শেষাংশ
নিগ্রো যুবক তিনটি বিদায় নিলে ঘানিম নারকেল গাছ থেকে
নামল। বাস্ত-হাতে মাটি তুলে বাক্সটিকে গর্ত থেকে বের করে
আনল। পাথর দিয়ে আঘাত করে তালাটি ভেঙে ফেল্ল। বারে 17
ডালা ভুলতেই সচকিত হয়ে পড়ল। বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে পড়ার
জোগাড়। শরীরের সবক'টি স্নায়ু যেন একসঙ্গে ঝনঝনিয়ে উঠল।
এক রূপসী তন্বী যুবতী চোখবুজে শুয়ে খুবসুরৎ লেড়কি ঘুমিয়ে
রয়েছে। তার পরনে সোনার জরির কাজ করা বহুমূল্য সিল্কের
পোশাক। জড়োয়া হার, হীরের নাকছাবি, টায়রা, বিছা আর হীরা
জহরত ব্যবহৃত তাগা—সবই রয়েছে একনজরে দেখলেই
মনেহয় কোন বাদশাহ বা সুলতান নিদেন পক্ষে কোন প্রখ্যাত
উজিরের লেড়কি।
ঘানিম বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে এক সময় তার বুকের ওপর হাত
রাখল। বেশ গরমই বোধ হ’ল তার। নিঃসন্দেহ হ'ল, জীবিত।
নাকের কাছে কোন ওষুধ ধরে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। তার
নাকের কাছে নিজের নাকটি এগিয়ে নিল। হ্যাঁ, ওষুধের গন্ধ পেল।
লেড়কিটি ঘুমে একেবারে অচৈতন্য। বার কয়েক আলতো
করে ধাক্কা দিল, কোনই সাড়া নেই। নাকের ছিদ্রপথে সরু একটি
কাঠি ঢুকিয়ে শুড়সুড়ি দিল। মনে হ’ল নাকটি সরিয়ে নিতে চাচ্ছে !
তারপর বার কয়েক হাঁচি দিল। আরও কয়েক মুহূর্ত এভাবে থাকার
পর এক সময় চোখ মেলে তাকাল রহস্যময়ী লেড়কিটি। মনে হল
লেড়কিটি যেন তার সামনের সবকিছুকে আবছা দেখছে। তখনও
তার মধ্য থেকে তন্ত্রাভাব কাটে নি।
এক সময় লেড়কির ঠোঁট দুটো তিরতির করে কাঁপতে লাগল।
মনে হ’ল কিছু বলতে চাইছে। প্রায় অস্ফুট অস্পষ্টতার স্বর। উৎকর্ণ
হয়ে শোনার পর ঘানিম তার কথায় টুকরো টুকরো দু'-একটি
শব্দের অর্থ উদ্ধার করতে পারল। 'এ-ক-টু পা-নি, এ-ক-টু পা-নি
-ও। কী গ-র-ম। বা-তা-স, এ-ক-টু বাতা-স!'
বাস, আবার এলিয়ে পড়ল। চোখ গেল আগের মতই বন্ধ
মিনিট খানেক যেতে না যেতেই এবার অধিকতর স্পষ্ট উচ্চারণ
কর বলতে লাগা --- 'বাতাস! রাজিয়া, সীতারা আয়, আমার
কাছে আয়। একটু বাতাস কর! উঃ কী গরম! সব জ্বলেপুড়ে গেল।
কে জবাব দেবে! কোথায় তার রাজিয়া, আর কোথায়ই বা
সীতারা। কে-ই বা তার কাছে যাবে বাতাস করবে। ঘানিম আর
বাক্সের ভেতরে শায়িতা লেডকিটি ছাড়া ধারে কাছে কেউ থাকলে
তো তার কথায় সাড়া দেবে।
এবার তার দৃষ্টি যেন কিছুটা স্বচ্ছ হয়ে আসছে মনে হ'ল। সে
অস্থিরভাবে এদিক-ওদিক দৃষ্টি ফেরাতে লাগল। এক সময়
আর্তনাদ করে উঠল—'আমি কোথায়? আমি এখানে, গোরস্থানে
কেন? কে আমাকে এ-গোরস্থানে নিয়ে এল। আমার প্রাসাদ?
প্রাসাদের হারেম? আমার নোকর, শফর আর মোজারা সব গেল
কোথায়? খোনা—কে এরকম সর্বনাশ আমার করল? কোন
বেইমন আমাকে গোরস্থানে পাঠাল?"
তাকাল।
লেড়কিটি এবার ঘানিমের মুখের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি মেলে
খামি ধপ্ল–'রূপসী, আমি ঘানিম ইবন আয়ুব।
প্রাসাদ ছেড়ে এ নির্জন গোরস্থানে এসে পড়লেও তোমার ভয়-
ডরের কোন কারণ নেই। আমি থাকতে তোমার কোন ক্ষতিই কেউ
করতে পারবে না, বিশ্বাস রাখ। যদি পারি তোমার উপকারই করব,
সর্বনাশ করতে তিলমাত্র চেষ্টাও করব না, বিশ্বাস রাখতে পার।
খোদাতারা হয়ত তোমার সাহায্যের জন্যই আমাকে এখানে এনে
ফেলেছেন। নইলে আমার এখানে আগমন তোমর আগমনের
মতই, একেবারে অপ্রত্যাশিতই বটে।'
পেড়কিটি এবার বল—'আমি কি খোৱাব দেখছি? তা নইলে
এখানে, এ-গেরস্থানে এলাম কি করে?
ঘার্নিম এবার তিন খোজা নিগ্রো যুবকের কীর্তির কথা তার
কাছে ব্যক্ত করল।
লেড়কিটি এবার যেন কিছুটা স্বাভাবিক হতে পেরেছে
যানিমকে বল—'ডাক কাজ কর। আমি যুক্তের মধ্যে যেমনটি
ছিলাম ঠিক তেমনি রেখে তালা দাও তারপর একটি খচ্চর জোগাড়
করার কোসিস কর। তোমার ঘরে আমাকে নিয়ে চল। আমার সব
কথা, জ্ঞামার করুণ কাহিনী তোমাকে শোনাব।
সকাল হতে না হতেই ঘনিম একটি খচ্চর জোগাড় করে
ফেল। তার পিঠে বাক্সটি চাপিয়ে নিজের ভাড়া বাড়ির দিকে যাত্রা
করল। তার বাসায় পৌঁছোতে একটু বেলাই হয়ে গেল।
ফিস্সার এ-পর্যন্ত বলার পর ভোর হয়ে আসছে বুঝতে পেরে
বেগম শাহরাম্মাদ তার কিস্সা বন্ধ করল।
চল্লিশতম রজনী
বাদশাহ শারিয়ার আজ অন্যদিনের চেয়ে একটু আগেই বেগম
শাহরাঞ্জাস এর কাছে এলেন।
বেগম শাহরাজান তাঁর কিত্সার পরবর্তী অংশ শুরু করতে
গিয়ে বললেন— 'জাহাপনা, ঘানিম খচ্চরের পিঠ থেকে
লেড়কিটিকে বাক্স সমেত নামিয়ে নিজের ঘরে নিয়ে গেল। ডালা
খুলে তাকে বের করে তাকে পালঙ্কে বসান। সে অনুসন্ধিৎসু
দৃষ্টিমেলে ঘরের সব কিছু দেখতে লাগল।
যানিম লেড়কিটি থেকে যথা সম্ভব দূরে ফার্টের এক কোণে
বসল। ব্যাপারটি কিন্তু লেড়কিটির মনের মত হ'ল না। সে সরতে
সরতে একেবারে ধানিম-এর গা-ঘেঁষে বসল। খিল্ খিক্ করে
হেসে বল্ল-- তুমি যেন আমার সঙ্গে কেমন করছ। এত দূরে
বসলে কখনও ভাল লাগে হই। দূরে দূরেই যদি রাখবে তবে
গোরস্থান থেকে নিজের ঘরে নিয়ে এলে কেন?'
