পরদিন বাদশাহ শারিয়ার যথাসময়ে অন্দরমহলে বেগম শাহরাজাদ-এর ঘরে এলেন।
বেগম শাহরাজাদ কোনরকম ভুমিকা না করেই কিস্সার
| শরবর্তী অংশ শুরু করতে গিয়ে বললেন— 'জাঁহাপনা, এবার
বাগদাদের এক দর্জি, কুঁজো, ইহুদী হেকিম, খ্রীস্টান দালাল এবং
| -াপিতের কিস্সা বলছি, ধৈর্য ধরে শুনুন।'
চীনদেশের এক ছোট্ট নগরে এক দর্জি বাস করত। লোকটি
খুবই আমুদে, দিলদরিয়াও বটে। দোকান নিয়ে সর্বদা পড়ে থাকে।
কে ঝামেলায় নিজেকে জড়ায় না।
দর্জিটি গ্রাসাচ্ছাদনের জন্য যেটুকু দরকার ঠিক ততটুকুই
ব্রাজগার করে। অবশিষ্ট সময়টুকু আনন্দ-স্ফূর্তির মধ্যে দিয়ে
ঘটিয়ে দেয়।
সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়লে হাতের কাজ ফেলে উঠে
পড়ে। বিবিকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে যায়। দু'জনে মনের সুখে নদীর
কর দিয়ে ঘুরে বেড়ায় আর দেশ-বিদেশের গল্প বলে।
অন্যান্য দিনের মত সেদিনও বিকেলের দিকে দর্জি সস্ত্রীক
বেড়াতে বেরিয়েছিল। নদীর ধার দিয়ে বেড়িয়ে ফেরার সময় পথে
এক কুঁজোর সঙ্গে দেখা হ'ল। লোকটি কুঁজো তো বটেই, বরং
অষ্টাবক্র, মানে হাড়গোড় একেবারে ভাঙাচোরা। একেবারেই
বিচিত্র তার চেহারা।
দর্জি আর তার স্ত্রীকে দেখেই কুঁজোটি হঠাৎ সরবে হাসতে
শুরু করে দিল। অদ্ভুক্ত অঙ্গভঙ্গি করে অকারণে কুঁজোঁকে হাসতে
দেখে দর্লি ও তার স্ত্রী উভয়ের কাছেই ব্যাপারটি কৌতূহলের
উদ্রেক করল!
কুঁজোর কাছে ব্যাপারটি ভাল ঠেকল না। সে দু'পা এগিয়ে
গিয়ে একটু বেশ রাগত স্বরেই বলল—“কি ব্যাপার, তোমরা হঠাৎ
এমন দাঁত বের করে হাসছ যে বড়?"
– হাসি গেলে হাসব না?' কথাটি বলেই আবার হো হো রবে
হাসতে লাগল।
হাসি থামিয়ে এক সময় দর্শিটি বলল—'আমাদের বাড়ি যাবে?
গাএে এক সঙ্গে বসে খানাপিনা করবে, গল্প করবে আর রাত্রিটি
আমাদের বাড়িতেই হাসি-আনন্দের মধ্যে দিয়ে কাটাবে, রাজি?
দর্জির প্রস্তাবে কুঁজো এক কথাতেই রাজি হয়ে গেল। দলি
কুঁজোটিকে সঙ্গে করে দোকানে এল।
রাত্রে তারা তিনজনে এক সঙ্গে খানাপিনা করতে বসল। খেতে
খেতে দর্জি একটু তামাশা করার জন্য এক টুকরো মছলি নিয়ে
কুঁজোর মুখে গুঁড়ে দিল। ছোট্ট একটি মানুষ সে। অতবড় টুকরোটি
কোনরকমে মুখে ধরলেও চিবোতে পারবে কেন? কিন্তু উপরে
ফেলারও উপায় নেই। এদিকে আবার দর্জি কুঁজোটির হাত ধরে
বলতে লাগল: 'ভাইয়া, খুব ভাপ মছলি, ফেলো না। খেয়ে নাও।
নইলে আমি খুব গোসা করব কিন্তু। দুঃখও কম পাব না।'
বহু চেষ্টা চরিত্র করে মছলির টুকরোটি কোনরকমে গিলতে
পারলেও বিপদ এড়াতে পারল না। একটি বেশ শক্ত কাটা তার
গলায় আটকে গেল।
গলায় কাঁটা নিয়ে কুঁজ্যেটি মাটিতে পড়ে কাত্রাতে শুরু করল।
অসহ্য যন্ত্রণায় সারারাত্রি কষ্ট পেল। সকাল হবার কিছু পরেই
