আলী নূর ও আনিস এর কিস্সা শেষ করে বেগম শাহরাজাদ
বললেন---'জাঁহাপনা, আপনার যদি দিল চায় তবে এর চেয়েও
অনেক, অনেক রোমাঞ্চকর কিস্সা আপনাকে শোনাতে পারি।
বাদশাহ শারিয়ার বেগমের কোলে শির রোখে ওয়ে, মুখে হাসির
রেখা ফুটিয়ে তুলে বলেন-'কি সে কিস্সা ? কেমন রোমাঞ্চকর
কিস্সা শুনি?'
জাঁহাপনা, এবার আপনাকে শোনাব সওদাগর ধানিম আয়ুব-এর
কিস্সা। জাঁহাপনা, কোন এক সময়ে এক দেশে এক সওদাগর বাস
করত। তার নাম ছিল ঘানিম আয়ূব
সওদাগর আয়ুব-এর এক বেটা ও এক বোট ছিল। তার বেটার
নাম ঘানিম আর বেটিটির নাম ছিল ফিত্না। তারা উভয়েই থুবসুরং
ছিল। এক পলক দেখলে কার সাধ্য চোখ ফেরায়।
এক সময় মাত্র কয়েকদিনের বিমারিতে সওদাগর আয়ুব দুনিয়ার
মায়া কাটিয়ে বেহেস্তে চলে গেল। তার বিষয় আশয় ছিল অগাধ।
সবাই বলাবলি করত সওদাগর আয়ুব নাকি দিনারের কুমীর ছিল।
অগাধ ধনর্দৌলতের মালিক।
বেগম শাহরাজাদ কিস্স'র এ পর্যন্ত বলার পর ভোর হয়ে এল।
তিনি কিস্সা বন্ধ করলেন।
সাঁইত্রিশতম রজনী
রাত্রির প্রায় দ্বিতীয় প্রহরে বাদশাহ শারিয়ার অন্যদিনের মতই
অন্দর মহলে বেগমের কক্ষে প্রবেশ করলেন।
বেগম শাহাজাদ তাঁর কিস্সার পরবর্তী অংশ শুরু করতে গিয়ে
হলেন— ভাঁহাপনা, বিশাল সম্পদ ও দিনারের পাহাড় রেখে
সওদাগৰ আয়ুব বেহেস্তে চলে গেল। তার সম্পত্তির মালিক হ’ল
বেটা ঘানিম আর বেটি ফিৎনা।
সওদাগর মারা যাবার সময় তার কারবারের কাজ অর্ধসমাপ্ত
রেখে যায়। বাগদাদে পাঠাবার জন্য একশ’ টি সিল্কের মূল্যবান
কাপড়চোপড় বাঁধা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সময়াভাবে আর পাঠানো
হয়ে ওঠে নি। আর সে সঙ্গে একশ' বোতল গুলারে নির্যাসও
জোগাড় করেছিল। সেগুলোও পাঠাতে পারে নি। সবই ওরামে
জড়ো করা ছিল।
আব্বার মৃত্যুর পর তার বেটা নওজোয়ান খানিফ বাগদাদে
যাওয়ার মন করল। তার ইচ্ছা, যে কাপড় আর গুলাবের নির্যাস
জড়ো করা রয়েছে সেগুলো সেখানে নিয়ে গিয়ে বেঁচে আসবে।
একদিন হুবক ঘানিম ঘরে আম্মা ও বহিনকে রেখে কাপড় আর
গুলাবের নির্যাসের বোতলগুলি নিয়ে জাহাজে উঠল। জাহাজ
বাগদাদের পড়া ফ্রুটে অংশ।
ৰাগদাদ বন্দায় নেমে প্রথমেই বানিম সুন্দর একটি বাড়ি ভাড়া
করল বাড়িতে নিশশেয়গুন একটি গুদাম ঘর। সব মালপত্র
শুশমজাত করে ঘন্টিঃ বাগদাদ নগরটি দেখার জন) বেরিয়ে পড়ল।