ঘানিম কি জবাব দেবে ভেবে না পেয়ে সোশন মত ফ্যাল ফ্যাল
করে তাকিয়ে থাকে। এক সময় আমতা আমতা করে
| বলে – বলছিলাম কি, মানে--
– থাক খুব হয়েছে। এবার দেখতে। ঘরে যাবার কিছু আছে
কিনা বিদেতে পেটের ভেতরে আগুন জ্বলছে বর্নিম উঠে গিয়ে
বাম থেকে কয়েকটি লাড্ডু এলে লেড়কিটির দাম রাখল।
সে একটি গাড্ডু তুলে নিয়ে ঘানিম-এর মুখে পুরে দিল।
পেড়কিটি? আঙুল ঘ'নিম-এর ঠোঁট দুটো স্পর্শ করা মাত্র কেমন
এক বিটির অনুভূতি তার দেহ মনে জাগে। সর্বাঙ্গে বিদ্যুতের
শিহরণ দেখা গেল। সে স্তম্ভিত হয়ে যায়। কোন নারীর দেহের
| স্পর্শ এর আগে সে আর মুহূর্তের জন্য অনুভব করে নি। জীবনের
নতুনতর ‘স্বাদ’, নতুনত্তর উত্তেজনা, নতুনতর কানন্দ সে আত্ম
অনুভব করল।
লেড়কিটি আরও সামান্য কাছে ঘেঁষে বসল : নিজের মুখটি ভার
মুখের কাছাকাছি নিয়ে পেস্
ঘালিম নির্বিকার। ভেতরের উত্তেজনাকে জোর করে প্রশমিত
করল। লেড়কিটি এবং অডিমানের স্বরে বলল— 'আহা, এমন
লঙ্কা শরম তো ভাল নয়।'
থানিক এবারও নির্মক ও নির্বিকার রইল। চোখের তারা দু'টে;
স্কুল জ্বল করতে থাকে।
লড়কিটি আবেগ মধুর স্বরে বলল—'আবে, এমন করলে তে!
চলবে না। আমাকে ঘরে নিয়ে এসে অনাদর করবে। আমি যে অস্ত্র
তোমার মেহমান গে’ মেহমানকে আদর আপ্যায়ন করতে হয়
'তাও বুঝি তোমার জানা নেই? লাড্ডু এনে দিয়েই দায়িত্ব শেষ
করতে চাচ্ছ নকি? পাইয়ে দেবে না! আমাকে খাইয়ে দাও!'
বার্নিম একটি লাড্ডু নিয়ে এর মুখে গুঁজে দেয়। তারপর বদনা
থেকে ফল দিতে গিয়ে তার কামিজে কিছুটা জল ফেলে দেয়।
লজ্জা, আতঙ্ক ও ব্যস্ততার জন্য এমন একটি অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটে
গল।
লেড়কিটি বলল—'এতে কিছু হবে না। কিন্তু তোমার ধরে কি
অতিরিক্ত কামিজটামিজ আছে।”
—'কামিজ ? আমি কামিজ পাব কোথায়? আমি কি শাদী
করেছি যে কামিজ থাকবে?'
—তাই বল। তবে তো তুমি একেবারে সন্ত্রী গো।'
ঘানিম দৌড়ে গিয়ে একটি শুকনো তোয়ালে দিয়ে সা
গোড়াভিটি ছিল ছিল করে হেসে উঠ
ঘানিম বল্ল-—'হাসছ কেন? এতে আবার হাসার কি হ’ল,
বুঝছি না তো। তোয়ালেটি দিয়ে মুছে ফেল।'
— 'থাক, মুহতে হবে না। একটু-আবটু ভেজাটেজা পাকা ভাল।
নইলে আবার তোমার মত কাঠখোট্টা হয়ে যান যে?
ফ্লেকিটি ঘানিমকে দিয়ে সরাবের বোতল আাল। নিজে
গেল, ধার্নিমকেও শাওয়াল। খুব মৌজ করে খেল। সরবের চেশায়
লেড়কিটির চোখ দুটো আবেশে ত্রুড়িয়ে আসতে লাগল। সে
ধার্নিস এর কোলে মাথা রেখে শরীর এলিয়ে দিল। ধার্নিম-এর দেহ
মনে এক অনাস্বাদিক পুলবেন্দ্র সঞ্চার হয়। শিরায় উপশিরায়
রক্তের গতি ক্রমে দ্রুত থেকে দ্রুততর হতে থাকে। এরকম
অনুভূতির স্বাদ এর আগে কোনদিনই সে পায় নি।
লেডার্কটির চোখ দুটো আবেশে চুল ঢুরু হয়ে আসতে থাকে।
আবেগ মধুর স্বরে বলে — তুমি যেন একটা কি। কিছু বোঝ না:
হাতের আঙুলগুলো দিয়ে আমার মাথায় একটু বিলি কেটে দাও না
পো।
কয়েক মুহূর্ত্ত পরে লেড়কিটি অনুযোগের স্বরে বলে না
হচ্ছে কি, শুনি। একে বুঝি মথায় হাত বোলানো বলে ?
যানিমের শরমে মরে যাবার জোগাড় হল | আনলে কখন যে
লেড়কিটির মাথা থেকে হাতটি তার গ্যাল নেমে এসেছিল তা সে
নিজেই জানে না। ফলে আচমক; হতটি ভূলে নিয়ে এল। আবার
মাথায় রেখে আলতোভাবে চুলে তিনি ফাটতে লাগল
৫েকিটি আনন্দানুভূতিতে চোখ দুটো বন্ধ করে মানিম-এর
কোলে পড়ে থাকে।
দানিম সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে গিয়ে লেড় ভর্তির আে
রাঙা তুলতুলে ঠোঁট দুটোর দিকে সতৃষ্ণ নয়নে তাকিয়ে থাকে।
আবার মাথা থেকে হাতটি নেমে এল তার বিদায়ী সূর্যের বঙ্কিম
আভার মত টুকটুকে গাল দুটোর ওপর। মসৃণ, নরম ও নিটোল,
| বাহার!