জোকটি মারা গেল।
বেগম শহরাজাদ দেখলেন, ভোর হয়ে আসছে। পাশের
বার্গিচার তালে তালে পার্থীদের পাখার ঝটপটানি শুরু হয়ে গেছে।
শাহরাদি তাঁর কিস্সা বন্ধ করলেন।
পঁচিশতম রজনী
মধায়ংক্রির কিছু আগে বাদশাহ শারিয়ার ব্যক্ত-পায়ে অন্দর-
মহলে বেগম শাহরাজাদ-এর ঘরে এলেন।
শাহরালাপ তাঁর কিস্সং শুরু করতে গিয়ে বললেন
'জাঁহাপনা, দর্জির মেহমান সে কুঁজোটি তো গলায় মাছের
কাঁটা ফুটে দুনিয়া ছেড়ে চলে গেল। কিন্তু দর্জি আর তার বৌ সে
ব্যাপার দেখে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল, দর্জি অসহায় দৃষ্টি
মেলে বিবির মুখের দিকে তাকাল।
দর্জির বিবি বল্ল—‘পথের বিপদ ঘরে আনাই কাল হয়েছে।
কি আর করবে, আপদটিকে কাঁধে তোল।'
দর্জি কুঁজোর লাসটিকে কাঁধে তোলার চেষ্টা করল। তার বিবি
বলল—‘ছেড়ে দাও, আমিই যা বিহিত করার করছি। একটি ছেঁড়া
চাদর জড়িয়ে দর্জির বিবি কুঁজোর লাসটিকে কাঁধে তুলে নিল।
এবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা হাঁটতে শুরু করল। দর্জি তাকে
অনুসরণ করতে লাগল। দর্জির বিবি নানারকম সুর করে কাঁদতে
| কাঁদতে পথ পাড়ি দিচ্ছে। দর্জিও থেকে থেকে গলা ছেড়ে কেঁদে
উঠছে। পথে লোকজন কাউকে দেখলে তাদের যৌথ কান্নার স্বর
দ্বিগুণ বেড়ে যাচ্ছে। দর্জির বিধি থেকে থেকে বিলাপ করতে
লাগল। আমার কী সর্বনাশ হয়ে গেল গো! আমার বেটা বুঝি আর
বাঁচবে না গো। আমি কাকে নিয়ে থাকবো গো! অকালে আমার
বেটার বসন্ত হ’ল কেন গো? এ কী কাল বসন্ত হ'ল। সারা গায়ে
গুঁটি, ধগধগে ঘা। আমার বেটা বুঝি আর বাঁচবে না গো!’
পথচারীরা ভাবল, দর্জির লেড়কার বসন্ত রোগ হয়েছে। অবস্থা
খুবই সঙ্গীন। হয় তো হেকিমের কাছে যাচ্ছে। শেষ চেষ্টা করে
“দেখবে যদি বাঁচিয়ে তোলা যায়। ফলে পথচারীরা কিছু জিজ্ঞাসাবাদ
করে তাদের আর বিরক্ত করল না।
দর্জির বিবি ডুকরে কাঁদতে কাঁদতে এক বুড়ো ইহুদী হেকিমের
বাড়ির দরজায় কড়া নাড়ল।
এক ইয়া মোটা ও কুচকুচে কালো মাঝ-বয়সী নফরাণী দরজা
খুলে দিল। দর্জির বৌ তাকে একটি সিল্কি দিয়ে বলল – এটা
তোমার বকশিস। আমার বেটার বহুত বিমার হেকিম সাহেবকে
তাড়াতাড়ি ডেকে দাও
নফরাণীটি সিকিটি কামিকের জেবে ঢুকিয়ে দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে
থপ থপ করে ওর তলায় উঠে গেল।।
দর্জির বিবি দল্লিকে বলল— এই সুযোগ, চন্স লাশটি সিঁড়িতে
রেখে আমরা চম্পট দেই।
যে-কথা সেই কাজ! চাদর-জড়ানো কুঁফ্লোর লাসটিকে সিঁড়িতে
ফেলে রেখে দর্জি আর তার বিধি তিন লাঞ্চে হেকিমের বাড়ি থেকে
বেরিয়ে এল।
বুড়ো হেকিমের কাছে গিয়ে বলল—'এক রোগী এসেছে।
অবস্থ! খুব খারাপ। জলদি চলুন। নিচে, সিঁড়ির কাছে অপেক্ষ!
