আমার বড় ভাইয়া বাকরুক বাগদাদ নগরের এক নামকরা দার্জি
ছিল। এক লব্ধ প্রতিষ্ঠ বণিকের কাছ থেকে সে দোকান ঘরটি 138
নিয়েছিল। সে ছিল নিচতলায় আর ওপরতলায় থাকত বাড়িওয়ালা।
নিচতলার একধারে একটি কলুর ঘানি ছিল।
একদিন আমার বড় ভাইয়া কাপড় সেলাই করছিল।
কাজের ফাঁকে তাকিয়ে দেখে ওপরতলার বারান্দায় এক
খুবসুরৎ বিবি দাঁড়িয়ে রাস্তার আদমি দেখছে। পরে অবশ্য সে
জেনেছিল, বাড়িওলার বিবি। তার সুরৎ দেখে আমার বড় ভাইয়া
মনে মনে তাকে মহব্বত করে ফেলে। মহব্বতে একেবারে
মাতোয়ারা। তার সেলাইয়ের কাজ শিকেয় উঠল।
একদিন দোকান খুলেই আমার বড় ভাইয়া কাপড় আর সূঁচ-
সূতো নিয়ে বসল। কাজে মন নেই। ওপর তলার বারান্দার দিকে
চোখ। কিন্তু তার মেহবুবা, সে-বিবি আর এল না। কাপড় সেলাই
করতে গিয়ে সূঁচের ডগা দিয়ে সে আঙুলে হাজার ছিদ্র করে ফেল্ল।
কিন্তু তার মনময়ূরীর দেখা মিল্ল না মুহূর্তের জন্যও। রুজি



রোজগার বন্ধ। বাজার হাট করবে কি দিয়ে ? সংসারের হালৎ
■ সামিরা হয়ে দাঁড়াল।
কাপারটি অবশ৷ পরে পেপসা হয়ে গিয়েছিল। ইচ্ছে করেই
বাড়িওয়ালার বিবি তামার বড় ভাইয়াকে নাচানের মতলব
নিয়েছিল। দুটো উদ্দেশ্য ছিল তার—প্রথমতঃ তার রেজগারপাতি
বন্ধ করা আর দ্বিতীয়তঃ তার কলিজায় মহব্বভের আগুন জ্বালিয়ে
দেওয়া। সে নাকি এর আগেও তার অর ডাগর চোখের বাণে বহুত
লেড়কাকে সর্বনাশের শেষ সীমায় পৌঁছে দিয়েছে
পরদিন বহে বাড়িওয়ালা একটি রেশমী কাপড় নিয়ে আমার
বড় ভহিয়ার দোকানে হাজির হই। তার ধারণা, কাপড়টি দিয়ে
কয়েকটি কোর্তা স্পোই করে দিতে হবে।
আমার বড় ভাইয়া তো মহাখুশী। সারাদিন মাথার ঘাম পায়ে
ফেলে কুড়িটা কোর্তা বানিয়ে ফেল্‌স। কোর্তা পেয়ে বড়িওয়ালা
তার ওপর খুবই সন্তুষ্ট হ'ল।
কোর্তা বুঝে নিয়ে বাড়িওয়ালা মজুরি দিতে গেল। আমার বড়
ভাইয়া কিছুতেই মজুরি নিতে চাইল না। দেবেই বা কি করে? ঠিক
তখনই যে তার মেহবুবা, বাড়িওয়ালার বিবি ওর তলার বারান্দায়
দাঁড়িয়ে হাতে ইশারা করেছে যেন মজুরি না নেয় । বাড়িওয়ালা শত
পড়িপীড়ি করা সত্ত্বেও সে মজুরি নিল না।
এদিকে আমার বড় ভাইয়ার অবস্থা খুবই সঙ্গীন। কোর্তার
জেবে একটি কানাকড়িও নেই। বাড়িতে চুা পর্যন্ত জ্বলে নি। তার
ধারণা হ'ই স্বামীকে বিনা মজুরিতে পোশাক বানিয়ে দিলে তার বিনি
তার দিকে ঝুঁকবে।
হায়রে আহাম্মক কাহাকার মাথায় গোবর পোরা। না হলে
ধরতে পারল না যে, তারা স্বামী-স্ত্রীতে মুক্তি করে তাকে দিয়ে বিনা
পরিশ্রমিকে কাজটি হাসিল করে নিয়েছে।
পরদিন দোকান খুলতে না মুখতেই এলাদা কাপড় নিয়ে
বাড়িওয়ালা ফিন হাঞ্জির হ'ল। কতগুলি পাতলুন বানিয়ে দিতে
বল্গ। শুরু হ’ল অমানুষিক পরিশ্রম তৈরি করে ফেল্ল তার
ফরমাস অনুযায়ী কতকগুলো পাতলুন।
পাতলুনগুলো বুঝে পেরে বাড়িওয়াল: কোর্তার জেবে হাত