লেডন্টিটি আবার সরবে হেসে ওঠে। হাসতে হাসতে বল্ল
--কি গো, হেলে গেলে দেখছি। হাতটি যে আবারও মাখা থেকে
গালে নেমে এল। এবার বুঝলান, ভূমি হডই ভেল বেড়ালের মত
থাক না কেন, আসলে কিন্তু তা নয়। এক রোক্ত হয়। আর এক
বোত্তল সরাব নিয়ে এসো। নেশার ঝোঁক কেটে গেলে দিনটিই
বরবাদ হয়ে যাবে।
তারা সারাদিন সরাব পান, গান-বাজনা, হাসি-তামাশ প্রভৃতির
মাধ্যমে কাটিয়ে দিল।
সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত্রির অপকার নেমে এল বাপদাদ নগরীর বুঝে।
নানিম তার মেহমানকে নিয়ে পালঙ্কের ওপরে বসে তার
অতীত জীবনের কথা শোনায়।
রাত্রি ক্রমে গভীর হয়। তারা আরও কাছাকাছি একেবারে গা-
ঘেঁষা-ঘেঁষি করে বসে।
সারাদিন ঘানিম নিজেকে সংযত রেখেছে। যৌবনের ক্ষুধা
তাকে উত্তেজিত করেছে, খুনে জাগিয়েছে মাতন। তবু অনেক কষ্টে
নিজেকে সংযত রেখেছে। কিন্তু এবার তার দেহ-মন দুটো যেন তার
আয়ত্বের বাইরে চলে যেতে লাগল। সে লেড়কিটিকে হাত দুটো
বাড়িয়ে দিয়ে জড়িয়ে ধরল নিজের ঠোঁট দুটোকে তার তুলতুলে
ঠোঁট দুটোর ওপর রাখল। চুম্বন করল, এক-দুই-তিন করে বহুবার।
লেড়কিটি ভাবাপ্লুত কণ্ঠে বলে উঠল—সত্যি মেহবুব, এবার
মনে হচ্ছে তোমার মধ্যে পৌরুষত্ব রয়েছে। পুরুষ মানুষ যদি
সত্যিকারের পুরুষের মত না হয় তবে কোন লেড়কিরই মন ভরে
না। পুরুষের দাঁতের কামড়ে আমার ঠোট দিয়ে রক্ত ঝরার মধ্যেই
আনন্দানুভূতি। আর? তোমার হাত দুটো আমার যৌবনকে পিষ্ট
করবে, তোমার প্রশস্ত বুকের চাপে আমার শ্বাসরুদ্ধ হবার উপক্রম
হবে তবেই তোমাকে সত্যিকারের পুরুষ মানুষ বলে মনে হবে।
কোথায় তুমি আমার মধ্যে কামস্পৃহা জাগিয়ে তুলবে তা নয় তো
আমি লেড়কি হয়ে তোমার যৌবনকে সারাদিন ধরে উদ্দীপিত
করলাম।'
—'তুমি এমন করে বলছ কেন? আমার জীবনে প্রথম নারী
তুমি। তাই লজ্জা শরম একটু তো হওয়াই স্বাভাবিক।'
ক্রমে রাত্রি গভীর হয়। ঘানিম আর লেড়কিটি আলিঙ্গনাবদ্ধ
হয়ে বেশ কিছু সময় পড়ে রইল। লেড়কিটির খুনে মাতন লাগে,
ক্রমে কামোন্মাদন জাগে।'
কিন্তু ঘামি নিজেকে সংযত রাখে।
পেডন্টিটি অাব্দারের সুরে বলে --মেহুবুৰ, কেবলমাত্র
আলিঙ্গন, শোষণ আর দলনে যে আমার মন ভরবে না। আমার
সম্ভোগ কৃষ্ণা ——
তে উতলা হচ্ছে। কেন, বলতো? তুমি বা আমি—কেউ ই তো
আর এখান থেকে ভেগে যাচ্ছি না যে, যা কিছু দেনা-পাওনা অ
রানের মধ্যেই মিটিয়ে নিতে হবে।'
রোডকিটি বার্লিম-এর গারে। একটি টোকা দিয়ে বল
—'মো,হলুব, তোমাকে কিছুতেই চাঙ্গা করে তুলতে পারছিন
এটাই আমার কাছে তাজ্জব ব্যাপার মনে হয়েছে। জনি, অঃশকেই
একদিন না একদিন চলে যেতেই হবে!
ঘানিম তার মুখটি লেডপিটির বুকের মধ্যে গুঁজে দিল। কয়েক
মুহূর্ত পার মুখ তুলে বস--'তুমি চলে যাবে? কেন যাবে?
কোথায় যাবে?'
--অায় যাব না। ওরা আমাকে খুঁজে বের করবেই।
তারপর টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাবে এখন থেকে।'
লেড়বিটি এবার তার জীবনের কিস্সা বলতে লাগল—আমি
ফলিফো হারুণ-চল-রসিদ-এর বাঁদী। খুবই পিয়ারের বাণী।
আমাকে তিনি আদর করে কুল-ভাল-কুলুর বলে সম্বোধন করেন।
তুব কম বাস থেকে আমি তাঁর প্রশিদে বাস করছি। আমার সূ
উৎপাদনের জন্য তিনি সর্বদা সচেষ্ট থাকেন। হীরা-জহরৎ, মলি-
নায়িকা দিয়ে আমার গ-মালিয়ে রেখেছেন। আমার রূপ-
সৌন্দর্যের কার দিতে গিয়ে অধিকাংশ রাত্রিই তিনি আমার মহলে
কাটাতেন। আমার এরকম দহরম মহরম সবার, বিশেষ করে বোম
জুবে! বনদান্ত করতে পারত না। হিংসায় রাগে দুঃখে-অপানে
কে সহানা জ্বলে পুড়ে খাক হয়। তাই সে তার চক্ষুশূল আমাকে
দুনিয়া থেকে সরাবার জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হই। ফিকির খুঁজতে
লাগল। গত রাত্রে উদ্দেশ: সিদ্ধ করল। খলিফা মহলের বাইরে।
বলিফা সুবায় গেছেন বিদ্রোহী প্রজাদের কব্জা করতে।
আমার লোকরানীর সংখ্যা বারোজন। তাদের একজনের সঙ্গে
জুবেনার সাঁট রয়েছে। গতরাত্রে অন্যদিনের মত আমাকে সরণহ
দেয় : তাতে বিষ মেশানে ছিল।
সরবত্তের ব্যাপারটি অমাতে হলে ফেলে। মন মোচড় মেরে
ওঠে। মন শক্ত করে জেগে থাকলাম! বিক্রিয়া শুরু হ'ল। কিছুক্ষণ
বাসে নোকরানীটি এসে আমাকে এতে বলল আমিও আর বসে
থাকতে পারছিলাম না। তার কথামত পাসছে পেলাম ভাব হায়
পড়ে গেলাম। বাস, তারপরই উদ্ভট একটি উগ্র গন্ধ অনুভব
করলাম। হাত-পা—সর্বাঙ্গ কেমন অবশ হয়ে আসতে চাইলেও
আমার চেতনা একেবারে লোপ পায় নি। সব কিছু শুনতে পাচ্ছি,
বুঝতে পারছি, কিন্তু মনের ভাব ব্যক্ত করার সামর্থ্য। হারিয়ে
ফেলেছি।
আমার কানে এল. জুবেদা আমার কামরার বরজায় পঁড়িয়ে
বলছে—কাফুর, বুঝাইত আর সাবাবকে ঠিক করা আছে। তাদের
বল কাঠের বাক্সটি নিয়ে এসে ঝটপট কাজ হাসিল করে ফেলতে
তিন খোজা এল। আমার নিঃশর দেহটিকে অভিকায় কাঠের
বাক্সটিতে ঠেসে ভরে দিল।
আবার জ্বন্দোর কণ্ঠস্বর শোনা গেল – গোরস্থানে নিয়ে গিয়ে
গোর দিয়ে আয়। রাতেই—ভোর হবার আগেই মহলে এসে
আমাকে জানাবি।
আমি শুনছি, বুঝছি সবই। কিন্তু কিছুই বলতে পারছি না, করতে
তো পরছিই না। তখন আমার কী মর্মান্তিক অসহায় অবস্থা
একবারটি ভেবে দেখ মেহেবুব।
একটি কথা কি জন মেহেবুব, আমি তখন নিঃসার হয়ে পড়ে
থাকায় ভালই হয়েছে। দাওয়াই ধরে নি বুঝলে জুবেদ! হয়ত হেরা
দিয়ে আমার কলিজাটি হেঁদাই করে দিত। পাঠিয়ে দিত একেবারে
বেহেস্তে।
মেহেবুব, পরবর্তী যা কিছু ঘটনা সবই তো তোমার চোরে
ভপরেই ঘটেছে। সবই খোপার মর্জি। তুমি পরদেশী। গোরস্থানে
তখন তো তোমার যাবার কথা নয়। অথচ তুমি সেখানে ছিলে।
হোদার মর্জি না হলে কী হওয়া সম্ভব ছিল, বল?
