহর নিলি। উপরি পাওন' স্বরূপ গান: গুলি। শেষ পর্যন্ত
লেড়কাটিকে ভাঁওতা দিয়ে দিলি ভাগিয়ে। এখন ফুজের মত খুবসুরও
লেড়কিটিকে নেওয়ার মতলবে আছিল। নাহি জতি নাহি--আমি
থাকতে এতবড় একটি অবিচান কিছুতেই হতে দিচ্ছিনে। আমার
দাবী আগে। আমিই তাদের এখানে আশ্রয় দিয়েছি। নইলে
আাআধি বখরা তো ডাই ই। তিন মোহরের আধা বখরা, আর
লেড়কির বখরা চাইই চাই। লেড়কিটি আগে আমার পিয়াস
মিটাবে। তারপর ছিবড়ে ছিবড়ে যা পড়ে থাকবে তা তোর দিকে
ছুঁড়ে দেব। নইলে তুই যেটা লেড়কিটিকে নিয়ে ভাগবি, একেলরে
বে-পাত্তা হয়ে যাবি। তখন আমার আঙুল চোষা ছাড়া গত্যন্তর
থাকবে না।'
মালী ইবরাহিম-এর মুখ থেকে এরকম সব অশ্লীল-অশ্রাব কথা
শুনে খলিফা তেলে বেগুনে জ্বলে উঠছেন। নিজেকে আর সংযত
রাখতে পারলেন না। জানালার ধারে গিয়ে সঙ্কেত-ধ্বনির সাহায্যে
দেহরক্ষী মাসরুরকে ওকরেন।
মাসরুর হস্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে খলিহাতে কুর্নিশ করে হুকুমের
অপেক্ষায় দাঁড়াল। তার হুকুম পেয়ে ইবরাহিমকে উচিত শিক্ষা
দেওয়ার কাজে মন म
উজির জাফরও ছুটে এলেন। তাঁর হাতেই জেলেটি যাবার আগে
খলিফার পোশাক জমা দিয়ে গিয়েছিল। খলিফা এবার নিজের
শোকে সজ্জিত হলেন।
ইবরাহিম যেন একেবারে আশমান থেকে পড়ল। কেবলিকান
প্লেড়ে লুটিয়ে পড়ে বার বার মাহ্যি মণ্ডতে লাগল।
খলিফা ভাবার নিজেকে সামলে নিয়ে বলেন – তোমার
ব্যবহার আমাকে স্তম্ভিত করেছে ইবরাহিম। তোমার মত একজন
ধর্মভীর আদমি যে এরকম বে-শরম বেতমিসের মত অশ্রাবা কথা
উচ্চারণ করতে পারে তা ভাবতে আমি উৎসাহ পাচ্ছি নে। অঞ্চলে
মত মাফ করে দিলাম। ভবিষ্যতে এরকম কোন আচরণ তোমার কাছে
থেকে গেলে কিন্তু গর্দান নেওয়া ছাড়া গতান্তর থাকবে না!