ঢোকাতে ঢোকাতে মজুরির কথা জিজ্ঞাসা করল। ঠিক সে মুহূর্তেই
দরজার ছিদ্র দিয়ে একটি চোখ দেখতে পেল। তার বুঝতে দেরী
হ’ল না চোখের মালিকটি কে। আমার বড় ভাইয়া তো তখন ধরাও
গেলে পৌলে মরা। এক চোইে ইশারা করে বাড়িওয়ালার বিলি
তাকে মজুরি নিতে বারণ করল, এবারও কোকটে এতগুলো পাতলুন
তাকে করে দিতে হ'ল।
ক্তের এখনও ফাঁকা। বাড়ির সবাই উৎপোষ করে কাটাচ্ছে।
আমার বোকা বড় ভাইটি এবাশুও বুঝতে পারল না বাড়িওয়ালা ও


তার বিবি ফন্দি করে তাকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিচ্ছে। বোকা গাধা
কোথাকার।
বাড়িওয়ালা এবার বল্ল —'তুমি আমার জন্য অনেক স্বার্থত্যাগ
করেছ। তার প্রতিদান স্বরূপ আমার বিবি তোমার জন্য কিছু করতে
মৃত্যুগ্র আগ্রহী। আমাদের বাড়িতে এক ঝি কাজ করে।
বুবসুরৎ না হলেও তাকে কুৎসিত বলা যায় না। তাকে শাদী করে
সুখে ঘর সংসার কর।'
আমার বোকা অপদার্থ বড় ভাইয়া এক কথাতেই তাদের পাতা
ফাঁদে মাথা গলিয়ে দিল। শাদীর প্রস্তাবটিকে পায়ে ঠেলতে পারল
না। তাদের শাদী হয়ে গেল। নিচতলার ঘানির ঘরে তাদের বাসর
সাজানো হ’ল। রাত একটু বেশী হলে আমার আহম্মক বড় ভাইয়া
বাসর ঘরে গেল।
আমার বড় ভাইয়া তার সদ্য শাদী করা বিবির মধ্যে ঔদাসিন্য
লক্ষ্য করল। সে গোড়াতেই সাফাই গাইল—'আজ কিছু হবে না।
তোমার সাধ পূরণ করার সাধ্য আজ আমার নেই। আজ আমি অশুচি
হয়েছি। এ অবস্থায় সহবাস তো দূরের কথা এক বিছানায় বসাও
বারণ। আজকের রাতটুকু তুমি এখানে একাই থাক মেহবুবা। আমি
ওপর তলায় গিয়ে শুয়ে পড়ছি।' কথা বলতে বলতে তার বিবি
গটমট করে ওপর তলায় চলে গেল।
এদিকে আমার বড় ভাইয়া ঘানির ঘরে সজ্জিত বাসরে একা রয়ে
গেল। চিৎকার চেঁচামেচি শুনে আমার বড় ভাইয়ার নিদ টুটে গেল।
মালিক কলু এবার বলদের পরিবর্তে দিল তাকে জোয়ালের সঙ্গে


জুড়ে। সে কর্কশ গলায় গর্জে উঠে বল---সে ঘানি টানবে না। ব্যস,
আর যাবে কোথায় সপাং-সপাং করে তার পিঠে চাবুক পড়তে
পাগল। ফলে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে সারাটি দিন অমানুষিক
পরিশ্রম করে সে ঘানি টেনে চল।
1
হতচ্ছাড়া বাড়িওয়াশ দোতলার বারা থেকে আমার বড়
ভাইয়ার তকলিফ দেখে নীরবে ঠোঁট টিপে টিপে হাসতে লাগল।
বিকে গড়িয়ে সন্ধ্যা হওয়ার ঠিক আগে আমার বড় ভাইয়ার
কাঁধ থেকে যানির জোয়াল নামানো হ’ল। তার মুখ দিয়ে তখন ফেলা
বেরোবার উপক্রম হ’ল। চাবুকের ঘায়ে তার পিঠ ছড়ে গিয়ে বেশ
কয়েক জায়গা দিয়ে চুঁইয়ে চুঁইয়ে খুন বেরোচ্ছে। বাড়িওয়ালা এসে
। নাকে কান্না জুড়ে দিল। সমবেদনা প্রকাশ করল নানাভাবে। চাপা
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বল- 'মনে কর বড় রকমের একটি দুর্ঘটনা ঘটে
গেছে। আমি যদি ঘুণাক্ষরেও জানতে পারতাম তবে কি পার এতবড়
। অঘটন ঘটতে পারত?