দানিম রুরূপাসে রূপসী তথী মুবন্ধী স্কুল অল-কুলুব এর ||
| কিস্সা শুনে স্তম্ভিত হয়ে পড়ে। পর্যাঙ্গে ধাম দেখা দেয়। মাথা ঝিম
কিম করতে থাকে। আপন মনে সে বলে ওঠে 'হায় খোদা! এ
আমি কি করতে চলেছি। পয়গম্বর খলিফা হারুন-অল-রশিদের
পিয়ারী! তাকে স্পর্শ করলেও শুনাহ হবে, যেতে হবে দেখাকে,
যাদিম ঘণ্ট থেকে নেমে একটি কুশিতে গিয়ে বসল। কুৎ-অল-কুলুব
এর কারণ ঠাহর করতে পারল না। সে ফবিনয়ে বলে—'সে কী
মেহেবুব, ওখানে চলে গেলে যে বড় :
2
--ভূমি বসিদের পিারী, তোমার দিকে নম্বর দিলে আমি যে
অন্ত: হয়ে যাব। তুমি খাটে শোও। আমি নিচে বিস্তারা বিছিয়ে শুয়ে
পড়ব।
CREAT
----'পাগল কাহাকার! তাই আবার হয়। পাটে ১ল, এক সঙ্গে
শেষে। আমি তোমাকে বলছি। গুণাহ-ই যদি কিছু হয়, তো আমার
2
যানিম প্রবল আপত্তি তোলে। পুরো রঙি তুশিতে বসেই
‘কাটায়। কাকডাকা সকলে সে বাজারে চলে গেল ! বাদশাহী থানা ও
খরিদ করল। ঘরে মেহমান, তার দিলখুশ্ করার জন্য গুলান পানি,
আতর, মনহৌজী রঙ বে-রঙের ফুল আরও খুঁটিনাটি কত সং
সমানপত্র খরিদ করে ঘরে ফিরল।
কুৎ-ঋল একটু আগ পর্যন্ত দিন যাচ্ছিল। ঘার্নিম' কে দেখে
আড়মোড়া ভেঙে ঘাট থেকে নামল।
কুং-ঋল বল 4 মধ্যে বাজার সেরে এলে? আমাকে
একেপা ফেলে --'
-- 'আরে তুমি খলিফার পিয়ারী, আমার মেহমান। আদর-
আপ্যায়নের গতি হলে আমার গর্দান যাবে যে।' কথা বলতে
বলতে সে নাস্তার ঠোঙা বের করে ভাগ করার উদ্যোগ নিল।
কুৎ-অঙ্গ বাধা দিল। গোস্সা করে বল — নাস্তা টান্ডা ফেলে
রাখ। আমার কাছে এসো! পেটের ধান্দা রেখে আমার কাছে সর্বদা
থাকতে হবে। খানাপিনা করার লোভে আমি এখানে আসি নি, শুনে
যাখ।' কথা বলতে বলতে হেঁচকা টান মেরে তাকে খাটে শুইয়ে
দেওয়ার কোনিস করে। জালিম নেগড়া নেয়। সহিাসে
বলে-- 'আরে করছ কি! আমি তোমার নফর। তোমার হুকুম
তামিল করা ছাড়া অন্য কিছু ভাবতেই পারি না।
...নফর? হুকুম তামিল? তবে আমি তোমাকে হুকুমই করছি,
আমার কাছে এসো। নইলে ধড় থেকে তোমার শির নেমে যাবে।'
--"শর নামাও। গর্দান নাও বা শূলে চড়াও – তোমার দিল
না চায় ক্রতে পার। কিন্তু মেহেরাণি করে এসব কাজ কামের
হুকুম কোরো না। আমি অক্ষয়
ানিম বোকার মত ফ্যাল ফ্যাল করে তাকায়। কুং-গুল
বিদ্যুৎগতিতে তার কাছে আসে। দু'হাতে সাড়াশীর মত আঁকড়ে
ধরে। জোর করে তার ঠোঁটে ঠোঁট রাগে। চুম্বন করে। শরীরের সর্ব
শক্তি দিয়ে তার ঠোঁটে ঠোঁট দুটো ঘরতে থাকে। অস্থির হয়ে পড়ে।
উক্ত মাত২ গেলে যায়। দাঁত দিয়ে থানিম এর নিচের ঠেন্টটি
কামড়ে ধরে। খুন। তিরতির করে খুন করতে থাকে তাঁর ঠেটি
থেকে।
কৃৎ-অল ভগ্নাদিনীর মত ধানিমকে আঁকড়ে ধরে। নিজের
বুকের ওপর তার সুদৃশক্ত যৌবনভরা বুকতিকে কলোরে চেপে
ধরে। জোরে — আরও জোরে — আরও দিন চাইছে এভাবে
নিজের ধ্বনি খতম করে দেয়।
ঘানিম আর্তনাদ করে ওঠে—আরে করছ কী করছ কী।
মলিকের ভক্ত কুত্তা কি মন ফরলেই শের বনে যেতে পারে?
অসম্ভব! আমাকে ছেড়ে দাও।' এক বঁটায় নিজেকে ছুঁৎ অপ এর
বাহু বেষ্টনী থেকে মুক্ত করে দেওয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে হাঁপাতে
থাকে। কুৎ-শুল নিজেকে সামলে নেয়। ক:মিস অগোছাল।
আশাহত বাঘিনীর মত শুয়ে পড়ে থাকে।
ধার্নিম বারন্দায় গিয়ে বাঁশী বঙ্গাতে থাকে। করুণ সুর। মন
পাগল করা সুরে নিজেকে সপে দেয়। বিভেব হয়ে পড়ে।
FULVI
হাসি-আনন্দের মধ্যে আবার নেমে এল রাত্রির অন্ধকার। ঘানিম
বারান্দায় বাঁশী হাতে তারাভরা আশমানের দিকে উদাস ব্যাকুল
দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। কুৎ-অল এসে তার গা-ঘেঁষে দাঁড়ায়। তার
মাংসল ও তুল-তুলে নরম উরুদেশ ঘানিম-এর পিঠ স্পর্শ করে।
ঘানিম-এর সর্বাঙ্গে শিহরণ জাগে। শিরা-উপশিরায় খুন চনমনিয়ে
ওঠে। বুকের ভেতরে কলিজাটি অস্থির হয়ে ওঠে। কুৎ-অল আরও
একটু ঘনিষ্ঠ হয়। তার তলপেট ঘাড়ের ওপর—মাথা স্পর্শ করে।
ঘানিম-এর বুকের ভেতরে কাল বৈশাখীর ঝড় - উত্তাল, উদ্দাম
সমুদ্রের আছাড়ি পাছাড়ি চলতে থকে। নিজেকে আর বশে রাখা
সম্ভব হবে কিনা, কে জানে?