এখানে তার আব্বু দীর্ঘদিন ব্যবসা করে গেছে। অনেকেই তাকে
চিত! ফলে কাবার পরিচয় নিয়ে ঘমি সহঙ্কেই এখানকার
মানুষের সঙ্গে অন্তরঙ্গভাবে মিশে যেতে লাগল। আর কাপড় ও
লেবের নির্যাস বেচে প্রচুর মুনাফা মিটতে লাগল। আর হবে নাই
বা কেন? সিন্ডের এমন সেরা কাপড় আর এমন মিষ্টি ও দীর্নস্থায়ী
প্রভাবের নির্বাস যে সচরাচর মেলেই না।
দেখতে দেখতে পুরো একটি বছর কেটে গেল। এক বিকেলে
ঘানিম কয়েকটি কাপড় নিয়ে বাজারে গেল। বাজারের ফাঁকে পা
দিয়েই থমকে দাঁড়াল। দোকানপটি সব বন্ধ। এমন কি ফটকটি
পর্যন্ত খেলা হয় নি।
ঘানিয় দু'পা পিছিয়ে এক পথচারীকে জিজ্ঞেস করে জানতে
পারলে একজন খুব গড় ব্যবসায়ী মারা গেছে। দোকানীরা তার
মরদেহ নিয়ে গোরস্তানে গেছে।
ঘানিমণ্ড গোরস্তানের উদ্দেশ্যে শ বাড়পি। লম্বা-লম্বা পায়ে
কিছুদূর।যেতেই এক নসজিদের শানে ভিড় দেখতে পেল। বুনাল,
মরদেই সেখানে নামনো হয়েছে। দোকানিরা তাদের দুঃসময়ে এক
প্রদেশীকে দেখে খুশীই হ'ল
অনেক রাত্রে গোর দেওয়া হ'ল।
বার্লিম ভাবল, এত রাত্রি হয়ে গেল। গুদাম অরক্ষিত রয়েছে।
তালা ভেঙে সব কিছু চুরি করে নেওয়া কিছুমাত্রও বিভিন্ন নয় সে।
তখন উর্ধ্বমাসে বাড়ির দিকে ছুটতে লাগল। মিন্টুম-নিস্ত
চারদিক, সে ছুটতে ছুটতে বেশী দূরে যেতে পারল না। সামনেই
বিশাল এক ঝোপ-ঝাড় পড়ায় থমকে দাঁড়িয়ে পড়তে হল
শেয়াল, পেঁচা, ভোমড় আর রাতজাগা কত সব পাখির বিচির
ডাকাডাকি হাঁকাহাঁকিতে তার সর্বাঙ্গে কাঁটা দিয়ে উঠল। তা
পরিস্থিতিতে কি কর্তব্য সহসা ভেবে উঠাতে পারল না এমন সময়।
এক অবিশ্বাস: দৃশ্যের মুখোমুখি হল। কুচকুচে কালো অভিনয় এক
জানোয়ারের মত কে যেন তার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। ভয়ে
তার স্বাঙ্গে যাম বেরোতে লাগল। এবার সে উপায়ান্তর না দেখে
পিছন ফিরে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটতে লাগল। উদ্ভ্রান্তের মত ছুটতে ছুটতে
ঘানিম একটি গোরস্থানে ঢুকে পড়ল: এখন আর তাঁর মন থেকে
গুদাম আর সমানপাত্রের চিন্তা পালিয়ে গেছে। নিজের জান
বাঁচানোর চিন্তাই সবচেয়ে বড় বলে দেখা দিয়েছে।
দু’পা এগিয়েই ঘনিম একটি বড়সড় সমাধি দেখতে পেল।
কোন অমীর ওমরাহবে হয়ত এখানে গোর দেওয়া হয়েছে। তার
চলাফেরা তো দুরের কথা দাড়িয়ে থাকার মত ক্ষমতাও সে হারিয়ে
ফেলেছে। অনন্যোপায় হয়ে সে সমাধি সৌধটির গায়ে হেলান