Űj
|
=
6
বাড়িওয়ালা চোখে-মুখে কৃত্রিম বিষাদের ছাপ এঁকে বিদায় নিলে
ও চাকরানীটি এখ। তার মুখেও কৃত্রিম বিষাদের ছায়া। বল্ল–আহা
রে! আমার মেহবুৎকে এমন করে গরুপেটা করেছে। কলু বেটা
এমন অমানুষ আগে জানা ছিল না তো! ওদিকে আমার মালকিন
তোমার নসীবের কথা শুনে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন। এমন মারাত্মক
য় ভুলের কথা উল্লেখ করে তিনি স্বামীর সঙ্গে রীতিমত কোমর বেঁধে
ঝগড়া জুড়ে দিয়েছেন।'
চাকরানী বিদায় দিলে আমার বড় ভাইয়ার কাছে এ তার
বিয়ের শব্ক্ষী। তদের বিয়ের বুলনামায় যে একমাণ সাক্ষী হিসাবে
স্বাক্ষর করেছিল, সে লোকটি এল। তার সঙ্গীন অবস্থা দেখে সে
বহুভাবে অনুশোচনা প্রকাশ করল। তারপর বল—'ভূমি এক কাঞ্চ
কর লোভ, নচ্ছার লেড়কিটিকে তালাক বাও। তারই জন্যই তোমার
ওপর যত নির্যাতন নিপীড়ন হয়েছে।'
——'ভালাক? তালাক দিতে হলে অর্থ ব্যয় হবে তা জোগাড়
করাই আমার পক্ষে কঠিন সমস্যা।
ক্ষীটি চলে যাবার পর সে-চাকরানী আবার ভাল মনুষের মত
মুখ করে আমার বড় ভাইয়ার সামনে এসে দাঁড়াল। তার কানের
কাছে মুখ নিয়ে অনুচ্চ কণ্ঠে বল্‌ল— 'আমার মালকিন তোমার জন্য
পাগল হয়ে যাবার জোগাড়। তোমার মহব্বতে সে একেবারে পাগল
হয়ে গেছে গো! তার কলিজাটি তোমার জন্য অকুপাকু করছে!
আমার সবচেয়ে বড় ভয় তুমি যদি তাকে পিরার মহকং করতে
অস্বীকার কর তবে সে হয়ত আত্মহত্যাই করে বসবে। একটি বার
তোমাকে কাছে না পেলে, তার যৌবনভরা দেহটির মূল্য যে এক
কানাকড়িও নেই। একটিবার তোমাকে বুকে জড়িয়ে ধরে চুম্বন
করে মানবজীবন ধন্য করতে নিতান্ত আগ্রহী। আর আজ রাত্রে


তোমাকে শৰ্য্যাসঙ্গী করে মজা লুঠতে চায়। আমার কথা বিশ্বাস'
করতে বলছি না, ওপরের বারান্দার দিকে তাকালেই চোখ-কাদের
বিবাদ ভঞ্জন হয়ে যাবে।'
আমার বড় ভাইয়া বাকবুক যে আহ্লাদে একেবারে গলে গেল।
ওপরের বারান্দার দিকে চোখ ফেরাতেই বাড়িওয়ালার বিবি
আচমকা সুরমা আঁকা চোখের বাপ মারল। আর করা.জাড়ে কাতর
মিনতি আনাল। ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিল, রাত্রে বাড়িওয়াঙ্গা থাকবে না।
জার বুঝাল আমার এ-জ্ঞান এ কলিঝা কেবলমাত্র তোমার ভোগের
জন্যই সযত্বে রক্ষা করছি। তোমাকে আমার যৌবন-সুধা দান করতে
না পারলে বেবাক মুলাহীন হয়ে পড়বে।
তার ক্ষোভ নিমেষে উঠে গেল। চোখের ভাষায় জানিয়ে দিল।
ফারে—অবশ্যই যাবে। আজ রাত্রিই হবে জীবনের প্রথম মধুরাত্রি।