খোদা তার সহায় হলেন। কুৎ-অল কি ভেবে গুটি গুটি পায়ে
যেমন এসেছিল ঠিক তেমনি নিঃশব্দে ঘরে ঢুকে যায়। খাটের ওপর
| আছাড় খেয়ে পড়ে। ডুকরে ডুকরে কাঁদতে থাকে। ঘানিম শোনে।
মর্মাহত হয়। কিন্তু দিলকে কিছুতেই দুর্বল হতে দেয় না। গোড়ার
দিকে তার মনকে একটু-আধটু প্রশ্রয় দিয়েছিল বটে। কিন্তু কুৎ-
অল-এর প্রকৃত পরিচয় পাওয়ার পর থেকে নিজেকে সে পুরোপুরি
গুটিয়ে নেয়। আর কুৎ-অল মর্মবেদনায়, না পাওয়ার হতাশায়
জ্বলে-পুড়ে খাঁক হতে থাকে।
বাগদাদে খবর আসে বিদ্রোহী প্রজাদের দমন করে খলিফা
প্রাসাদে ফিরছেন। খবরটি তার খাস বেগম জুবেদা-র কানেও
পৌঁছায়। তিনি ভয়ে মুষড়ে পড়েন। কুৎ-অল-এর হদিস না পেয়ে
তিনি যে কোন্ মূর্তি ধারণ করবেন তা ভেবেই তিনি অস্থির হয়ে
+9
পড়েন। তাঁর খুব পেয়ারের বুড়ি ক্রীতদাসীকে বলেন, এখন
ফোকলা দাঁতে হেসে বুড়ি বলে— এত ঘাবড়াচ্ছেন কেন
বেগম সাহেবা? মোক্ষম এক ফলি-ফিকির বাংলে নিচ্ছি।
কাঠমিস্ত্রিীকে দিয়ে কুৎ-অল-এর একটি পুতুল গড়িয়ে নিন।
প্রাসানের গায়ে এক গোর তৈরী করে সেটিকে গোর দিয়ে দিন।
আর কৃৎ ভল সর্বদা যেভাবে হীরা-ফহরৎ ২টি মাণিক্যের গহনা
ব্যবহার করত ভূপটিকে নেবে পরিয়ে নিতে হবে। খলিফা
সন্দেহের বশে গোর খুঁড়িয়ে দেখতে চাইলে ওপর থেকে গহনাপত্র
দেখেই নিঃসদেহ হয়ে যাবেন। আবার মাটি চাপা দিয়ে নেবার
হুকুম দেবেন। আর যদি নেহাৎই তার লাশ হাত দিয়ে দেখতে চান
তবে আপনি বাঁধা দিয়ে বলবেন---কুৎ-অগ-এর লাশ বিবস্ত করে
গোর দেওয়া হয়েছে। নিজের বিবি হলেও তার বিবস্ত্র পাশ স্পর্শ
করা পুরুষের ধর্ম বিরুদ্ধ কাজ। তবেই ধর্মভীরু খলিফা পিছিয়ে
যেতে বাধ্য হবেন।'
সুতো বুড়ি ক্রীতদ সীর বুদ্ধির তারিফ করলেন। সুবেদ| তার
পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করলেন। নিশ্চিন্ত।
হানিফা বিদ্রোহী প্রজাদের দমন করে প্রাসাদে ফিরলেন,
প্রাসাদের সদর দ্রতার কাছে এক সমাধি দেখে থমকে গেলেন।
তার নদীর খোলেক শুরু করে প্রাসাদের সবার পরনে শোকের
চিহ্নবাহী ঝালো পোশাক। তাঁর ধাপ বেগম ডাবেনাও কালো
পোশক ধারণ করেছেন।
যদি নীরবে কুখ-অল-এর কক্ষে খেলেন। কেউ নেই। বা
খাঁ করছে। সুন্দো চোখ মুছতে মুহতে বললেন রৎ-খন দুনিয়া
ছেড়ে বেহেস্তে চলে গেছে। আমি নিজে তব্বির-তদারকি করে
যথোচিত মর্যাদায় তাকে গোগ দিয়েছি।'
খলিফা পাথের ধকল সহ্য করে ক্লান্ত-অবসদ। তার ওপর
সর্বাধিক প্রিয়জনের বিয়োগ-ব্যথা। যারপরনাই মর্মস্থত হলেন
কোনরকমে নিজের কক্ষে দিয়ে শুয়ে পড়লেন। কৃৎ-আল-এর
ভাবন তার দেহ-মনকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। মহল ত্যাগ করার
সময় যে লোক একেবারে সুস্থ-স্বাভাবিক ছিল তার মৃত্যু তো
জাবিয়ে তোলার কথাই বটে। পরদিন সূবা হওয়ার আগে তিনি
ঘাত্রের দরজা খুললেন না। দুপুরের কাছাকাছি তর কড়ে উজির
জাতরের তলব হ'ল। জাফর এলে বললেন—'গোর ছুঁড়ে আমি
কূৎ-অল-এর পাশ দেখতে চাই। ব্যবস্থা কর।
বলিফার অভিপ্রান্তের কথা জানতে পেরে জুবেদার তো
কলিজ! শুকিয়ে কাঠ। বুড়ি ক্রীতদাসী পরামর্শ দিয়ে—কাঁদো
কনো মুখ করে জুরের পাশে গিয়ে দাড়ান বেগম সাহেবা।
ঘাবড়াবো না, সব ঠিক ঠাক হয়ে যাবে।'
বলিক সামনে দাঁড়িয়ে গোর পৌঁড়ালেন। পুতুলের গায়ে
হীরে-জহরৎ, মণি-মুক্তোর গহনাপত্র দেখে তাঁর মনে ঝর বিধা
রইস না গোড়ে মাটিচাপা দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। উক্তির
হাফেরাতক বন্দে— 'সাতদিন সাতরাত্রি কোরাণ পাঠ হবে ফুৎ-
'অল-এর গোরের সামনে। মৌলভীকে খবর দাও।'
বেগম শাহরাদ এ-পর্যন্ত বলার পর কিস্সা বন্ধ করলেন।
সাহৃ হ'ল। বাদশাহ শাহরিয়ার দরবারের দিকে পা বাড়ালেন।
একচল্লিশতম রজনী
পদশাই সারাদিন নামা কফকাসোর মধ্যে ডুধে রইলেন। রাত্রি
একটু গভীর হলে তিনি অন্দর মহলে বেগম শাহরদিন্দ-এর কক্ষে
এলেন।
করजেন
হোম শাহরাআদ তাঁর অসমাপ্ত কিস্সার পরবর্তী অংশ শুরু
'জীহানা, কুৎ-ঋণ-এর নকল সমাধির পাশে সাতদিন
নাতরাত্রি আঁৰু ক'রে তোরণ পাঠ করা হল। খলিফা পানাজার
ভাগ করলেন। নিচের কাজের মেঝেতে মাধুর বিছিয়ে চুপচাপ
শুয়ে কাটালেন দিনের পর দিন। দুজন ক্রীতদাসী ডান পরিচর্য
শিপ্ত রইল।
এক দুপুরে খলিফা চোখ বন্ধ করে চুপচাপ শুয়ে রইলেন!
ক্রীভাসী দুজন উঁচু পদসেবা করতে করতে সঞ্চামত গপা
নামিয়ে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে লাগল
না করছেন। এক নকল কররের পাশে কোরাণ পাঠ করিয়ে নিজেকে
প্রবোধ দিচ্ছেন । রূপসী রৎ-অল কোথায় পড়ে রইলেন 'তাঁর হদিস
নেই। তার এদিকে তুর্কি করে কোলণ পাঠ করে তার বেহেস্তের
দই সাফ সুভা করা আয়োজন। হাসির মত কান্তই বটে।
দ্বিতীয়জন বল্গ–‘বেগম জুবেদা ডাকে ভষুর দিন বেহুঁস
করে কোথায় চালান দিয়ে দিয়েছেন তা কলকপষ্ট ও টের পরনি।
বেষ্টুস কুং-মলকে কাঠের বাক্সে পুরে যে-ফিনান রোজা নিম্নো
বত্রির অঙ্গকরে প্রাসাদ থেকে নিয়ে গিয়েছিল তারা ছাড়া আর
কেউ-ই কিছু শাল না। ধ্ব; ফন্দি করেছিলেন বেগম মুলো।'
-- তবে কি বেহুস কৃৎ-এলকৈ ফ্ল্যাস্ত করে দিয়ে খতম করা
—'গোদাভায়। গাকে খতন না করেন তাকে সামান্য মানুষ
যতম করবে, সাধা কি? শুনেছি বাগদাদ নগরের ঘূর্নিম ইবন নাযে
এক যুবক নপিকের ঘরে নাকি তিন দিন গুজরান করছে। বুড়ি দাসী
জারও কত কথাই না আমাকে বলেছে। তবে অনেক কিরা কাটিয়ে
তবেই আমাকে গোপনে এসব কথা বলেছে।'
আচমকা সম্মিৎ ফিরে পেয়ে যেন খলিফা তড়াক করে উঠে
বসলেন। উজিরকে ডাকলেন। রাগে-দুঃখে তার সর্বাঙ্গ
রংরিয়ে কাপতে সালে।
উজির হাঁপাতে হাঁপাতে ছুটে এলেন। খলিফা গর্জে উঠলেন,
এখনই ফৌজ নিয়ে নগরে যাও। ঘানিম ইবন নামে বণিককে খুঁজে
বের কর। যেখান থেকে, যেমন করে পার আমার সামনে হাজির
করা চাই-ই চাই।'
শঙ্কিার হুকুম তামিল করতে উঞ্জির জাফর চল্লিশজন সৈনা
নিয়ে খানিম-এর খোঁজে বাগদাদ নগরের উদ্দেশে যাত্রা করবেন।
ঘানিম তখন সবে নাস্তা নিয়ে বসেছে। বাড়ির বহিবে সৈন্যরা
কোলাহল করতে করতে বাড়ি ঘিরে ফেল্ল।
বিপড় মাথার ওপরে। এখন উপায়? উপায় কুৎ-অলই বুদ্ধি
২রচ করে বের করে ফেল্ল। ঘামি-এর হাতে একটি ভাঙা বালতি
আর ঝাড়ু ধরিয়ে দিল। আর তার মাথায় গামছা দিয়ে বেঁধে দিল
এক ফেটি। কে বলবে, জমাদার ময়লা পরিষ্কার করতে আসে নি।
ঘলিম বল্ল – 'আমার জ্ঞান বাঁচাবার বন্দোবস্ত ভো করলে।
কিন্তু কুৎ-অল, তোমার কি হালৎ হবে ভেবে দেখেছ? তোমাকে
কয়েদ করে——
তাকে থামিয়ে দিয়ে ফুৎ-অল বল্ল – আমার জন্য পরোয়া
করিনা। আমাকে নিয়ে তো তারা খলিফার সামনেই হাজির করবে।
তারপর তাকে কি করে বশ করতে হয় সে কায়দা আমার ভালই
রপ্ত করা আছে। তুমি আগে জ্ঞান নিয়ে খিড়কি দরজা দিয়ে ভাগ।
উজির জাফর বীরদর্পে ঘরে ঢুকলেন, রং-এল খাটের ওপর
বসে। তার গায়ের অলঙ্কার তেমনি রয়েছে। জাফর যথার্থ ভঙ্গিতে
কুর্নিশ করে বলেন— 'আপনি এখানে কি করে এলেন মালকিন ?”