করছে।
বুড়ো হেকিম ব্যস্ততার জন্য চিরাগ নেওয়ার কথা ভুলে গেল।
পরিচিত সিঁড়ি। কোনরকমে হাতড়ে হাতড়ে বুড়ো হেকিম নিচে
নামতে লাগল। নিস্তেজ চোখের মণি। আবছা অন্ধকারে ঠিক ঠাহর
করতে পারল না। ফলে আচমকা কি যেন একটি বড়সড় বস্তু পায়ে
লাগল। হঠাৎ হোঁচট খেয়ে টাল সামলাতে না পেরে বুড়ো হেকিম
সিঁড়ি থেকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল।
বরাত ভাল যে, কুঁডোর লাসটি সিঁড়ির শেষ ধাপে রাখা ছিল।
ফরে হেকিমকে সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে পড়তে ছু'প না।
হেকিমের পড়ে যাওয়ার শপ ও বিকট আর্তনাদের নফরাণী ও
হেকিমের বিধি চিরাগ বাতি নিয়ে ছুটে এল। তাকে টানাটানি করে
তুলল। গেট ডেমন লাগে নি।
চিরাগ বাতির আলোয় হেকিম ও তার স্ত্রী দেখল সিঁড়ির গায়ে
একটি চাদর-ওজড়ানো কুঁজোমও লোক মরে পড়ে রয়েছে।
হেকিমের তো শিরে বজ্রাঘাত হবার জোগার : কী সর্বনেশে কাওরে
বাকা! লোকটি তবে মরেই গেছে।'
হেকিম ভাবল, রোগীর লোকজনরা থাকে সিঁড়িতে চাদর গায়ে
দিয়ে বসিয়ে রেখে হয়ত ধারে কাছেই কোথাও রয়েছে! আর দুর্বল
শরীর সিঁড়ি থেকে পড়ে যাওয়ার ধকল সইতে না পেরে জ়াল্টা
বেরিয়ে গেছে।
হেকিম নিঃসন্দেহ হ'ল, সে-ই, কুঁজোটির মৃত্যুর কারণ
সম্পর্কে। তাকে দিয়ে চিকিৎসা করাতে এসে তার হাতেই
হতভাগাটিকে জান দিতে হ'ল। সর্বনাশ! লেক জানাজানি হয়ে
গেলে কেলেঙ্কারীর চূড়ান্ত হয়ে যাবে। শূলে চড়ানোও কিছুমাত্র
বিচিত্র নয়।
হেকিমের মাথায় সঙ্গে সঙ্গে একটি ফন্দি এসে গেল। সে আর
তার বিবি চাদর দিয়ে লাসটি ভাল করে মুড়িয়ে নিল। ধরাধরি করে
সিঁড়ি ভেঙে নিয়ে গেল ছাদে। তার বাড়ির লাগোয়া সুলতানের
প্রাসাদ। আর কোন চিন্তা ভাবনা নয়। লাসটিকে তারা ছুঁড়ে দিল
সুলতানের বাড়ির ছাদ লক্ষ্য করে। বরাত মন্দ। লাসটি সুলতানের
বাড়ির ছাদে না পড়ে পড়ল রসুইকরের রসুইখানার গায়ে।
একটু বেশী রাত্রে সুলতানের প্রাসাদের কাজ সারতে
রসুইকরের বেশ দেরী হয়। তার মহলের দিকে যেতে গিয়ে হঠাৎ
দেখে একটি লোক মরে পড়ে রয়েছে। একেবারে বাঁকাচোরা হয়ে
পড়েছে। হয়ত লোকটি খাবার চুরি করে খেতে এসে হঠাৎ মারা
গেছে। কিন্তু যে কারণেই মরুক না কেন, দোষ অবশ্যই তার ঘাড়েই
পড়বে। সবাই ধরেই নেবে লোকটি চুরি করে খাবার খেতে
এসেছিল। ধরা পড়ে বেদম প্রহার সহ্য করতে না পেরে জান
বেরিয়ে গেছে। এখন উপায়? লাসটির কি গতি হবে?