বাড়িয়ায় এবার আসিংএর দিকে ফিরে মুচকি হেসে
বল্নে—‘সুন্দরী, আশকার তুমি ইতিমধ্যেই আমার অসন
পরিচয় পেয়ে গেই। এবার ঢল আমার প্রাসাদে গিয়ে থাকবে।'
খলিফা আর্নিসকে নিজের প্রাসাদে নিয়ে গেলেন আর স্বামী,
থোপা প্রভৃতিকে তার পরিচর্যার জন্য নিযুক্ত করলেন। সবার ওপরে
কড়া হুকুম দিলেন, তার কোনরকম তকাটা হলে গর্দান যাবে
এদিকে খলিফা হারুণ-হলে-রফিদ-এর চিঠি নিয়ে আলী নূর
বরাহ-র সুলতান মহম্মদ সুলেমন-এর দরবারে হাজির হ'ল। সে
সুলতানকে কুর্নিশের মাধ্যমে ভাড়া নিবেদন না করেই এগিয়ে গিয়ে
হাতের চিঠিটি ভার হাতে তুলে নিল :
খামের মুখ ছিঁড়ে, চিঠিট! বের করে সুলতান চোখের সামনে
ধরলেন। হাতের লেখা দেখে চিনতে তর অসুবিধা হ'ল না যে,
হলিফা হারুণ-অল-রসিদ-এর পাঠানো চিঠিই বটে। জাল জুয়চুরি
নয় মোটেই। তার মুখে হঠাং বিষৎতার ছাপ ফুটে উঠল।
চিঠি পড়া শেষ করে সুলতান বিষণ্ন মুখে উজির মইন এবং
অন্যান্য পারিষদদের উদ্দেশ্যে বসুফেন 'মহামান্য হলিফা হারুন-
অল-রদিন আল্লাহর গয়গম্বর আমার নওমুপ্তের কর্তাও বটে। তাঁর
হুকুম অ'মি তামিল করতে বাধ্য। শোন মইন, আামীর-ওমরাহদের
খবর পাঠাও। চারফ কাজীকে তলব করে সবার উপস্থিতিতে আমি
এ অজ্ঞাত পরিচয় নওজোয়ানকে সিংহাসনে অভিষিক্ত করে
সরাহ-র শাসনভার এর হাতে তুলে দেব। খলিফার হুকুম তামিল
করে আমি দায়মুক্ত হতে চাই।'
উক্তির মইন এগিয়ে এসে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করল— 'জাঁহ:পনা,
আপনার দিলাকটিমার খারাপ হয়ে গেল নাকি? হঠাৎ করে এতবড়
একটি কাজ করে ফেলবেন! ব্যাপারটি নিয়ে ভাবুন সত্যি-মিথ্যা
বাছাই করুন। আমার তো দিল্ বলছে চিঠিটা জ্বাল। এবার চিঠির
০+ লিফার স্বাক্ষরযুক্ত অংশটুকু কৌশলে ছিঁড়ে ফোঙ্গা
কর জাঁহাপনা, আমি আগেই ভেবেছিলাম, ভাল চিঠি নিয়ে
এস নওফ্লোয়ানটি আপনার সঙ্গে প্রতারণা করছে। আরও ভেবে
দেহ্ন. খলিফার চিঠিই যদি এটি হবে তবে সাদা কাগজে তিনি
লিখতে যাবেন কেন। এতবড় একটি হুকুমনামা নিহ্নের শীলমোহর-
হুক্ত ভাগকে না পাঠিয়ে তিনি কিছুতেই সমন্য এক চিত্তে সাদ!
হাত ব্যবহার করতেন না। আরও বড় কথা হচ্ছে, এরকম
গুরুত্বপূর্ণ একটি চিঠি এর হাতে না দিয়ে তিনি অবশ্যই দ্রুত মারফত্
পাঠাতেন; ঠিক কিনা?'
স্বপতম মহম্মদ সুলেমন উক্তির মইন-এর কথায় থমকে
SIERR
উজির মইন এবার বললেন—'জাঁহাপনা, আমি আপনাকে
জোর গলায়ই বলছি, এনওক্রোয়ান গৈ। জাল চিঠি নিয়ে এসে