দিয়ে বসে পড়ল। তার আগেই সদর দরজাটি বন্ধ করে দিয়েছিল।
রাত্রি ক্রমে গভীর হতে থাকে। স্বামি এবার দেখতে পেল একটি
স্বলন্ত লণ্ঠন তার দিকে এগিয়ে আসছে। ভয়ে কুঁকড়ে যেতে লাগল।
মুহূর্তে একটি জব্বর ফন্দি তার মাথায় এল! পাশের একটি সুউচ্চ
নারকেল গাছে ভরতর করে উঠে পড়ল। সেখের পলকে গাছের
একদম মাথায় চলে গেল। গাছের হাতায় বসে সে দেখতে পেল,
লণ্ঠন নিয়ে তিনটি ইয়া লম্বাচওড়া নিগ্রো এগিয়ে আসছে। দু'জন
মাথায় করে অতিকায় একটি বাক্ত বহন করছে। আর তৃতীয় জনের
হাতে সণ্ঠন ও একটি কেদল।
নিগ্রোদের একজন বলল-- নির্বাহ গোরস্থানের ভেতরে কোন
লোক আছে। নইলে দরজা বন্ধ করল কে? আমরা তো একটু
আগেই দরজাটি খুলে রেখে গিয়েছিলাম।
অন্য দু’জন তাকে সমর্থন করল।
এদিকে ঘালিম এর অবস্থা সঙ্গী-ই, আতঙ্কে কাঁপতে কাঁপছে
সে যে কোন সময় ধপাস করে নারকেল গাছের মাথা থেকে পড়ে
যেতে পারে। আর নিজে থেকে যদি না-পড়ে ভবে নিখোগুলো
নির্ঘাৎ ডাকে টেনে হিচড়ে নামিয়ে নেবে।
আগষক নিয়োগের একজন প্রাচীর টপকে ভেতরে ঢুকল। তার
পর সদর-রজা খুলে সঙ্গীদের ভেতরে নিয়ে গেল। ভেতরে ঢুকে
তারা কাঁধ থেকে বান্ধটি নামাল
নিগ্রোদের একঝন বলল—'কী লম্বা পথ রে! ফুয়োতেই চায়
না! কখন যে বান্ধটা কাধে নিয়েছি মনেই নেই। আমি ভাই একটু
বিশ্র:ম টিশ্রাম না করে এক কোথাল মার্টও কাটতে পারবো না।
তোরা যদি পারিস করণে যা। এই আমি এখানে বসে পড়লাম। কথা
বলতে বলতে সে তার দশসই শরীরটিকে ধপাস করে মাটিতে
ফেলে দিল। তার সঙ্গীরা ও পাশে বসল।
অন্য একজন বস ——'ভাইয়া, হাঁটাহাঁটিতে শরীর কাহিল!
চোখে নিঁদ জড়িয়ে রয়েছে। এত রাত্রে চুপচাপ বসে থাকলে নির
চলে আসবে। তবেই কম হতে। একদম সকালের আগে নিম্ন টুটবে
না। তার চেয়ে বরং আমরা আপন আপন খোলা হবার কাহিনী বলে
সময় কাটাই।
তার সঙ্গীরা তাকে সমর্থন করণ।
বেগম শাহরাজাদ জামালা দিয়ে দেখতে পেলেন প্রাসাদের
বাইরের বাগিচায় একটু একটু ভোরের আলো দেখা দিতে শুরু
করেছে। তিনি কিস্সা বন্ধ করলেন।
আটত্রিশতম রজনী
রাত্রি একটু গভীর হতেই বাদশাহ শারিয়ার বেগমের ঘরে
এলেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
জয় গুরু
বিশুদ্ধ প্রচারের স্বার্থে -
আপনার যে কোন মন্ত্যব, অভিযোগ, অনুরোধ আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান। ...