উপায়ান্তর না দেখে রসুইকর লাসটিকে নিয়ে হাটের কাছে এক
দোকানের বন্ধ দরজার সামনে বসিয়ে দিয়ে চম্পট দিল।
রাত্রির তৃতীয় প্রহরে এক খ্রীস্টান গলা পর্যন্ত সরাব ঢুকিয়ে
টলতে টলতে কোনরকমে পথ পাড়ি দিচ্ছে আর জড়ানো গলায়
বলছে—'ব্যস, আর দেরী নেই, যীশু এলেন বলে। তখন দেখব,
চারা কোথায় পালাও। আমাকে নিয়ে রঙ্গ-তামাশা। আমার মাথায়
মদ ঢেলে দিয়ে ইয়ার্কি করার মজা তখন টের পাইয়ে দেবেন।
এতবড় বুকের পাটা তোদের। যীশু এসেই তোদের এক একটি ধরে
কচুকাটা করবেন। দেরী নেই, যীশু এক্ষুণি এসে পড়বেন।'
আঁকা বাঁকা পায়ে আরও কয়েক পা গিয়ে সে এক দোকানের
সামনে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করতে লাগল। লাসটি তখন তার ঠিক
পিছনেই দোকানের বন্ধ দরজার গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে।
হতচ্ছাড়া মাতালটি ভাবল, তার পিছনে কে যেন ঘাপটি মেরে
পঁড়িয়ে রয়েছে। বিপদ মাথার ওপরে অনুমান করে সে ঝট করে
ঘুরেই সজোরে এক ঘুসি বসিয়ে দিল লাসটির মুখে। চেঁচিয়ে
উঠল— হারামি কাহাকার! আমার ওপরে ঝাপিয়ে পড়ার ধান্দায়
ছলি, তাই না? এবার বোঝ কত ধানে কত চাল। মাটিতে পড়ে
থাকা নামটির চুল মুঠোকরে ধরে মাতালটি এবার গঙ্গে
উঠল— 'ওঠ—
ওঠ হারামি কাহাকার! তোকে একেবারে খুনই
করে ফেলব।'
মাতালটির চেঁচামেচিতে হাটের ক’জন দোকানির ঘুম ভেঙে
গেল। ছুটোছুটি করে এসে দেখে, মাতালটি কুঁজো লাসটির চুলের
মুঠি ধরে এলাপাথাড়ি ঘুষি চালিয়ে যাচ্ছে।
দোকানিরা বলল— সাহেব বাবা, এবার লোকটিকে মারা
ঘাড়ান দাও। চুরি করতে এসে শিক্ষা যথেষ্টই পেয়েছে।'
খ্রীস্টান মাতালটি এবার কুঁজোর লাসটির চুলের মুঠি ছেড়ে
দিয়ে বলল–খা হারামি, এবারের মত ছেড়েই দিলাম।'
লাসটি এবার ধপাস করে আছাড় খেয়ে মাটিতে পড়ে গেল।
দোকানিরা লাসটি ধরে ডাকাডাকি ধাক্কাধাক্কি করে নিঃসন্দেহ
হ'ল, হতভাগাটি মরেই গেছে। তারা গলা ছেড়ে চিৎকার করতে
লাগল———কে, কোথায় আছ, এসো। দেখে যাও কী সর্বনেশে কাণ্ড!
= এক খ্রীস্টান এক মুসলমানকে খুন করেছে।'
a
২
চিৎকার শুনে প্রহরায় নিযুক্ত দু'জন লোকও অন্যান্যদের সঙ্গে
ছুটে এল। পাহারাদাররা মাতাল খ্রীস্টানটির কোমরে দড়ি পরিয়ে
কোতোয়াদের বাড়ি নিয়ে গেল। ডাকাডাকি হাঁকাহাঁকি করে তার
ঘুম ভাঙাল। কোতোয়াল ঘটনার বিবরণ শুনে মাতাল খ্রীস্টানের
ফাঁসির হুকুম দিল। কোমরে দড়ি বেঁধে নগরের পথে পথে ঘুরিয়ে
নিয়ে বেড়ানো হবে প্রথমে। তারপর হাজার হাজার লোকের
চোখের সামনে ফাঁসি দেওয়া হবে।
ন
মাতাল খ্রীস্টানটির গলায় যখন ফাঁসির দড়ি পরানো হচ্ছে ঠিক
তখনই সুলতানের রসুইকর ছুটে এসে বল
‘এ-নিরপরাধ
= খ্রীস্টানটিকে কেন মিছে হত্যা করছ। কুঁজো লোকটিকে মেরেছি
হয়তো আমি।'
কোতোয়াল বলল—'বললেই তো হবে না, প্রমাণ কি?'