অস্পাকে ঠকিয়ে আপনার মসনদ দখল করতে চাইছে। আগে একে
করান৷৷ আটক করুন তারপর বাগদাদে খলিফার কাছে দূত
করেন। ব্যস, দেখবেন তবেই সব হিয়ে হয়ে যাবে।'
কথা বলতে বলতে মইন চিঠিটিকে মুখে পুরে বার কয়েক
চিয়ে, ডেলা পকিয়ে মেঝেড়ে ফেলে দিলেন।
সুলতান বিস্ময় প্রকাশ করে বললেন—এ তুমি কি করলে
মইল : যদি এটি খলিফারই চিঠি হয়ে থাকে তবে তাকে কতখনি——
তাকে কথাটি শেষ করতে না দিয়েই উন্নি মইন বলে
উঠলেন— 'আমি তো বলছি জাঁহাপনা, কিছুতেই এটি খলিফার চিঠি
হ হারাম জাল চিঠি নিয়ে এসে আপনার সঙ্গে প্রতারণা করছে।
সবার আগে একে আচ্ছা করে ঘা কতক দেওয়া দরকার। পিঠমোড়া
করে বেঁধে মেক্ষম দাওয়াই আমি দিয়ে দিচ্ছি। একবারটি আমার
হতে শয়তানটিকে তুলে দিন। এমন দাওয়াই দেব যে, জিন্দেগীশুর
থাকবে। জাঁহাপনা, চিঠি দিয়ে খলিফার করছে দূত পাঠান।
প্রহ্লষতে এক পরিষদকেও সঙ্গে দিন। ব্যস, আদৎ ব্যাপ'র ফাঁস
সুলতান ৬৩ক্ষণে উজির মইন-এর কথা বিশ্বাস করলেন। হুকুম
নিশন, গলা ও হেয়। আসল কথা কবুল না করা পর্যন্ত বেস্ত বন্ধ
সুলতানের আবেশে শুয়েকজন সিপাহী আলী নূরকে পিঠমোড়া
করে বেঁধে মেঝেতে ফেলে দিল। এবার চলল সপং-সপাং শব্দে
অনকার বেত উদ্ভিরের সুখী কেকা, বেতের ঘা বেশীক্ষণ সইতে
শরল না। দা-কতক ধাওয়ার পরই সম্বিৎ হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে
1
কয়োনার প্রধান আলী নূরকে চিনতে পারল সে দূর-এর
আব্বা উদ্ভির অল-ফাদল-এর এক বড় ভাঙে। সে সাধ্য মত নূরকে
বাঁচাবার প্রতিচ্ছতি দিল। ব্রকে অন্ত কণ্ঠে বল–ফজুর, আমি
অলতো করে আপনার গায়ে বার কয়েক চাবুক মেশানো মাত্রই
] মরার মত হাত-পা এলিয়ে দিয়ে পড়ে থাকতেন। বাহানা করবেন,
বেন সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেছেন। আমার ওপর হুকুম, আপনি যে ঠগ,
প্ৰবক্ষক, জালিয়াত তা স্বীকার করাতেই হবে। একটু বাদেই শয়তান
মইন আসবে, ঘাপটি মেরে পড়ে থাকুন। ভাকলেও গড়া দেবেন
না। আমি বলব হরদম বেও খেয়ে বের হয়ে পড়েছেন।'
২
এবং দুই-তিন করে পুরা চল্লিশটি দিন কেটে গেল। মইন এর
কাছে কয়েদ খানম প্রধান খবর পাঠায়, রোজ সকাল সন্ধ্য। জোর
হেত চালানো হচ্ছে, কিন্তু কয়েদী তার কসুর কবুল করে নি।
i
P
একচল্লিশতম দিন। করাহ র সুলতানের ঝাহে বাগদাদ থেকে
বহুমূল্য ভেট এল। সুলতান বিস্মিত হচ্ছেন। কিন্তু আদৎ ব্যাপার
ধারণাও করতে পারলেন না। যারা ভেট নিয়ে এসেছে তাদের কাছ