দেয়া নেয়া পর্ব।
সারাদিন অফুরন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে আমার বড় ভাইয়া
কাটাল। তার খুনে মাতন লাগল।
কিন্তু বাড়িওয়ালা ও তার বিবি যে নতুন ফাঁদ পাতার পরিকল্পনা
করে চলেছে বোকা হাঁদাটি জানতেও পারল না।
রাত্রি গভীর হলে চাকরানীটি গুটিগুটি এসে তার দরওয়াজায়
কড়া নাড়ল। সে দরওয়াজা খুলে বেরিয়ে গেল। চাকরানীর সঙ্গে
পা টিপে টিপে ওপর তলায় গেল। বিবি তাকে বসতে দিয়ে
ব— 'মেহবুব আমার! তোমার জন্য আমার কলিঙ্গ উথলি
| পাথালি করছে। তুমি আমার জান। আমার দিটি ফলে পুড়ে খাঁক
| হয়ে গেল। তাড়াতাড়ি শান্তিপানি ছিটিয়ে জ্বালা জুড়ঙ। নাও,
সম্ভোগের মাধ্যমে আমাকে তৃপ্তি দাও, নিকে তৃপ্ত হও।
আমার আহম্মক বড় ভাইয়া তো ভাবে একেবারে গদগদ হয়ে
ওঠে! তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য ছটফট করতে থাকে।
বাড়িওয়ালার বিবি আবেগ মিশ্রিত স্বরে বলে——মেহবুব
আমার। একটু অপেক্ষা কর। অাগে খানাপিনা কর। তারপর
সারারাত ধরে চলবে আমাদের পিয়ার মহব্বতের নেশা। আমার বড়
ভাইয়া আচ২২া পায়ে ফটি! ফুটে আহত ব্যক্তির মত আবার
কুরশিতে বসে পড়ল। নিজের আচরণের জন্য যারপরনাই লজ্জিত
হয়। সারারাত যাকে দলন, পেষণ আর সম্ভোগ করবে ডাকে সামান্য
আলিঙ্গন-চুম্বনের জন্য এমন উত্তলা হয়ে পড়েছে। তার মেহবুবা
নিশ্চয়ই তাকে বড়পু ভিখারীর মত জ্ঞান করছে। ছিঃ তার কাছে।
ক'ত ছোট হতে হ’
এমন সময় বাড়িওয়ালা আচমকা ঘরে ঢুকল। তার পিছন পিছ
ঢুকল দু’ষ্ঠান নিগ্রো গুপ্তা। কোন কথা নেই, তারা ঘরে ঢুকেই আমার
বড় ভাইয়াকে এলোপাথাড়ি কিল-চড়-লাপি মারতে লাগল।
তারপর শুরু হ’ল চাবুকের কেরামতি। পিঠ কেটে খুন বেরোতে



লাগল। সংজ্ঞা হারিয়ে লুটিয়ে পড়ল। সংজ্ঞা একটু ফিরতেই এবার
তাকে নিয়ে কোতোয়ালের সামনে হাজির করল। তিনি সবকিছু শুনে
দু’শঘা বেত লাগাবার হুকুম দিলেন। বেতের আঘাতে সারা গা দিয়ে
খুন ঝরতে লাগল। এবার তার হুকুমে উটের পিছনে বেঁধে সারা নগর
ঘোরানো হ’ল তার ক্ষত বিক্ষত দেহটিকে। উটটি এক সময়
আচমকা লাফিয়ে ওঠায় সে কয়েক হাত দূরে ছিটকে পড়ে। তখনই
তার পায়ের হাড় ভেঙে যায়। সে ল্যাংড়া হয়ে পড়ে। কোতোয়াল
কিছুদিনের জন্য তাকে নগর থেকে বের করেও দিয়েছিল। এখন
আমার সঙ্গেই বাস করছে।'
আমার বড় ভাইয়া বাকবুক-এর কিস্সা শুনে খলিফা অল-
। মুসতানসির বিল্লাহ তো হেসে মাটিতে গড়াগড়ি যাবার উপক্রম হলেন।