—'গতকাল রাত্রে সুলতানের রসুইখানার পাশে অন্ধকারে
- দাঁড়িয়েছিল। আমি একটি চ্যালা কাঠ দিয়ে এক ঘা দিতেই এলিয়ে
পড়ল। ব্যস, একেবারে দুনিয়া ছেড়ে চলে গেল। আমি চুপি সাড়ে
লাসটিকে হাটে রেখে চম্পট দেই।'
₂
ऱ
ক
।
=র
র
ড়
*
ই
জল্লাদ বুড়ো হাকিমকে নিয়ে বধ্যভূমিতে দাঁড় করাল।
ফাঁসির দড়ি তার গলায় পরাতে যাবে তখনি ভিড়ের মধ্য থেকে
চিৎকার শোনা গেল--আরে, করছ কী। করছ কী! কাল সন্ধ্যার
কিছু আগে আমি আর আমার বিবি বেড়িয়ে ফেরার পথে দেখলাম,
এক রাস্তার মোড়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে ফিক ফিক করে
কুঁজোটি হাসছে। খুব রাগ হ'ল। লোকটি খুবই রসিক ছিল। আমার
বিবির লোকটির চেহারার অস্বাভাবিকতাটুকু দেখে খুবই মায়া
হ'ল। তাকে বাড়ি নিয়ে এলাম। রাত্রে খেতে বসে মাছের কাঁটা
গলায় বিধে লোকটি হঠাৎ মারা গেল। চাদরে মুড়িয়ে লাসটিকে
ডএ-বুড়ো হেকিমের বাড়ির সিঁড়িতে রেখে দিয়ে চম্পট দিয়েছিলাম।
কাঁটা সমেত মাছের টুকরোটি আমিই জোর করে তার মুখে গুঁজে
না
কোতোয়ালের নির্দেশে জল্লাদ রসুইকরের গলায় দড়ি পরাল।
ঠিক তখনই সে-ইহুদী হেকিম হস্তদন্ত হয়ে ছুটে এল। হাঁপাতে
হাঁপাতে বলল—'এ কী জবরদস্তি কাজ করছেন? লোকটিকে খুন
করলাম আমি আর ফাঁসিতে ঝোলাচ্ছেন এ-নিরীহ রসুইকরটিকে!
একে ছেড়ে আমাকে মৃত্যুদণ্ড দিন।'
অগত্যা কোতোয়াল বুড়ো হেকিম'কে ফাঁসিতে ঝোলানোর
আদেশ দিল।
দিয়েছিলাম। অতএব আমিই তো ওর মৃত্যুর কারণ। বুড়ো হেকিম
ব্যস্ত হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে লাসটির সঙ্গে হোঁচট খেয়ে
পড়ে যায়। অতএব আমাকেই ফাঁসির দড়ি অবশ্যই গলায় পরতে
জল্লাদ দর্জির গলায় ফাঁসির দড়ি পরাবার উদ্যোগ নিল।
ব্যাপারটি এরই মধ্যে সুলতানের কানে পৌঁছে গেছে। কুঁজো
অষ্টাবক্রটি, তাঁর খুবই স্নেহের পাত্র ছিল। সে মদের ঘোরে টলতে
টলতে দর্জির ও তার বিবির সামনে এলে তারা তাকে নিজেদের
বাড়ি নিয়ে এসেছিল। তারপর কিভাবে তার মৃত্যু হয়, সে-
অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে কোতোয়াল, ইহুদি হেকিম,
সুলতানের রসুইকর প্রভৃতি। তারপর দর্জিকে ফাঁসি কাঠে
ঝোলাবার আয়োজন করা হয়।
সুলতান দর্জির ফাঁসি রদ করার জন্য ফরমান জারি করে এক
ঘোড়সওয়ারকে পাঠালেন।
কোতোয়াল ছুটে এলেন সুলতানের কাছে। ঘটনাটি তাঁর কাছে
ব্যক্ত করলেন। সুলতান সব শুনে যারপার নাই বিস্মিত হলেন।
এবার সে-খ্রীস্টানটি দরবারে উপস্থিত হ'ল। যথোচিত
অভিবাদন করে বলল – 'জাঁহাপনা, এর চেয়ে অনেক, অনেক
বেশী বিস্ময়কর কিস্সা আমার জনা আছে। আপনি যদি তা শুনতে
উৎসাহী হন তবে আমি শুরু করতে পারি।'
-
সুলতান অত্যুগ্র আগ্রহান্বিত হয়ে বল্লেন—'আমি আগ্রহী, শুরু
কর তোমার কিস্সা।'
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
জয় গুরু
বিশুদ্ধ প্রচারের স্বার্থে -
আপনার যে কোন মন্ত্যব, অভিযোগ, অনুরোধ আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান। ...