থেকে কোন কথা বের করতে পারলেন না।
3
এদিকে সুলতান তো ব্যাপর দেখে তাজ্জৎ বনে গেলেন।
উদ্ভিরও অমীর-ওমবহদের কাছে পরামর্শ চাইলেন। তার ও
বিস্ময়ের ছাপ চোখে -- মুখে এঁকে মুখে বলুপ এঁটে বসে থাকা ছাড়া
কোন সৎপরামর্শই দিতে পারলেন না
তবে কোন কোন পারিষদ অনুমানের ওপর নির্ভর করে।
' বললেন—'জাহাপনা, খলিফা হয়ত নতুন সুলতানকে ভেট পাঠিয়ে
খ্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়েছে।'
উজির মইন-এর পরামর্শে সুলতান আলী নূর কে জানে খতম
"
1
5
পড়ল। এবার ধরাধরি করে তাকে ঢুকিয়ে দেওয়া হ'ল কয়েদখানায়।
আর কয়েদখানার প্রধানের ওপর কড়া হুকুম দেওয়া হ'ল, রোজ
সকাল-সন্ধ্যায় যেন তাকে বেত্রাঘাত করা হয়। যে করেই হোক
ভাকে দিয়ে আদৎ ব্যাপার কল করাতে হবে।
4 করে দেওয়ার চিন্তা করলেন।
।
সুলতান-এর হুকুমে সেরাহ নগরের সর্বত্র ট্যাড়া পিটিয়ে দেওয়া
নহ'প উক্তির অল-কাদল-এর লেড়কা ঠগ আলী নূর-এর গর্দান
নেওয়া হবে। আগামীকাল সকালে উৎসাহীদের গর্দান নেওয়ার দৃশ্য
দেখার জন্য জমায়েত হতে জানানো হচ্ছে।
পরদিন সকাল হতে না হতেই দরবার কক্ষের সামনে দলে দলে
কাতারে কাতারে উৎসাহী নগরবাসীর। ক্রমায়েত হতে লাগল।
যথা সময়ে উদ্ভির মইল কয়েদখানায় হাজির হলেন।
কয়েদখানার প্রধান বাধ্য হয়ে দরওয়াজা খুলে দিল।
+
আলী নূর বিষণ্নমুখে কয়েদখানা থেকে বেরিয়ে এল গঞ্জীর
5 স্বরে বলল – শয়তান মইন, তুমি কি করছ, তা নিজেই জান না।
তামাম দুনিয়ার আদমি তোমার শয়তানী ধরতে না পারলেও
ওপরওয়ালার চোখে তো আর ধোঁকা দিতে পারবে না।
আল্লাহর হাত থেকে তুমি কিছুতেই ছাড়া পাবে না। তোমার
কুকর্মের শাস্তি তোমাকে দেবেন ই দেবেন।'
মইন তাচ্ছিল্যের হাসি মুখে ফুটিয়ে তুলেন। আলী নুর এর
কথার কোন জবাব না দিয়ে রক্ষীদের হুকুম করলেন, তাকে খচ্চরের
পিঠে আচ্ছা করে বাঁধতে।
এদিকে সরকার কক্ষের সামনে নগরবাসী যারা জমায়েত
হয়েছিল 'তার' 'হালী পূর-এর নামে ধ্বনি দিতে দিতে কয়েদখানার
| দিকে ছুটে আসতে লাগল। তাদের দাবী, নতুন সুলতান আলী নুর-
এর মুক্তি দিতে হবে। অর শয়তান মইন-এর মৃত্যুকামনা করতে
ল!গল সবহি।
थाली । নূর তাদের শাস্ত করতে চেষ্টা করে। জনতার উদ্দেশ্যে
বল—'দোস্তরা, উতলা হয়ো না। ধৈর্যে বুক বাঁধা বিচারের ভর
আল্লাহর ওপর হেড়ে দাও। মইন আমার ওপর যে জবরদত্তী
করছে তার শান্তিবিধান অক্সাহ-ই করবে !