— আমার নসীবেই আমাকে এখানে টেনে এনেছে!
- 'মালকিন, জাহাপনার হুকুম নিয়ে ছুটে এসেছি ঘানিম ইস
আহ্বব নামে নওজোয়ানকে কয়েদ করে নিয়ে যেতে। আপনি কি
তার হদিস দিতে পারেন?'
–ঠিকানা আমার জানা নেই। তবে তার আস্থার বিমারী, তাই
আজ কয়েক দিন এক সুবহে সে এ-বাড়ি ছেড়ে গেছে। শুনেছি,
দামাস্কাসে তিনি থাকেন।”
চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উকির আসর বললেন- 'মালবিল,
আপনি কি মেহেরবানি করে আমার সঙ্গে প্রাসাদে যাবেন?"
---ার। অবশ্যই যাব। আমি এরকমই কোন চিংড়ির
মুফাচ্ছিলাম।
উক্তির জাক্ষর ঝুৎ অল'কে নিয়ে খলিফার সামনে হাজির
করলেন। খলিফাকে কুর্নিশ করে বললেন— 'আমরা পৌঁছোকর
বেশ কয়েক দিন অংগে খামিম বাগ্দান ছেড়ে দামাস্কাসে চলে গেছে,
সেখানে তার আম্মা আর এক বহিন থাকে।
– 'খলিফা হৃৎ অঙ্গক জিজ্ঞাসা করলেন--'শুনেছি, যানিশ
নওজোয়ান! তার ওমর কত?'
—'চব্বিশ-পঁচিশ সাল। খুব সৎ ও ধর্মপরায়ণ নওজোয়ান।
| আমাকে সে বে-ইজ্জত করেনি।'
—'চুপ কর ! তোমাকে আর তার হয়ে সাফাই গাইতে হবে না।
এক নওজোয়ানের সঙ্গে এতদিন কাটাতে তোমার শরম লাগল না।
তোমার কথা আমাকে বিশ্বাস করতে হবে। আগুনের কাছে ঘি
থাকলে কিছু না কিছু গলবেই।' এবার তাঁর দেহরক্ষী মাসরুর'কে
ডেকে বললেন—‘একে পিঠমোড়া করে বেঁধে অন্ধকার
কয়েদখানায় ঢুকিয়ে দাও।'
ক্রোধোন্মত্ত খলিফা এবার দামাস্কাসে একদল সিপাহী পাঠিয়ে
দিলেন ঘানিমকে হাতকড়া পরিয়ে বাগদাদে নিয়ে আসার জন্য।
তাদের সঙ্গে দামাস্কাসের সুলতান মহম্মদ ইবন সুলেমান অল
জেনি-র নামে একটি চিঠিও দিয়ে দিলেন। ঘানিম ইবন আয়ুব নামে
এক নওজোয়ান বণিক আছে যেন প্রেরিত সৈন্যদের সঙ্গে পাঠিয়ে
দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
খলিফার চিঠি নিয়ে সেনাবাহিনী বাতাসের বেগে দামাস্কাসের
উদ্দেশে ঘোড়া ছুটিয়ে দিল। বিশদিনের পথ আটদিনে পাড়ি দিয়ে
তারা মহম্মদ ইবন সুলেমান-এর দরবারে হাজির হ’ল। সুলতানের
হাতে খলিফার চিঠি তুলে দিলে রক্ষী সৈন্যদের নিয়ে সুলতান স্বয়ং
ঘানিম-এর বাড়ি হাজির হলেন। তার বাড়ি ঘেরাও করা হ'ল।
সৈন্যদের কোলাহল শুনে ঘানিম-এর বহিন ফিৎনা বেরিয়ে
এল। সে সুলতানকে কুর্নিশ জানিয়ে বলল –‘ভাইয়া তো এক
সালের ওপর বাগদাদে ব্যবসা করতে গেছে।'
কয়েকদিন আগে এক অজ্ঞাত ব্যক্তি এসে খবর দিয়েছে ঘানিম বি
দুনিয়া ছেড়ে বেহেস্তে চলে গেছে। বাড়ির উঠোনে তার স্মৃতি
রক্ষার জন্য একটি সমাধিসৌধও বানানো হয়েছে। সুলতান
খলিফার নির্দেশে তার আম্মা ও বহিনকে বিবস্ত্র করে দুপুর রোদে
পত্রে মাঝখানে দাঁড় করিয়ে রাখলেন। একনাগাড়ে তিন দিন তিন
রাত্রি দাঁড় করিয়ে রাখার পর শহর থেকে দূর দূর করে ভাগিকে
দিলেন। বেপন পাহহ্বাযাদি বললেন— ফাঁহাপন এবার চলুন
আমরা ঘনিম-এর তল্লাসি করে দেখি, সে কোথায় আছে, কি
করছে। সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছুটেই চলেছে। বাগদাস নগর
ছোড়ে পহাড় পর্বত ডিঙিয়ে ছুটছে তো হুটছেই। শেষ পর্যন্ত এক
গ্রামের এক মসজিদে গিয়ে আশ্রয় নেয়। পরদিন নামাজ পড়তে
এসে গ্রামের লোকজন দেখল, এক নওসোয়ন বেহুঁশ হয়ে পড়ে।
তারা সেবা শুশ্রূণ করে তাকে সুস্থ করে স্থূলল। খানাপিনা তারাই
জোগাতে লাগল পালা করে।
মসজিনের বারান্দা হ'ল যানিম -এর আশ্রয়স্থল। এখন স
এখানেই পড়ে রইল।
একনস বণিক উটে চড়ে বাগদাদ নগরে যাচ্ছিল। গ্রামবাসী
অনুরোধ করল তাকে বাগদানের হাসপাতালে পৌঁছে দিতে। তারা
সম্মত হ'ল। উটের পিঠে চাপিয়ে তাকে নিয়ে বণিকরা বাগদাদের
উদ্দেশে যাত্রা করল
বাগদাদে পৌঁছে বদিকের দল ঘলিমকে হাসপাতালের
বারান্দায় বসিয়ে রেখে নিক্রেসের কাজে চলে গেল। এক দোকান
তাকে দেখে চিনতে পারে। তাকে নিজের বাড়ি নিয়ে গেল। হেকিম
ডেকে ইলাহা করাল! বিছুদিন দাওয়াই হাইয়ে কিছুটা সুস্থ সবল
করে ফেলুন।
তিনি এবার
বেগম শাহরাজাদ নূঝলেন ভোর হয়ে এল বলে।
বিরুস্সা বন্ধ করলেন। ভোরের আলো ফুটে উঠতে বাদশাহ
শারিয়ার নিজের কক্ষে চলে গেলেন।
বিয়াল্লিশতম রজনী
প্রায় মাঝ রাত্রে বাদশাহ শারিয়ার অন্দরমহলে। বেগম
শাহাজাদ কিস্সার পরবর্তী অংশ বলতে শুরু করসোন! শাহরাব্বাদ
বলেন—
ভাঁহাপনা, ঘানিং এ৯ে সুস্থ হয়ে উঠল এদিকে কুং-
হল অন্ধকার ঘরে বন্দী ঐকা শাপন করতে বলল। লে-বুড়িটি
সর্বদা ব্রঞ্জায় বসে তাকে পাহারা দেয়। কড়া পাহার। বিশেষ
বিক্ষোভ দমন করার কাজে খলিফা ডুবে রইলেন কূৎ অমা-এর
কথা ভুলে গেলেন একদিন বগিফা প্রাসাদে ঢোকার মুখে কান্নার
শব্দ শুনে থমকে দাঁড়িয়ে পড়লেন। বুঝলেন কুৎ-ফল কাঁদছে। পা
টিপে টিপে এগিয়ে গিয়ে উৎকর্ণ হয়ে রইলেন। শুনতে পেলেন
রং অল কাঁদতে কাঁদতে বলছে,— 'দামি কেন তুমি আমার জান
বাঁচাতে গেলে। তা না হলে তো গোরস্থানে মাটি চাপা পড়ে আমি
খতম হয়ে যেতাম। জানটিকে টিকিয়ে রেখেই বা ফয়দ। কি হ'ল?