মইন-এর ধমক খেয়ে রক্ষীরা খচ্চরের পিঠে বেঁধে রাখা আলী
নূর'কে নিয়ে জনসমুদ্র ভেদ করে অৎসর হওয়ার কোশিস ব্রল।
থক্ষরটি ধীর পায়ে এগিয়ে চল্ল। মৃত্যুপথযাত্রী আলী নূর মুখে
জোর ক'রে হাসি ফুটিয়ে তুলে বাইকে অভিনন্দন জানাতে ক্ষাগল।
এক সময় আলী নূব 'কে নিয়ে খচ্চরটি সুলতানের দরবার কক্ষের
সামনে হাজির হ'ল।
আলী নূর এবার গলা ছেড়ে বলতে লাগল—দেস্তগণ, তোমরা
শুনে রাখ, আমি কোন বসুর করি নি, এমন কোন কাজ করি নি যার
ফলে আমার গুণাহ হতে পারে। আমাকে অবরদস্তি প্রাণদণ্ড দেওয়া
হচ্ছে। আমার গর্দন নিয়ে তারা কিন্তু আল্লাহর কাছে দায়বন্ধ
থাকবে আল্লাহ এর বিচার করবেন ই।'
শয়তান মইন প্রাসাদের নিরাপদ স্থান থেকে চিৎকার করে
জল্লাদকে বলতে লাগলেন—'দেরী করছ কেন? ওর ধড় থেকে
শিরটি নামিয়ে দাও। তাড়াতাড়ি কর।'
এবার ঘটে গেল এক অবিশ্বাস! কান্ত। দূর থেকে ভেসে আসতে
লাগল একদল ঘোড়ার খুরের গম্ভীর আওয়াজ। অনকোলাহল শুব্ধ
হ'ল। সবাই উৎকর্ণ হয়ে আওয়াজটিকে উপলব্ধি করার চেষ্টা
করতে লাগল।
কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই বিশাল এক সেনাবাহিনী প্রাসাদের
সামনে উপস্থিত হ'ল। তাদের সঙ্গে রয়েছেন খলিফার উজির ফাফর
অল বারমাত্তী।
উজির জাফর-এর আগমনবার্তা পেয়ে সুলতান মহম্মদ সুলেমান
ব্যস্ত হয়ে থাসাদ থেকে নেমে এলেন। উজির জাফর
বলেন—“স্বয়ং খলিফাই চিঠি লিখে আলী নূর'কে পাঠিয়েছিলেন।
চিঠিটি অবশ্যই আসল, জাল নয়। তিনি ভুলেও ভাবতে পারেন নি।
যে, তাঁর হুকুম কেউ তামিল না করে অগ্রাহ্য করতে সাহসী হতে
পারে। তিনি নিঃসন্দেহ ছিলেন যে, আলী নূর-ই বসরাহ-র মসনদে
বসে প্রজা পালন করছেন। সে তার বিবি আনিসকে খলিফার হাতে
সঁপে দিয়ে এসেছিল। কথা ছিল, বসরাহ-র মসনদে বসে সে তার
বিবিকে নিজের কাছে নিয়ে আসবে। খলিফা তাকে মাত্র একটি
রাত্রির জন্য শয্যসঙ্গিনী করেছিল। ব্যস, আর তার সঙ্গে মোলাকাত
হয় নি। তারপরই তিনি নিজের কাজে ডুবে যান। আনিস-এর কথা
তাঁর আর খেয়ালই ছিল না। একমাস বাদে খলিফা হঠাৎ প্রাসাদের
ভেতরে ঢুকতে গিয়ে কান্না শুনতে পেয়ে থমকে যান। পরিচারিকাকে
জিজ্ঞাসা করে জানতে পারেন, আলী নুর-এর বাঁদী আনিস
কাদছে।
নিতান্ত অপরাধীর মত মন নিয়ে খলিফা আনিস-এর কামরায়
গেলেন। তাঁকে দেখেই আনিস-এর কান্না আরও বেড়ে গেল।
খলিফা এবার আলী নূর-এর ব্যাপারটি নিয়ে ভাবতে লাগলেন। এক
মাসের ওপর হয়ে গেল, অথচ তার কোন পাত্তা নেই। নির্ঘাৎ কোন
না কোনো বিপদ তার হয়েছে।
আনিস-এর কক্ষ থেকে বেরিয়ে খলিফা, আমাকে তলব
করলেন।
আমি ব্যস্ত হয়ে ছুটে যেতেই বললেন— বসরাহ থেকে আলী
নূর-এর খবর সংগ্রহ করতে। আর মহম্মদ সুলেমান তার সঙ্গে কেমন
আচরণ করেছেন এ-ও জানাতে বলেন। খলিফার নির্দেশে আমি
সিপাহীদের নিয়ে এখানে আসি।'
উদ্ভিব স্নাবল এবার বললেন—আলী নূর এখন কোথায়?
হবে আমার কাছে আন। 'সুলতান মুহূর্ত্তমাএ সময় নষ্ট না করে
বুজন রক্ষীকে পাঠালেন আলী নূর-এর হাত-পায়ের বাঁধন খুলে
হর সামনে হাজির করার জন্য।
উদ্ভিব অফার এর পক্ষে ব্যাপারটি এবতে দেরী হ'ল না। আলী
| দূর আসার আগেই তাঁর নির্দেশে সৈন্যরা সুলতান মহম্মদ সুয়েমান
এবং উক্তির মইনকে কর্মী করল:
উক্তির জাফর সমবেত জনতার মানে প্রচার করে নিলেন
বনরাজ-র মসনদে সুলতানের পদে আসী নূরকে অভিষিক্ত করা
হবে।
প্রজার উন্নতি হয়ে অলী নূর-এর অভিষেকের আয়োজন
করতে লাগল সুলতানের প্রাসাদ থেকে শুরু করে রাজ্যের সর্বত্র
মত মন গন উঠে গেল।
যথা সময়ে উজির জাফর আলী নূরকে বসরাহর সিংহাসনে
হস্তিবিক্ত করলেন। তিন দিন-তিন রাত্রি ধরে রাজ্য জুড়ে উৎসব
পালিত হ'ল৷
তিন দিন বাদে উজির ভগফার আলি নূর'কে নিয়ে বর্ণবাদে
হলেন। খলিফার সঙ্গে মোলাকাত করলেন। খলিফা: নিজের
থেকে তাবরি মূলে অঙ্গী নূর-এর হাতে তুলে দিয়ে
করলেন—'এটি দিয়ে মইন-এর শিরচ্ছেদ করবে।
মইন তার পা দুটো জড়িয়ে ধরে কেঁদেকেটে বদলেন—'বেটা,
তোর দেহে খানদলি বংশের হুন রয়েছে। তুমি কারো অনিষ্ট
করতে পারবে না, জানি তোমার বংশের সবাই ছিলেন ক্ষমাধর্মের
পূজারী। তুমিও আমার সব অপরাধ ক্ষমা করে বংশের গৌরব
হফাই ব্যাহত রাখবে, আমার বিশ্বাস।'
অঙ্গীপুর এর পক্ষে খলিফার আদেশ মান্য করা সম্ভব হ'ল ন'।
কিছুতেই মইন-এর হাড় থেকে তার মুণ্ডুটি নামিয়ে নিতে পারল না।
শেষ পর্যন্ত খলিফার আদেশে তাঁর দেহরক্ষী মাসরুর কাজটি হাসিল
আলী নূর এবার খলিফার কাছে নিজের মতামত ব্যক্ত করতে
দিয়ে ডানাল— 'জাঁহাপনা, সেরাহ-র সুলতানের পদ লাভ করে
| সকালে বসার ইচ্ছা আমার আগেও কোনদিন ছিল না, বর্তমানেও
নেই সামাকে আপনি দোয়া করে আপনার কাছাকাছি থাকার
সুযোগ করে দিন তবেই আমি নিজেকে ধন্য
কর
বলিফা আলী নূর-এর ইচ্ছার মূল্য দিলেন। তাঁর নিজের
| প্রসাদের অদূরে একটি সুদৃশ: প্রাসাদ তৈরী করালেন। সেখানে
অনূর তার বিবি আর্লিন'কে নিয়ে সুখে দিনাতিপাত করতে
লগেল। আর খলিফা তাকে দরারের অন্যতম পার্বদরূপে নিযুক্তখলিফা মহম্মদ সুলেমান'কে ক্ষমা করলেন। তাঁকে পুনরায়
বসরাহ-র সুলতানের পদে নিযুক্ত করলেন।
উজির মইন পরলোকগত। সুলতান মহম্মদ সুলেমান নতুন
উজির বহাল করলেন। বসরাহ-র প্রজারা হাঁপ ছেড়ে বাঁচল।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
জয় গুরু
বিশুদ্ধ প্রচারের স্বার্থে -
আপনার যে কোন মন্ত্যব, অভিযোগ, অনুরোধ আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান। ...