আমাকে সঙ্গদান করনি, সহবাস করনি ভা-তো আমি খলিফাকে
বিশ্বাস করাতে পারলাম না। তবে কেন তুমি নিজেকে সংযত রেখে আমার দেহভোগ থেকে বঞ্চিত হলে? তুমি যেখানেই থাক, যখনই তোমাকে কয়েদ করতে পারুন— খলিফা একদিন না একদিন তোমাকে হাতকড়া পরিয়ে শূলে চড়াবেন, নতুবা গর্দান নেবেন।
তার পেয়ারের জনানার ইজ্জত বাঁচিয়ে তোমার কোন মুনাফা হ'ল।
আর কেউ না জানুক, না বুঝুক আমি তো মর্মে মর্মে অনুভব করেছি
এতগুলো নিঃসঙ্গ রাত্রি তোমাকে কী মর্মান্তিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে হ
কাটাতে হয়েছে। তার বকশিস পেলে জান খতমের আদেশ। আর C
তোমার আম্মা আর বহিনের নির্যাতন। দুনিয়ায় যতদিন থাকবে। ও
আমার সঙ্গে তোমার আর মোলাকাৎ হবে না। তবে শেষ বিচারের
দিন আমাদের আর খলিফার নির্দেশ কাউকে দূরে রাখতে পারবে
না। তখন আমরা কাছাকাছি মুখোমুখী হবই। কোন আইন, কোন য
হুকুমই আমাদের তখন আর ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না সেদিন। C
এবার খলিফা হারুণ-অল-রশিদ এর কানে জল ঢুকল। তিনি
এবার নিঃসন্দেহ হলেন যে ঘানিম এবং কুৎ-অল নির্দোষ। তিনি ত
প্রহরীকে নির্দেশ দিলেন— কুৎ-অলকে কয়েদখানা থেকে বের
করে নিয়ে এসো। কুৎ-অল এলে তিনি নিজের কৃতকর্মের জন্য বার বা
বার মার্জনা ভিক্ষা করতে লাগলেন। আর বললেন- 'মেহবুবা,
তোমাকে বিনা কারণে কয়েদখানায় আটক করে কষ্ট দিয়েছি, তার
জন্য আমি অনুতপ্ত। প্রতিদান স্বরূপ তুমি আমার কাছে যা প্রার্থনা এ
করবে পূর্ণ করব।'
9
চোখ মুছতে মুছতে কৃৎ-অল বল—'জাহাপনা, আমার ঘ
নিজের জন্য আমি এতটুকুও ভাবিত নই। বিনা দোষে, আমাদের,
বিশেষ করে আমার জন্য যে নিঃস্বার্থভাবে এত ত্যাগ স্বীকার করল
সেই নির্দোষ-নিরপরাধ ঘানিমকে মার্জনা করুন।'
ঘ
——মার্জনা করব কাকে, বলতে পার মেহবুবা ? তামাম বাগদাদ
আর দামাস্কাস নগর চষে ফেলেও যাকে ধরা গেল না, কোন হদিসই দি
মিলল না, তাকে আমি কিভাবে মার্জনা করে বুকে টেনে নেব,
বলতে পার? তবে কথা দিচ্ছি, তুমি আমার সবচেয়ে পেয়ারের ই
বাঁদী। তবু আমি তোমাকে তার কাজের পুরস্কার স্বরূপ তার হাতে দি
তুলে দেব। আর তুমি যদি পার তার খোঁজ করতে পার।'
কুৎ-অল-এর দিলটা খুশিতে ডগমগ করে উঠল। শুকিয়ে
যাওয়া কলিজাটি যেন জীবনীশক্তি ফিরে পেল। খলিফার কাছ
থেকে হাজার খানেক দিনার নিয়ে দু'জন খোজাকে পথপ্রদর্শক ও
রক্ষী হিসাবে সঙ্গে নিয়ে সে বেরিয়ে পড়ল তার মেহেবুব ঘানিমের ি
খোঁজে।
7
কুং-অল পথে নামল। এখানে ওখানে খোঁজ করতে করতে
বাগদাদ নগরের এক বৃদ্ধ বণিকের মুখে শুনতে পেল, ঘানিম দিন
কয়েক আগে হাসপাতালের ফটক থেকে এক পরদেশীকে তুলে
নিয়ে বাড়িতে রেখেছে। হেকিমকে দিয়ে ইলাজ করিয়ে প্রায় সুস্থ-
২। স্বাভাবিক করে তুলেছে।
কুং-ডাল উচ্ছ্বসিত ভাবেগের সঙ্গে বন— আমি তাকে
। একবারটি দেখতে চাই। আপনি যদি অনুগ্রহ করে সুযোগ করে দেন
। বড়ই উপকার হয়।'
=
কুৎ-অল বণিটির বাড়ি গিয়ে দেখে খানিম বারান্দায় অগ্রাম
=কোরায় বসে বিশ্রাম করছে। হাড্ডিসার চেহারা। দেখলে চেনাই
যায় না। কুৎ-অল উচ্ছ্বসিত আবেগে কড়িয়ে ধরল তাকে।
সোহাগে আদরে ভরিয়ে তুলু। খলিফা তাদের চার হাত এক করে
দেখার অভিপ্রায় জানিয়েছেন, একথা জানাতেও ভুল না! কুৎ-
সঙ্গে নিয়ে আসা এক হাজার দিনার বণিকের বিবির হাতে দিয়ে
■ বলল – মেহেরবানি করে বড় হেকিমকে নিয়ে ওর ইলাজ
করাবেন। ভাল দাওয়াই ও ফল-দূধ দেবেন। পরে আরও টিনার
পাঠিয়ে দিচ্ছি
■
বণিক কাছে শুক্ত। তার পক্ষে কাজ ফেলে এখন কোথাও
যাওয়া সম্ভব নয়। তাই তার এক বালক-কর্মচারীকে দিয়ে কু-অল
কে তাঁর বাড়ি পাঠাবার ব্যবস্থা করল। কুৎ-অল ৰণিককে সুকরিয়
জানিয়ে পথে নামল।
।
কুৎ-অল যানিমকে সে বীকের বাড়িতেই রেখে দিল। আর
একটু সুস্থ না হলে তাকে খলিফার প্রাসাদে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
এত দূরের পথ। পথের ধকল সইতে পারবে না। কুৎ, অঙ্ক এবার
খলিম ও বণিকের বিভিন্ন কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিল।
প্রদিন দুপুরের পর কুৎ-অল আবার বণিকের বাড়ি এবং
পামি'কে দেখতে।
বণিক বল্গ——বেটি, গতকাল তুমি বিদায় নেবার পর এক
| ডিয়ারী আমার কাছে এসেছিল। মনে হ’ল প্রদেশী। মনে হ'ল
ভিক্ষে সিক্ষে করে দিন গুজরান করে। পরে বাঙচিৎ করে বুঝাম,
ভূমি যার খোঁজ করছ তারাও তারই খোঁজে ছুঁড়ে বেড়াচ্ছে। নিম
ইবন-আয়ূবকে খুঁজছে। তাদের আস্তানার ঠিকানা আমি রেখে
দিয়েছি। এক সরাইখানার বারান্দায় রাত্রি কাটায়। আর সামাস্কাসে
নাকি তাদের ঘর।”
দানাস্কাসের নাম শুনেই কুং-জল চম্কে উঠে। আপন মনে
বলে ওঠে, তবে কি থামিম-এর আম্মা আর বহিন।
নূহ-ঋল এর অনুরোধে তার বলক-কর্মচারীটি এক দৌড়ে
গিয়ে এক হানার আর লেড়কিকে নিয়ে এপ। কুৎ-অন্ধ তাদের সঙ্গে
কথা বলে জানতে পারল, তারা হানিম-এর আম্মা আর বহিনই।
বটে। সে হাতের মিনারের থলিটি বণিকের হাতে দিয়ে
বল্ল- 'আপনি আমাদের জন্য অনেকই করেছেন। আরও একটি
অনুরোধ করে আপনাকে বিব্রত করতেই হচ্ছে। মেহেরবানি করে
এদের দু জনেরও দেখ-ভাগ করবেন। খোশ আপনার ডাক্ত
বলিক মুচকি হেসে বলল – 'বেটি, আমি সাধ্যমত এদের
ভক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করব।'
ভ্রমন সময় বেগম শহরাজাদ তাঁর কিস্সা বন্ধ করলেন।
তেতাল্লিশতম রজনী
রাত্রির দ্বিতীয় প্রহরে বাদশাহ শারিয়র বেগম শাহাজাদ-এর
কক্ষে এলেন। বেগম তাঁর কিস্সার পরবর্তী অংশ শুরু করতে গিয়ে
বে 'কাহাপনা, কুৎ-অল বণিকের হাতে দিনারের থলেটি
এবং বানিম-এর আম্ম্য ও বহিনকে গচ্ছিত রেখে নিশ্চিন্ত মনে
বিদায় নিল।
দু'দিন বাদে কুৎ-অল আবার সে বগিকের বাড়ি তার মেহবুব
স্বরলিম এর কঙ্গে মিলিত হতে গেল। ঘানিম এখন অনেক সুস্থ।
ইউাচলা করতে পারে। বণিক ও তার বিবিকে বহুভাবে সুরিয়া
জানিয়ে নে ঘানিম ও তার মা-বাহনকে নিয়ে বলিফ প্রাসাদে
মলিফা তখন খাস মহলে বিশ্বামে রত। এক তলার একটি ঘরে
স্বাদ আর তার আম্মা ও বহিনকে বসিয়ে রেখে কৃৎ অল খলিফার
ক্রমবাহ গেল। সব বৃত্তান্ত তাকে জানাল।
হলিফার নির্দেশে সে ঘানিম আর তাঁর আস্থা ও বহিনকে তাঁর
ছাত্র নিয়ে গেল। যানিম খলিফাকে যথোচিত ভঙ্গিমায় কুর্নিশ
বলিয়ে বলে-'বান্দা হাজির জাঁহাপনা।'
মলিফা সংক্ষেপে তার কুশল বার্তাদি নিনে। তার পরে মুচকি
जाम दम ‘শোন, 'তুমি আমার ছোটা 'ভাইয়ার মত। ভূল
শুদ্র তোমার প্রতি অবিচার করেছি। আশা করি আমার মুখের দিকে
চেয়ে ওর কথা মন থেকে বেড়ে মুছে ফেলে দেবে! কুৎ-ঋণ
এর মুখে হয়ত শুনে থাকবে আমি আমার পিয়ারের বাদীকে
তোমার হাতে সঁপে দেব মনস্থ করেছি। অবশ্য যদি তুমি একাজে
সম্মত হও তবেই –
হার মুখের কথা শেষ হবার আগেই ঘানিম বলে উঠল-
এই পনার হুকুম তামিল করতে আমি সোরুকেও যেতে রাজি
r
—আর একটি কথা। আমি ভুল করে তোমার আম্মা ও
বহিনের ওপরও কম অবিচার করিনি। সংক্ষেপে বলতে গেলে আমি চ
শুক্সে বে-ইজ্জতই করেছি। এর জন্য আল্লাহ আমার গুণাহ মাগুনা
করবেন না। আমার কৃত-অপরাধের প্রায়শ্চিত্তের চিন্তাও আমি করে
ক্রয়েছি। তোমার আম্মার অঃমৃত্য ভরণপোষণের ভার আমি
তোমার নিজের কাঁধে তুলে নিষ্প্রাম। মেহমানের মত নয়।
আগুনের মত আমার প্রাসাদে তিনি থাকবেন। আর তোমার
উৎপনাকে আমি শাদী করে বেগমের মর্যাদা দেব। তোমার
কোন ওজর আপত্তিই আমি শুনতে নারাজ।
উচ্ছ্বসিত আবেগের সঙ্গে ঘানিম বল্ল—'জাঁহাপনা, এ তো
আমার কাছে আশমানের চাঁদ হাতে পাওয়ার সামিল। ওজর-
আপত্তির তো প্রশ্নই ওঠে না।'
1
—'আমার অবিমৃষ্যকারিতার জন্য তারা একদিন যা হারিয়েছে
তা ফেরৎ দেওয়ার সাধ্য আমার নেই খানিম। তাই অনন্যোপায়
হয়েই আমাকে এ-পথ বেছে নিতে হ’ল। এতে তোমার কুণ্ঠিত বা
শরমের ব্যাপার কিছু নেই।'
এবার খলিফা কাজীকে তলব করলেন। কাজী এলে তাকে
দিয়ে দু'টি শাদীর কবুলনামা বানিয়ে নিলেন। তার একটি খলিফা
ও ফিৎনার আর দ্বিতীয়টি ঘানিম ও কুৎ-অল এর শাদীর কবুলনামা।
■■
সেদিনই খলিফা হারুণ-অল-রশিদ-এর প্রাসাদে শাদীর
আয়োজন করা হ’ল। একে খলিফার শাদী তার ওপর দু'-দু'টি শাদী
= } একই রাত্রে, একই প্রাসাদে সম্পন্ন হচ্ছে। কম কথা! বাদশাহী
খানাপিনার ব্যবস্থা করা হ’ল। আর দামী সরাবের ঢালাও ব্যবস্থাতো
রয়েছেই। মহাধূমধামের সঙ্গে শাদীর পাঠ চুকল। খলিফার প্রাসাদে
■ তিনদিন উৎসবের রোসনাই বয়ে চল্ল।
বেগম শাহরাজাদ বললেন— জাঁহাপনা, ঘানিম আর কুৎ-অল
কুলব-এর কিস্সা তো শুনলেন। এবার আপনি যদি উৎসাহী হন
তবে আমি উমর-অল-নুমান এবং তার লেড়কাদের কিস্সা শুরু
করতে পারি।'
বাদশাহ অত্যুগ্র আগ্রহের সঙ্গে বললেন—'মেহবুবা, তোমার
কিস্সা আমার দিল কেড়ে নিয়েছে। তুমি নির্দ্বিধায় কিস্সা শুরু
করতে পার।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
জয় গুরু
বিশুদ্ধ প্রচারের স্বার্থে -
আপনার যে কোন মন্ত্যব, অভিযোগ, অনুরোধ আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান। ...